উচ্ছেদের মাস না পেরোতেই ফের দখল
নীলক্ষেতে অবৈধ দোকান উচ্ছেদের এক মাস পর একই জায়গায় নতুন করে দোকান নির্মাণ করা হয়েছে। সেসব দোকানে শুরু হয়েছে বেচাকেনা। নকশা-বহির্ভূতভাবে নির্মাণ করা এবং সিটি করপোরেশনের অনুমতি না নেওয়ায় গত ১৬ জুন এসব অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।
উচ্ছেদ অভিযানে নেতৃত্ব দেন ডিএসসিসির আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা উপ-সচিব মেরীনা নাজনীন এবং সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. মুনিরুজ্জামান।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন : এসএসসির পর কানাডা যাওয়ার কথা ছিল হিশামের
অভিযানের সময় সিটি কর্পোরেশন রোডসাইড মার্কেটের নকশা-বহির্ভূত অনুমোদনহীন দোকান এবং ভেতরের বাকুশাহ মার্কেটের প্রবেশ পথের সামনের দোকানগুলো ভেঙে দেওয়া হয়। এর মধ্যে ১০ নম্বর বইয়ের দোকানের পাশে মানুষের চলাচলের রাস্তার দুই পাশে নির্মিত দোকান এবং ২৫ নম্বর দোকানের পাশে মোবারক তেহারি হাউস ও রয়েল তেহারি হাউস সম্পূর্ণ ভেঙে দেওয়া হয়। এছাড়া ৩৭ নম্বর দোকানের পাশে প্রবেশপথের অস্থায়ী দোকানগুলোও উচ্ছেদ করা হয়।
উচ্ছেদ করা হলেও এসব দোকানের দখল ছাড়েননি কেউ। অভিযানের কয়েকদিন পরই নতুন করে অবকাঠামো নির্মাণের তোড়জোড় শুরু হয়। সম্প্রতি নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পর রঙ করে আবারও পুরোদমে শুরু হয়েছে দোকানের কার্যক্রম।
আরও পড়ুন : একসঙ্গে মৃত্যু একসঙ্গে জানাজা
গত বুধবার (২৭ জুলাই) দুপুরে সরেজমিনে নীলক্ষেত ঘুরে দেখা যায়, উচ্ছেদ অভিযানে ভেঙে দেওয়া দুটি বইয়ের দোকানের জায়গায় ছোট পাঁচটি বইয়ের দোকান এবং একটি বড় দোকান করা হয়েছে। বিরিয়ানির দোকান দুটিও করা হয়েছে আগের মতোই। মার্কেটের শেষের দিকে যেসব স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছিল সেগুলোও পুনরায় সংস্কার করা হয়েছে।
দোকান মালিকরা যা বলছেন
উচ্ছেদ করার পরও কীভাবে বা কাদের অনুমতিতে পুনরায় দোকান বসানো হয়েছে তা জানতে চাইলে কথা বলতে চাইলে রাজি হননি কোনো দোকানদার। নিজেদের কর্মচারী দাবি করে দোকান মালিকদের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তারা।
উচ্ছেদের পর নতুন করে দোকান স্থাপন করেছেন রয়েল তেহারি হাউজের মালিক মহর আলী। তিনি দাবি করেন সিটি কর্পোরেশন হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছে।
তিনি বলেন, এটা সরকারি মার্কেট। হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা আছে। তারপরও তারা এটি ভেঙেছে। এখানে বহুতল ভবন নির্মাণের কথা রয়েছে। এই জায়গা যদি মার্কেটের কোনো উন্নয়নের কাজে লাগে তবে আমি ছেড়ে দেব। এখন তো মার্কেটের কোনো কাজে লাগছে না। তাই দোকান করেছি।
সরকারিভাবে এসব জায়গার রাজস্ব আদায় করা হলে তা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত বলে জানান আরেক দোকান মালিক শওকত হোসেন নান্নু। তিনি বলেন, জায়গার ওপর ভিত্তি করে সরকার যদি সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমে রাজস্ব নেয় তাহলে আমরা দিতে প্রস্তুত আছি। আমরা ইতোমধ্যে সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে এ ধরনের একটি আলোচনাও করেছি।
পুনরায় দোকান বসানোর সুযোগ নেই : সম্পত্তি কর্মকর্তা
উচ্ছেদ হওয়ার পর ফের দোকান বসানোর সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. মুনিরুজ্জামান। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, আমি নিজেও সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখেছি, সেখানে পুনরায় দোকান নির্মাণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা মেয়রের কাছে আবারও নোট পাঠাব।
নীলক্ষেতে সড়কের উভয় পাশে ৮৪টি বৈধ দোকান রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশনের অনুমতি ছাড়া দোকান বসানোর সুযোগ নেই। যেসব দোকান উচ্ছেদ করা হয়েছে সেগুলো স্থাপন করার তো কোনো সুযোগই নেই।
সরকারকে রাজস্ব দেওয়া ছাড়া বৈধতার সুযোগ নেই : প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা
সরকারকে রাজস্ব দেওয়া ছাড়া এবং সিটি কর্পোরেশনের বরাদ্দ ছাড়া দোকান বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বৈধতার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা উপ-সচিব মো. আরিফুল হক।
ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশনের রাজস্ব বিভাগ থেকে যেসব দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয় সেগুলোই কেবল বৈধ দোকান হিসেবে গণ্য হয়। তাই দোকান বরাদ্দ নেওয়ার আগে অবশ্যই সিটি কর্পোরেশনের রাজস্ব বিভাগের অনুমোদন নিতে হবে এবং নিয়মিত রাজস্ব পরিশোধ করতে হবে। এর বাইরে বৈধতার সুযোগ নেই।
আরএইচটি/এসকেডি/জেএস