বহুল আলোচিত বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডে জড়িত যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি কামরুল হাসানকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। পল্টন থানাধীন রাজধানীর চামেলীবাগ এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-৩ এর একটি দল।

সোমবার (১৮ জুলাই) দুপুরে র‌্যাব-৩ এর স্টাফ অফিসার (অপস্ ও ইন্ট শাখা) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বীণা রানী দাস জানান,  
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব জানতে পারে বিশ্বজিৎ হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি কামরুল হাসান রাজধানীর শান্তিনগর এলাকায় আত্মগোপন করেছে। তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়ে রোববার (১৭ জুলাই) রাতে রাজধানীর পল্টন থানাধীন চামেলীবাগ এলাকা থেকে কামরুল হাসানকে গ্রেপ্তার করে। কামরুল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর নারায়ণপুরের মৃত আব্দুল কাইয়ুমের ছেলে।

তিনি জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার কামরুল জানিয়েছে, ঘটনার দিন বিশ্বজিৎকে প্রতিপক্ষ দলের সদস্য ভেবে তাকে তারা ধাওয়া করে। তারপর মামলার এজাহার নামীয় আসামিরা তাকে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে। বিশ্বজিৎ আহত হয়ে মাটিতে পড়ে গেলে তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। তারপর সে জানতে পারে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে বিশ্বজিৎ এর মৃত্যু হয়েছে এবং ঘটনায় সূত্রাপুর থানায় মামলা হয়েছে। এরপর সে পার্শ্ববর্তী দেশে তার নানার বাড়ির আত্মীয়ের আশ্রয়ে আত্মগোপন করে। মামলার অভিযোগপত্র দাখিলের দুই মাস পর সে বাংলাদেশে ফিরে আসে। 

আসামি কামরুল ১৯৯৪ সালে তার বাবার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সপরিবারে ঢাকায় বসবাস করত। তার বাবার মৃত্যুর পর তারা গ্রামের বাড়ি চলে যায়। তারা তিন বোন এক ভাই। কামরুল সবার ছোট। সে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের একটি স্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থকে এসএসসি এবং একটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে। ২০০৫ সালে সে ঢাকার একটি কলেজে অ্যাকাউন্টিং সম্মান শ্রেণিতে ভর্তি হয়। সে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের সঙ্গে যুক্ত ছিল। ২০১১ সালে সে তার সহপাঠীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। তার একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। 

২০১৩ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশে ফিরে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় সে তার স্ত্রীর সঙ্গে বসবাস করতে শুরু করে। এ সময় সে জীবিকার সন্ধানে বিভিন্ন জনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে থাকে। প্রথমে সে ছদ্মনামে গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করে। এরপর তার সঙ্গে প্রশ্ন ফাঁসকারী চক্রের প্রধান খোকন ও সোহেলের সঙ্গে পরিচয় হয়।

তারা তাকে প্রলুব্ধ করে যে, প্রশ্ন ফাঁসের মাধ্যমে সে ঘরে বসেই প্রচুর অর্থ উপার্জন করতে পারবে। এভাবে সে ২০১৪ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের নামে বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের কাছে প্রশ্ন বিক্রি করে দশ লাখের বেশি টাকা উপার্জন করে। 

অবৈধ উপার্জন দিয়ে সে কক্সবাজার সদর এলাকায় হোটেল ব্যবসা চালু করে। করোনা মহামারির লকডাউনের সময় লোকসানের কারণে ব্যবসা বন্ধ করে দেয়। বর্তমানে তার দৃশ্যমান কোনো পেশা নেই। আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কামরুলকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া নবীনগর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সূত্রাপুর এলাকায় সরকারবিরোধী আইনজীবীদের এক মিছিলে তাড়া করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও কবি নজরুল ইসলাম কলেজের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। ওই সময় তারা পথচারী লন্ড্রী ব্যবসায়ী বিশ্বজিৎ দাসকে সামনে পেয়ে প্রকাশ্যে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করে।

এ ঘটনায় ওই দিনই সূত্রাপুর থানায় মামলা হয়। স্পর্শকাতর হওয়ায় মামলাটি পরে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। পুলিশ ২১ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেন।

২০১৩ সালের ৮ ডিসেম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ এর বিচারক এ বি এম নিজামুল হক এ মামলায় রায় দেন। রায়ে ২১ আসামির মধ্যে আটজনকে মৃত্যুদণ্ড ও ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। ওই দিন এ মামলার আট আসামি আদালতে হাজির ছিলেন। বাকি আসামিরা পলাতক ছিলেন।

জেইউ/জেডএস