রাজধানীর ওয়ারীতে অন্তর ইসলাম (২২) নামে তৃতীয় লিঙ্গের একজন গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। পুলিশ ও পারিবারের প্রাথমিক ধারণা, হতাশার কারণে আত্মহত্যা করেছেন অন্তর।

অন্তরের আত্মহত্যার ঘটনায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপির) ওয়ারী থানায় একটি অপমৃত্যুর (ইউডি) মামলা হয়েছে। মামলাটি তদন্ত করছেন ওয়ারী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মফিজ উদ্দিন।

অন্তরের পরিবার সূত্রে জানা যায়, তার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ী থানায়। দুই ভাই ও তিন বোনের মধ্যে অন্তর ছিলেন সবার ছোট। অন্তরের বাবা মৃত আর মা গ্রামের বাড়িতে থাকেন। অন্তর গ্রামের বাড়ি থেকে বছরখানেক আগে হরমোনজনিত সমস্যার চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আসে অন্তর। রাজধানীর ওয়ারীর গোপীবাগ এলাকায় একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন তিনি। ভাড়া বাসায় থেকে অন্তর নিজের চিকিৎসাও করাতেন ও দর্জির কাজ করতেন। ঢাকায় অন্তরের চিকিৎসার দেখভাল করতেন তার মামা আনোয়ার হোসেন। তিনি পরিবার নিয়ে দক্ষিণখানে বসবাস করেন।

অন্তরের মৃত্যু নিয়ে শুক্রবার (২৯ জুলাই) বিকেলে আনোয়ার হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, অন্তরের শরীরে স্ত্রী হরমোনের সংখ্যা ছিল অনেক বেশি। ফলে সে শারীরিকভাবে ছেলে হলেও আচরণ ছিল মেয়েদের মতো। অন্তর সুস্থ হতে চেয়েছিল। অনেক চিকিৎসাও তাকে করানো হয়। সর্বশেষ চিকিৎসা করাতে সে ঢাকা আসে। আমি তাকে একজন বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাই।

ওই ডাক্তার আমাদের বলেন, অন্তরের দেহে স্ত্রী হরমোনের পরিমাণ অনেক বেশি। এর চিকিৎসা দেশে সম্ভব নয়। সঠিক চিকিৎসা করাতে হলে ভারতের চেন্নাইয়ে যেতে হবে।

আরও পড়ুন: ওয়ারীতে তৃতীয় লিঙ্গের একজনের আত্মহত্যা

অন্তরের মামা বলেন, ডাক্তার আমাদের বলেছে চেন্নাইয়ে অন্তরের হরমোনের চিকিৎসা অনেক ব্যয়বহুল। আমরা গরিব মানুষ, এত টাকা কোথায় পাব। তাই আর অন্তরকে নিয়ে চেন্নাই যাওয়া হয়নি। হরমোনজনিত সমস্যার কারণে অন্তর অনেক আগে থেকেই হতাশায় ভুগছিল। দেশে আর চিকিৎসা হবে না শুনে আরও হতাশাগ্রস্ত হয়ে যায় সে। এসব কারণে হতাশা থেকে অন্তর আত্মহত্যা করেছে বলে আমাদের ধারণা। এছাড়া তার মৃত্যুর অন্য কোনো কারণ থাকার কথা না। আমাদের কোনো সন্দেহও নেই।

অন্তরের পরিচিত তৃতীয় লিঙ্গের নাদিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, অন্তরের মরদেহ তার গ্রামের বাড়িতে নেওয়া হয়েছে। তার পরিবারের আবেদনের ভিত্তিতে পুলিশ ময়নাতদন্ত ছাড়া মরদেহ হস্তান্তর করেছে। আমরা যতটুকু জানি অন্তরের শরীরে স্ত্রী হরমোনের মাত্রা বেশি থাকায় তার পরিবারের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। সে ওয়ারীর গোপীবাগের বাসাটিতে একা থাকত। অন্তর হতাশায়ও ভুগছিল।

অন্তরের মৃত্যুর অপমৃত্যু মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মফিজ উদ্দিন বলেন, হতাশা থেকেই অন্তর আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়ে থাকতে পারে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের প্রাথমিক ধারণা তৃতীয় লিঙ্গের অন্তর হতাশাজনিত কারণে আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন। তার পরিবারের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, তারা শরীরে স্ত্রী হরমোনের মাত্রা বেশি থাকায় চিকিৎসা চলছিল। অন্তর চিকিৎসার মাধ্যমে স্বাভাবিক হতে চেয়েছিল। কিন্তু দেশে চিকিৎসা সম্ভব না হওয়ায় সে হতাশা থেকে হয়ত আত্মহত্যা করেছে। অন্তর যে বাসাটিতে ভাড়া থাকত সেখানে গিয়েও তদন্ত করেছি। বাসা মালিকের সঙ্গেও কথা বলেছি। আমরা সন্দেহজনক তেমন কিছু পাইনি। প্রাথমিকভাবে ধারণা অন্তর হতাশাগ্রস্ত হয়ে আত্মহত্যা করেছে।

তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার অন্তরের পরিবারের লিখিত আবেদনের ভিত্তিতে তার মরদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়া হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের হয়েছে। আমরা মামলাটি তদন্ত করছি। তদন্তে সন্দেহজনক কিছু পেলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) দুপুরে গোপীবাগ রেলগেট এলাকার একটি বাসায় অন্তর ইসলাম (২২) গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। তার বাড়ি নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ী থানায়।

এমএসি/এসএসএইচ