দুদকের মামলা অনুমোদন
সেলিম খানের ৩৫ কোটি টাকার সম্পদে ঘাপলা
সাড়ে ৩৪ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং প্রায় ৬৭ লাখ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে চাঁদপুর সদর উপজেলার ১০ নম্বর লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সেলিম খানের বিরুদ্ধে মামলা অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
রোববার (৩১ জুলাই) দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে ওই মামলা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই দুদকের সহকারী পরিচালক ও অনুসন্ধান কর্মকর্তা আতাউর রহমান প্রধান মামলাটি দায়ের করবেন। দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বিজ্ঞাপন
দুদক সচিব বলেন, সেলিম খানের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় কমিশনের অনুমোদনক্রমে তার বরাবর সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ জারি করা হয়। এরপর সম্পদ বিবরণী দাখিল করলে তার দাখিল করা সম্পদ বিবরণী যাচাই শেষে ৬৬ লাখ ৯৯ হাজার ৪৭৭ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এছাড়া দুদকের অনুসন্ধানে ৩৪ কোটি ৫৩ লাখ ৮১ হাজার ১১৯ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৬ (২) ও ২৭ (১) ধারায় মামলা রুজুর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এর আগে গত ২৬ এপ্রিল দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক কে এম ইমরুল কায়েশ সেলিম খানকে ৬০ দিনের জন্য বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন। পরে পুনরায় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সময় বর্ধিত করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে অবৈধ সম্পদের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ায় ২০২০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর সেলিম খান ও তার স্ত্রী শাহানারা বেগমের সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ দিয়েছিল দুদক। প্রাথমিক অনুসন্ধানে সেলিম খানের আয়কর বিবরণীসহ বিভিন্ন নথিপত্র যাচাই শেষে তার পারিবারিক ব্যয়ের হিসাব পাওয়া যায় ৩৪ লাখ ৮৮ হাজার ৮০০ টাকা। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে প্রাপ্ত বেতন-ভাতা ও ঋণসহ তার মোট আয় পাওয়া যায় ৬১ লাখ ৭২ হাজার টাকা। দুদকের অনুসন্ধানে অবৈধ সম্পদের প্রমাণ পাওয়ায় সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ দেওয়া হয়।
এছাড়া চলতি বছরের ৬ এপ্রিল দুর্নীতির মাধ্যমে অগাধ সম্পত্তি অর্জন বিষয়ে চাঁদপুরের লক্ষ্মীপুরের ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ যাচাইয়ে দুদকের সহকারী পরিচালক রাফী মো. নাজমুস সা’দাৎ এর নেতৃত্বে এনফোর্সমেন্ট টিম অভিযান চালায়। অভিযানকালে দুদকের টিম চাঁদপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর মৌজায় চাঁদপুর-হাইমচর সড়কের পাশে মেঘনা নদী থেকে ৮০০ মিটার দূরত্বের মধ্যে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রস্তাবিত জমি সরেজমিন পরিদর্শন করে।
এরপর ২১ এপ্রিল এক সংবাদ সম্মেলনে দুদক সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে এই মাসের প্রথমে চাঁদপুরে অভিযান চালায় দুদক এনফোর্সমেন্ট। চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি অধিগ্রহণে সরকার নির্ধারিত মৌজা মূল্যের চেয়ে প্রায় ২০ গুণ বেশি মূল্য দেখিয়ে ১৩৯টি উচ্চমূল্যের দলিল কারসাজির মাধ্যমে সরকারের প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করার পরিকল্পনা করেছিলেন সেলিম খান। কিন্তু বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ায় সেটা আর হয়নি। যদি তিনি সফল হতেন তাহলে সরকারের অতিরিক্ত ৩-৪ শ’ কোটি টাকা লোকসান হতো। কিন্তু সেটা হয়নি। এছাড়া মেঘনা-পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করেন তিনি। এনফোর্সমেন্ট টিম এ বিষয়ে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করেছে। পরে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সম্প্রতি প্রস্তাবিত চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চাবিপ্রবি) জমি অধিগ্রহণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে শিক্ষামন্ত্রীর পরিবারের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর মৌজায় জমি কেনাবেচা করেন শিক্ষামন্ত্রীর পরিবারের সদস্য, আত্মীয় ও তার ঘনিষ্ঠরা। তার বড় ভাই ডা. জাওয়াদুর রহিম ওয়াদুদ ৬ দলিলে ৯৯ শতাংশ জমি কেনেন। তার মামাতো ভাই জাহিদুল ইসলাম এক একর ৬১ শতাংশ জমি কেনেন। লক্ষ্মীপুর ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খানও সেখানে কয়েক একর জমি কেনেন।
আরএম/এসএম