১১,৫১৪ কোটি টাকা ব্যয় বাড়াতে একনেকে উঠছে মেট্রোরেল প্রকল্প
মেট্রোরেল প্রকল্পের মূল কাজে যুক্ত হচ্ছে মাত্র ১.১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য। অর্থাৎ মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেলের কাজ বাড়ানো হচ্ছে। এ কাজের জন্য প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে ১১ হাজার ৫১৪ কোটি টাকা।
মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) এ কাজের ব্যয়ের অনুমোদন পেতে প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের জন্য তোলা হবে। প্রকল্প ব্যয়ের সঙ্গে বাস্তবায়ন মেয়াদও বাড়ানো হচ্ছে প্রায় দেড় বছর। এর ফলে প্রকল্পটির মোট ব্যয় দাঁড়াবে ৩৩ হাজার ৪৭১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। সর্বশেষ মেট্রোরেলের ব্যয় ছিল ২১ হাজার ৯৫৮ কোটি টাকা। প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ থেকে একনেক সভায় দ্বিতীয় সংশোধনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। একনেকে অনুমোদন পেলে ডিসেম্বর ২০২৫ সালে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন শেষ করবে মেট্রোরেল বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।
বিজ্ঞাপন
উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার অংশের কাজ প্রায় শেষ। চলতি বছরের ডিসেম্বরে এই অংশে মেট্রোরেল চলাচল উদ্বোধন করা হতে পারে। কাজ চলছে প্রকল্পের বাকি অংশের। তবে মতিঝিল ছাড়িয়ে মেট্রোরেলের রুট কমলাপুর পর্যন্ত নেওয়ায় প্রকল্পের কাজ বেড়ে গেছে। মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত দৈর্ঘ্য ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার ধরে মেট্রোরেলের রুট দাঁড়াচ্ছে ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার। কাজ বাড়ার কারণে বেড়েছে ব্যয়ও।
প্রকল্প সংশোধনের কারণে বলা হয়েছে- ১৩ থেকে ১৭টি নতুন করে স্টেশন প্লাজার জন্য ভূমি অধিগ্রহণ, মতিঝিল থেকে কমলাপুর লাইনে সিভিল ওয়ার্কস, রোলিং স্টকস মডিফিকেশন কাজ করা হবে। ভূমি অধিগ্রহণ খাতে ভূমির পরিমাণ ও ব্যয় বৃদ্ধি, জেনারেল পরামর্শক খাতে জনমাসের পরিমাণ ও ব্যয় বৃদ্ধি, পুনর্বাসন সহায়তা পরামর্শক, মেইন লাইনে সিভিল এবং স্টেশন ওয়ার্ক কাজ করা হবে। ইনস্টিটিউশনাল ডেভেলপমেন্ট কন্সালটেন্সি, বৈদেশিক ঋণের সুদ, রোলিং স্টক অ্যান্ড ইক্যুইপমেন্ট, প্রাইস কন্টিনজেন্সি, সিভিল এবং বিল্ডিং ওয়ার্ক কাজ করা হবে। মেইন লাইনে সিভিল এবং স্টেশন ওয়ার্ক ইত্যাদি খাতের ব্যয় বৃদ্ধি। এছাড়া প্রকল্পের বাস্তবায়ন মেয়াদ ১ বছর ৬ মাস বৃদ্ধি করা হয়েছে।
আগের প্রকল্প প্রস্তাবনা অনুসারে, ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ের মধ্যে ১৬ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকাই ছিল জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা-জাইকার ঋণের। বাকি টাকা সরকারি তহবিলের। নতুন করে যে ব্যয় বাড়ছে, সেখানে জোগানের জন্য জাইকা থেকে ঋণ চাওয়া হবে আরও তিন হাজার ৮১ কোটি ১১ লাখ টাকা। সরকারি তহবিল থেকে দেওয়া হবে আট হাজার ৪০৫ কোটি ৮১ লাখ টাকা। নতুন অর্থ জাইকা দিলে তাদের ঋণ দাঁড়াবে ১৯ হাজার ৭১৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। এ প্রকল্পে সরকারি তহবিলের ব্যয় দাঁড়াবে ১৩ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পটির প্রাথমিক মেয়াদকাল ছিল ১ জুলাই ২০১২ থেকে ৩০ জুন ২০২৪। তবে কাজ বেড়ে যাওয়ায় প্রকল্প শেষ করতে সময় লাগবে আরও এক বছর ছয় মাস। সেক্ষেত্রে এটির মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মো. মামুন-আল-রশীদ বলেন, নানা কারণে নতুন করে চলমান মেট্রোরেল-৬ এ ব্যয় ও মেয়াদ বাড়ছে। মেট্রোরেলের দৈর্ঘ্য বাড়ছে এছাড়া স্টেশন প্লাজা নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ খাতেও ব্যয় বাড়ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকা মহানগরী ও তৎসংলগ্ন এলাকায় দ্রুতগামী, নিরাপদ, পরিবেশবান্ধব ও অত্যাধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে যানজট নিরসন সম্ভব হবে।
এসআর/জেডএস