জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শনিবার (২৩ জুলাই) এক শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেন, সংসদ পরিচালনায় মরহুম ফজলে রাব্বী মিয়ার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা এবং সংসদীয় গণতন্ত্রের চর্চা ও বিকাশে তার অবদান জাতি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।

মরহুম ফজলে রাব্বী মিয়ার রুহের মাগফিরাত কামনা করেন ও তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান তিনি।

পৃথক শোকবার্তায় শেখ হাসিনা বলেন, ছাত্রজীবন থেকেই ফজলে রাব্বী মিয়া আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন এবং ‘৬২-এর শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলনে জড়িত ছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ১১নং সেক্টরে যুদ্ধ করেছিলেন। সংসদীয় গণতন্ত্রে অসামান্য ভূমিকার জন্য তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানান প্রধানমন্ত্রী। 

শুক্রবার (২২ জুলাই) দিবাগত রাত ২টার দিকে (নিউইয়র্ক সময় বিকেল ৪টা) যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘ নয় মাস ওই হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি।

অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র মুহাম্মদ সাইফুর রহমানের পাঠানো শোকবার্তায় প্রধান বিচারপতি বলেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করণে অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়ার অসামান্য অবদান রয়েছে। তিনি ছিলেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি। জাতি চিরকাল শ্রদ্ধাভরে তাকে স্মরণ রাখবে। 

তার সঙ্গে দীর্ঘদিনের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা স্মরণ করেন প্রধান বিচারপতি। তিনি মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।

ফজলে রাব্বী মিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের। শনিবার পৃথক পৃথক বিবৃতিতে শোক জানান তারা।

শোক বার্তায় জাতীয় পার্টির এই দুই নেতা বলেন, গণমানুষের ভালোবাসায় বারবার সিক্ত হয়েছেন ফজলে রাব্বী মিয়া। মহান মুক্তিযুদ্ধে ফজলে রাব্বী মিয়া’র অবদান অক্ষয় হয়ে থাকবে।

ফজলে রাব্বীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ড. এ কে আব্দুল মোমেনও। শোক বার্তায় তিনি বলেন, অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া একজন দেশপ্রেমিক ও নিবেদিতপ্রাণ রাজনীতিবিদ হিসেবে জনগণের কল্যাণে আজীবন কাজ করে গেছেন। অত্যন্ত দক্ষ ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সংসদ সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের সংসদীয় গণতন্ত্র চর্চায় তিনি যে অবদান রেখে গেছেন, জাতি তা চিরদিন স্মরণ করবে।  

শোক জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদও। তিনি বলেন, ফজলে রাব্বী মিয়া একজন আদর্শবান রাজনীতিক এবং অভিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ান ছিলেন। তিনি আজীবন গণমানুষের অধিকার আদায়ে রাজনীতি করেছেন। তিনি দক্ষতা ও নিষ্ঠার সাথে জাতীয় সংসদে ডেপুটি স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের একজন অগ্রসৈনিক ছিলেন। 

তিনি আরও বলেন, ফজলে রাব্বী মিয়ার মৃত্যু দেশের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। তার মৃত্যুতে জাতীয় সংসদ হারাল এক নিষ্ঠাবান অভিভাবক আর জাতি হারাল একজন নিবেদিত প্রাণ অভিজ্ঞ রাজনীতিককে। মুক্তিযুদ্ধসহ দেশের রাজনীতিতে এবং সংসদীয় গণতন্ত্রের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ  অবদান রাখার কারণে তিনি দেশবাসীর কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। 

ফজলে রাব্বী মিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। মরহুমের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করে শোকাহত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন জসিম উদ্দিন। 

ফজলে রাব্বী মিয়ার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। শোকবাণীতে উপাচার্য বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের একজন অন্যতম সংগঠক ফজলে রাব্বী মিয়া ছিলেন বিদগ্ধ পার্লামেন্টারিয়ান ও বয়োজ্যেষ্ঠ খ্যাতিমান রাজনীতিবিদ। তিনি গাইবান্ধা-৫ আসন থেকে বহুবার বিপুল জনসমর্থনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বাংলাদেশ সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ জাতীয় সংসদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠা ও দক্ষতার সাথে কাজ করেছেন।

তিনি আরও বলেন, অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন বিজ্ঞ এই রাজনীতিবিদ ধর্মীয় মূল্যবোধ প্রতিপালনেও বিশেষ যত্নশীল ছিলেন। চলনে-বলনে তিনি সবসময়ই সংসদীয় রীতিনীতি ও মূল্যবোধ গভীরভাবে মেনে চলতেন। তিনি ছিলেন পরিশীলিত ও রসবোধসম্পন্ন একজন প্রজ্ঞাবান মানুষ। অত্যন্ত সৎ, বিনয়ী ও সজ্জন এই বিজ্ঞ রাজনীতিবিদের মৃত্যুতে দেশ একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিক এবং নীতিবান রাজনীতিবিদকে হারাল।   

এইউএ/এমএইচডি/এনআই/ওএফ/এনএফ