‘উপজেলা হাসপাতাল থেকে ওয়াশ দিলে মা মারা যেত না’
বাড়ির পাশে পড়ে থাকা কলা গাছ নিয়ে বাবার সঙ্গে মায়ের সামান্য কথা কাটাকাটি হয়। তার জের ধরে রাগ করে কীটনাশক পান করেন মা। পরে মাকে দ্রুত আড়াইহাজার উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গেলে সেখানকার চিকিৎসকরা কোনো চিকিৎসা না দিয়ে মাকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে আসতে বলেন। ঢাকা মেডিকেলে আনতে আনতে মা আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। উপজেলা হাসপাতাল থেকে যদি ওয়াশ দিয়ে দিত তাহলে আমার মা মারা যেত না।
ঢাকা মেডিকেলে মায়ের মরদেহের পাশে দাঁড়িয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন নিহত মাসুদার (৪০) মেয়ে সুমাইয়া।
বিজ্ঞাপন
সুমাইয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার মা ও বাবা সুতার কারখানায় কাজ করেন। দুপুরে দু’জন বাসায় আসেন খাবার খাওয়ার জন্য। এসময় বাড়ির পাশে পড়ে থাকা কলা গাছ নিয়ে বাবার সঙ্গে মায়ের সামান্য কথা কাটাকাটি হয়। পরে মা রাগ করে দুপুরে কীটনাশক পান করে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যেতে বলেন। যে হাসপাতালে সামান্য বিষ খাওয়া রোগীদের ওয়াশ দেওয়ার ক্ষমতা নেই সে হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা হবে কীভাবে।
সুমাইয়া আরও বলেন, মাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসার পথে গাড়িতে আমার সঙ্গে কথা বলছিলেন। ঢাকা মেডিকেলে আনতে আনতে মা মারা গেলেন। আমার মা সঠিক সময়ে চিকিৎসার অভাবে মারা গেলেন, এ কথা আমি কাকে বলব। কার কাছে অভিযোগ করব। আমার মা তো হারিয়ে গেছে আমার মাকে তো আর ফিরে পাব না। সঠিক সময়ে যদি তারা চিকিৎসা দিতে পারত আজকে আমরা এতিম হতাম না।
জানা যায়, রোববার (৩১ জুলাই) দুপুরে কীটনাশক খেয়ে মাসুদা অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর তাকে প্রথমে উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জের আড়াই হাজার উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান তিনি আগেই মারা গেছেন।
নিহত মাসুদার স্বামী সুলেমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা দুজনে একসঙ্গে সুতার কাজ করি। দুপুরে বাসায় আসি খাওয়ার জন্য। এসে দেখি বাড়ির পাশের কলা গাছ পড়ে আছে। আমার স্ত্রী মনে করেছে এ কলা গাছ আমি কেটে ফেলেছি। এটা নিয়ে আমাদের মধ্যে সামান্য কথা কাটাকাটি হয়। পরে সে ঘরে থাকা কীটনাশক পান করে অসুস্থ হয়ে পড়লে আমরা প্রথমে তাকে আড়াইহাজার উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে আসি। আনার পর সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যেতে বলে। তখন আমি গাড়ির জন্য এদিক সেদিক ছুটছিলাম। অনেকক্ষণ পর গাড়ি পেলাম। গাড়িতে করে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসার সময় আমার স্ত্রী মারা যায়।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, আড়াইহাজার উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে যদি আমার স্ত্রীকে ওয়াশ দিতে পারত তাহলে সে মারা যেত না। আমার স্ত্রী তো ভুল বুঝে আমাকে একা রেখে চলে গেল।
সুলেমান জানান, তার দুই মেয়ে এক ছেলে। তাদের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার থানার কুলোন্দি গ্রামে।
নিহতের মেয়ের জামাই জাকির হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, মূলত চিকিৎসার অভাবেই তিনি মারা গেছেন। আড়াইহাজার উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র যদি ওয়াশ করতে পারত তাহলে আমার শাশুড়ি বেঁচে যেতেন।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের (ইনচার্জ) ঢাকা পোস্টকে বলেন, মরদেহটি হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মর্গে রাখা হয়েছে।
এসএএ/আইএসএইচ