ইসিকে ২০ প্রস্তাব বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ধারাবাহিক সংলাপে অংশ নিয়ে ২০টি প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি। দলটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক স্বাক্ষরিত প্রস্তাবগুলো সংলাপে উপস্থাপন করেন সংলাপে অংশ নেওয়া দলটির প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।
সোমবার (১৮ জুলাই) বিকেলে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে দলটির ১০ জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে অন্য চার নির্বাচন কমিশনারসহ ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এতে উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির আগে তিনটি দলের সঙ্গে সংলাপ করেছে আউয়াল কমিশন।
আরও পড়ুন>> নির্বাচন নিয়ে সংকটে পড়ে গেছি : সিইসি
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির প্রস্তাবগুলো হলো-
১। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তদারকি সরকারের তত্ত্বাবধানে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন, অর্থ, তথ্য ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় নির্বাচন কমিশনের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হবে।
২। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারাই রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করবেন।
৩। বিদ্যমান আসনভিত্তিক প্রত্যক্ষ নির্বাচনের পাশাপাশি দল বা জোটের সারাদেশে প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যানুপাতিক হারে সংসদে প্রতিনিধি নির্বাচনের ব্যবস্থা চালু করা প্রয়োজন। তাহলে সংসদে বেশি সংখ্যক দলের প্রতিনিধিত্ব ও তুলনামূলকভাবে যোগ্য ব্যক্তিদের নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ থাকে।
৪। একটা নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসন জেলার ভিত্তিতে ৬৪-তে উন্নীত করা এবং এসব আসনে প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে নারী সংসদ সদস্য নির্বাচিত করা।
৫। সংসদ সদস্যরা কেবল আইন প্রণয়ন, বাজেট পাস ও বৈদেশিক চুক্তি অনুমোদনেই ব্রত থাকবেন।
৬। অবসরপ্রাপ্ত সামরিক-বেসামরিক আমলা ও তারকা ব্যবসায়ীরা ন্যূনতম পাঁচ বছর রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার পরই কেবল তারা জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন।
৭। দুর্নীতিবাজ, দাগী অপরাধী, কালো টাকার মালিক, ঋণখেলাপী, অর্থপাচারকারী, রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাতকারী, ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিত, যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী ব্যক্তিরা যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে তা নিশ্চিত করা।
৮। মনোনয়ন বাণিজ্যের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৯। নির্বাচনে স্বল্প আয়ের ব্যক্তিদের প্রার্থী হওয়া ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ দেওয়া। নির্বাচন কমিশনকে পরিকল্পিতভাবে নির্বাচনী প্রচারণার দায়িত্ব গ্রহণ করা। এজন্য নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে প্রার্থীদেরকে নির্বাচনী প্রচারণার উপকরণ সরবরাহ, প্রচারণামূলক সভা ও গণমাধ্যমে সমান সুযোগ সৃষ্টি করা।
১০। প্রার্থীদের নির্বাচনী ব্যয় সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা নির্ধারণ; আর প্রার্থীদের জামানত পাঁচ হাজার টাকায় সীমাবদ্ধ রাখা।
১১। স্বচ্ছতা নিশ্চিতে প্রার্থীদের হলফনামা প্রকাশের বিধান রাখা। সংসদ সদস্যদের বৈধ আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন অনুপার্জিত অর্থ বাজেয়াপ্ত করা এবং তার সংসদ সদস্যপদ খারিজের বিধান চালু করা।
১২। 'না' ভোটের সুযোগ ও জনপ্রতিনিধি প্রত্যাহারের বিধান চালু করা।
১৩। প্রবাসীদের ভোটের তালিকাভুক্তি ও তাদের ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করা।
১৪। রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের শর্তাবলী সহজ করা; যেসব শর্তাবলী সংবিধানের মৌল গণতান্ত্রিক চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও অসঙ্গতিপূর্ণ আরপিওর সেসব বিধান বাতিল করা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের এক শতাংশ সমর্থনের বিধান রহিত করা।
১৫। নির্বাচনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ধর্ম ও সাম্প্রদায়িকতার ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা নিষিদ্ধ করা। ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে কেউ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তার ব্যবস্থা করা।
১৬। নির্বাচনকে সন্ত্রাস, পেশীশক্তি, দুর্বৃত্ত, প্রশাসনিক ম্যানিপুলেশান থেকে মুক্ত করা। ভোট দিতে বাধা দেওয়াকে গুরুতর অপরাধ হিসাবে গণ্য করে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা।
১৭। অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার বিধান চালু করা।
১৮। নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘিত হলে নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে প্রার্থিতা বাতিলের আইন কার্যকরী করা।
১৯। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের জন্য বাস্তবিক অর্থেই 'লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ কার্যকরী করে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করা।
২০। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়ার বিধান চালু করা।
আশা করি আমাদের গুরুত্বপূর্ণ দুটি পর্যবেক্ষণ, সমালোচনা ও প্রস্তাবগুলো আপনারা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নিয়ে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেবেন। আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে যদি আপনারা যথাযথ পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হন, সরকার ও সরকারি দলের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ চাপ মোকাবিলা করে পুরো নির্বাচনী ব্যবস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করতে না পারেন, তাহলে কমিশনের উচিত হবে পদত্যাগ করে মানসম্মান নিয়ে দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়া।
এসআর/জেডএস