নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর ধারাবাহিক সংলাপ চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজ চারটি দলের সঙ্গে ইসির সংলাপ হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু আজ একটি দল আসবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটিকে। ইসির সহকারী জনসংযোগ পরিচালক আশাদুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ গত ১৭ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে, যা চলবে ৩১ জুলাই পর্যন্ত।

ইসির আজকের সংলাপের তালিকায় দেখা গেছে, সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত জমিয়েতে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত বিকল্পধারা বাংলাদেশ, দুপুর আড়াইটা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এবং বিকেল ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টির সঙ্গে সংলাপ হওয়ার কথা রয়েছে। এর মধ্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ইসির সংলাপে অংশগ্রহণ করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে।

ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, ১৭ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। প্রায় প্রতিদিনই চারটি করে দলের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। তবে বিএনপির সঙ্গে যেদিন বসবে সেদিন তিনটি দল এবং আওয়ামী লীগের সঙ্গে যেদিন বসবে সেদিন দু’টি দলের সঙ্গে সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিটি দল ১০ জন করে সদস্য নিয়ে বৈঠকে অংশ নিতে পারবে।

এদিকে অনুষ্ঠেয় সংলাপে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি-জাপা ও বিএনপির জন্য দুই ঘণ্টা করে সময় বরাদ্দ রেখেছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে বিএনপি ইসির সংলাপে অংশ নেয়নি। বিএনপি ইসির সংলাপে অংশ না নিলেও আউয়াল কমিশন তাদের জন্য অপেক্ষা করবে বলে জানিয়েছেন সিইসি। বাকি ৩৬টি নিবন্ধিত দলের জন্য রাখা হয়েছে ১ ঘণ্টা করে সময়।

আরও পড়ুন: ‘ভোটের ফল পাল্টানো’ শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ইসির চিঠি

কোন দলের সঙ্গে কবে সংলাপ

প্রথমদিন অর্থাৎ ১৭ জুলাই সংলাপে আমন্ত্রণ পেয়েছিল জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ, বাংলাদেশ কংগ্রেস ও বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল)। এই চারটি দলের মধ্যে বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল) বাদে বাকি তিনটি দল উপস্থিত ছিল।

সোমবার (১৮ জুলাই) বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তি জোট, খেলাফত মজলিস ও বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাথে সংলাপ করেছে ইসি।

মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ও বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এমএল) এর সঙ্গে সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে।

বুধবার (২০ জুলাই) সময় পেয়েছে গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।

বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) পেয়েছে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ ও গণফ্রন্ট।

রোববার (২৪ জুলাই) সময় পেয়েছে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) ও ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ।

সোমবার (২৫ জুলাই) তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি- এলডিপি।

আজ মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) জমিয়েতে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টি অংশ নেওয়ার জন্য সময় পেয়েছে।

২৭ জুলাই সময় পেয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি, জাকের পার্টি ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ।

২৮ জুলাই রয়েছে গণফোরাম, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। সবশেষ ৩১ জুলাই তালিকায় আছে জাতীয় পার্টি-জাপা ও আওয়ামী লীগ।

২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রায় দেড় বছর আগে আগস্টে দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের বসেছিল তৎকালীন কেএম নূরুল হুদা কমিশন। এবার একই পথ ধরে সংলাপ শুরু করছে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন।

সে সময় ২০১৭ সালের ২৪ আগস্ট থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে ইসি। এক্ষেত্রে বেশির ভাগ দিন সকাল-বিকেল দুটি করে দলের সঙ্গে বৈঠক করা হয়। তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সঙ্গে যে দু’দিন বসেছিল, সেদিন আর কোনো দলের সঙ্গে সংলাপ করেনি নির্বাচন কমিশন।

ইসির সঙ্গে সেসময় ৩৯টি দলই সংলাপে অংশ নেয়। এদের মধ্যে বেশিরভাগ দল সেনা মোতায়েনের পক্ষে এবং বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিপক্ষে ও ইলেকট্রনিংক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ভোটগ্রহণ না করার সুপারিশ করে।

সংলাপের মতামত পর্যালোচনা করে দুটি অংশে ভাগ করে একটি অংশকে নিজেদের বাস্তবায়ন যোগ্য মনে করে ইসি, যেটি তাদের কাছেই রাখে। অন্য অংশটি সরকারের এখতিয়ারভুক্ত হওয়ায় ২০১৮ সালের ১৬ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মন্ত্রীপরিষদ সচিবের দফতরসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হয়।

এসআর/এসএসএইচ