ঢাকায় আসছেন না হিনা রব্বানি খার
শেষ সময়ে ঢাকা সফর বাতিল করেছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিনা রব্বানি খার। আটটি মুসলিম রাষ্ট্রের সংগঠন ডি-এইট (D-8) পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে যোগ দিতে মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) তার ঢাকায় আসার কথা ছিল।
কূটনৈতিক একটি সূত্র জানায়, ডি-এইট পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে অংশ নিতে ইসলামাবাদ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিনা রব্বানি খারকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তার সফর বাতিল করেছে তারা। শুধু তাই নয়, প্রতিনিধি হিসেবে দেশটির পররাষ্ট্রসচিবকেও ঢাকায় পাঠাচ্ছে না ইসলামাবাদ।
বিজ্ঞাপন
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকায় পাকিস্তান হাইকমিশনের এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কেন শেষ মুহূর্তে সফর বাতিল করা হলো? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ডি-এইট মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে আংশিকভাবে ভার্চুয়ালি যোগ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। তাই আমাদের প্রতিনিধি দল ভার্চুয়ালি যোগ দেবে।
তবে কি পাকিস্তানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ভার্চুয়ালি সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রতিমন্ত্রী বা সচিব কে যোগ দেবেন এটা এখন নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
ইসলামাবাদ প্রতিমন্ত্রী হিনাকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত বাতিল করলেও ফেডারেশন অব পাকিস্তান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফপিসিসিআই) একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল এরইমধ্যে ঢাকায় অবস্থান করছে। তারা আজ ডি-এইট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডি-এইট সিসিআই) ‘বিজনেস ফোরাম অ্যান্ড এক্সপো-২০২২’-এ অংশ নিয়েছে।
সম্মেলন যোগ দিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন পাকিস্তানের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারিকে ঢাকা সফরের জন্য বিশেষ আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। আমন্ত্রণ পাওয়ার পর ইসলামাবাদ পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বদলে প্রতিমন্ত্রী হিনাকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। সম্মেলনে হিনার ইসলামাবাদের হয়ে ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেওয়ার কথা ছিল।
শেষ মুহূর্তে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর ঢাকা সফর বাতিলের কারণ স্পষ্ট না হলেও কূটনৈতিক চ্যানেলগুলো বলছে, দিন পাঁচেক আগে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার সঙ্গে পাকিস্তানের পতাকা জুড়ে দিয়ে ঢাকার পাকিস্তান হাইকমিশন ফেসবুকে যে ছবি প্রকাশ করেছিল, সে বিষয়ে ঢাকার প্রতিক্রিয়ায় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয় তাদের। যেটা হয়তো ভালোভাবে নিতে পারেনি ইসলামাবাদ।
এর বাইরে আরও কিছু বিষয় এখানে কাজ করতে পারে। যেমন, গত বছরের ডিসেম্বরে পাকিস্তানে ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) মন্ত্রী পর্যায়ের জরুরি বৈঠকে অংশ নিতে যাওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমের। কিন্তু শেষ সময়ে তিনি সফরটি বাতিল করেন। তার বদলে সেখানে পাঠানো হয় পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনকে। এছাড়া চলতি বছর মার্চের মাঝামাঝি পাকিস্তানের ইসলামাবাদে দুই দিনব্যাপী ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের ৪৮তম অধিবেশনে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তিনি দেশটি সফরে যাননি। সেখানেও পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনকে পাঠায় ঢাকা।
২০১২ সালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে ঢাকা সফরে আসেন হিনা রব্বানি। সে সময় ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত ডি-এইট শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানাতে এসেছিলেন তিনি। এরপর প্রায় ১০ বছর পাকিস্তানের কোনো মন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে আসেননি।
এদিকে, ডি-এইট পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে আসছেন না ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসাইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ানও। শেষ মুহূর্তে এসে সফর বাতিল করেছেন তিনি।
বাংলাদেশ ছাড়া ডি-এইট (D-8) এর সদস্য রাষ্ট্রগুলো হলো- পাকিস্তান, তুরস্ক, মিশর, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, মালয়েশিয়া ও নাইজেরিয়া।
বুধবার (২৭ জুলাই) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন উদ্বোধন করবেন।
এনআই/জেডএস