স্বর্ণ ডাকাতিতে জড়িত পুলিশ কর্মকর্তার দায় নেবে না বাহিনী : হারুন
রাজধানীর দারুসসালাম থানা এলাকা থেকে স্বর্ণ ডাকাতির ঘটনায় জড়িত ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
ওই ঘটনায় প্রাথমিকভাবে রূপনগর থানার এএসআই জাহিদুলের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে ডিবি পুলিশ বলছে, আইন সবার জন্য সমান। বাংলাদেশ পুলিশে দুই লাখের বেশি সদস্য। পুলিশ সদস্যের ব্যক্তির দায় বাহিনী নেবে না। জড়িত পুলিশ সদস্যদের অপরাধ অনুযায়ী তারা শাস্তি পাবেন।
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) হারুন-অর-রশিদ।
আরও দেখুন >> ডিএমপির ডিবি প্রধান হলেন হারুন অর রশিদ
তিনি বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগের মিরপুর জোনাল টিম বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে দারুসসালাম থানা এলাকায় স্বর্ণ ডাকাতির ঘটনায় জড়িত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
বুধবার (২০ জুলাই) ঢাকার সদরঘাট ও মেরাদিয়ায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন- মো. সোহেল আহম্মেদ পল্লব (৪৮), পুলিশের সোর্স পলাশ শেখ (৩৪), মো. মাসুদ রানা (৪৬) ও রবিন হালদার পরেশ (৫০)। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতির ২০ ভরি স্বর্ণ ও বিক্রি করা পাঁচ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।
আরও দেখুন >> পুলিশ কর্মকর্তা লাবণীর সাবেক দেহরক্ষী ছিলেন কনস্টেবল মাহমুদুল
ঘটনা সম্পর্কে ডিবি পুলিশ জানায়, ভুক্তভোগী টিটু প্রধানীয়া রাজধানীর তাঁতি বাজারের ধানসিঁড়ি চেইন অ্যান্ড বল হাউজ নামক স্বর্ণের দোকানের একজন কর্মচারী। তিনি স্বর্ণের দোকানে তৈরি করা গহনা দেশের বিভিন্ন জুয়েলারি দোকানে ডেলিভারি দিয়ে থাকেন।
গত ১৭ জুলাই সকাল সাড়ে ৬টার দিকে তাঁতি বাজার ধানসিঁড়ি চেইন অ্যান্ড বল হাউজ নামক স্বর্ণের দোকান থেকে তৈরি করা বিভিন্ন গহনা নিয়ে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর ও সখিপুরের বিভিন্ন জুয়েলারি দোকানে পৌঁছে দেওয়ার জন্য মোটরসাইকেলে রওনা হন। গাবতলী বাস টার্মিনালে পৌঁছে তিনি টাঙ্গাইলের বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এ সময় অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি ভিকটিমের কাছে এসে নিজেকে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে ভিকটিমের নাম ঠিকানা ও পেশা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন।
তখন টিটু নাম-ঠিকানা বলার পরও ভুক্তভোগীর ব্যাগের মধ্যে কী আছে জানতে চায়। অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি নিজেকে ডিবি পুলিশ পরিচয় দেওয়ার কারণে ভিকটিম আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে জানায়, ব্যাগের মধ্যে ৩৮ ভরি ১৪ আনা স্বর্ণের তৈরি বল চেইন, চেইন ঝুমকা, বল জুমকা, লকেট, আংটি ও রিস্টলেট আছে। বিশেষ কায়দায় মোড়ানো ২টি প্যাকেটে করে একটি স্কুল ব্যাগে করে তিনি স্বর্ণালঙ্কারগুলো নিয়ে যাচ্ছিলেন।
আরও দেখুন >> ব্যবসায়ীর ৪০ ভরি স্বর্ণ ছিনতাই, পুলিশ কর্মকর্তা বরখাস্ত
কিছুক্ষণ পর আরও অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জন লোক এসে যোগ দেয়। তারা ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে জোরপূর্বক ভিকটিমের কাছে থাকা স্বর্ণের ব্যাগ, স্বর্ণের ভাউচার, দোকানের ট্রেড লাইসেন্স, টিন সার্টিফিকেট ও তার ব্যবহৃত স্মার্টফোন ও ৮ হাজার ৮০০ টাকা ছিনিয়ে নেয়।
ভুক্তভোগী টিটুকে থানায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে তাদের ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেলের (ঢাকা মেট্রো-ল-৫৬-৬৪৩৮) মাঝখানে বসিয়ে গাবতলী বেড়িবাঁধ এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে ভিকটিমকে কিছুক্ষণ আটকে রাখার পর একটি সিএনজিতে উঠিয়ে বিজয় সরণি মোড়ে ট্রাফিক সিগনালে সিএনজি থামিয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা দ্রুত সিএনজি থেকে নেমে পালিয়ে যায়।
ডিবি প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার হারুন-অর-রশিদ বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেপ্তাররা সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সদস্য। আসামিরা ভুক্তভোগী টিটুর পথরোধ করে স্বর্ণালঙ্কার ছিনিয়ে নেওয়ার কথা স্বীকার করেছে। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে দারুসসালাম থানায় একটি মামলা হয়েছে। আমরা আরও বেশ কয়েকজনের নাম জেনেছি। তাদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে। লুণ্ঠন করা বাকি স্বর্ণ উদ্ধারেও চেষ্টা চলছে।
আরও দেখুন >> জাল টাকা ব্যবসার মামলায় পুলিশ কর্মকর্তা কারাগারে
ডাকাতির ওই ঘটনায় রূপনগর থানার এএসআই পুলিশ সদস্যের সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা তদন্ত করছি। তদন্ত করে বলা যাবে। তবে পুলিশ সদস্যের ব্যক্তিগত অপরাধের দায় পুলিশ নেবে না। আগেও নেয়নি, ভবিষ্যতের নেবে না।
তিনি আরও বলেন, মামলায় আসামি রূপনগর থানার এএসআই জাহিদুল জেলে আছেন। ডাকাতির ঘটনায় এএসআই জাহিদুলের সংশ্লিষ্টতা ছিল বলেই তো তিনি জেলে আছেন। পলাশ শেখ ছিল পুলিশের সোর্স। তাকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করব, পুলিশের আর কেউ জড়িত ছিলেন কিনা।
জেইউ/ওএফ