মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর সিন্ডিকেটে তিন এমপি এক মন্ত্রী : বায়রা
মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সির সিন্ডিকেটের সাথে সরকারের তিনজন এমপি ও একজন মন্ত্রী পরোক্ষভাবে জড়িত বলে অভিযোগ করেছে জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন সম্মিলিত সমন্বয় ফ্রন্ট (বায়রা)।
আজ (সোমবার) বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়- সরকারের মদদ ছাড়া এই সিন্ডিকেট এতদূর আগাতে পারে না। তাই সরকারকেই এই সিন্ডিকেট বন্ধ করতে হবে। সিন্ডিকেটে সরকারের তিনজন এমপি আর একজন মন্ত্রী পরোক্ষভাবে জড়িত। যেখানে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশ অংশে কর্মীদের খরচ ধরা হয়েছে ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকা। সেখানে এজেন্সিগুলো কিভাবে একজন শ্রমিক থেকে ৩ থেকে ৪ লক্ষ টাকা নেয়।
বিজ্ঞাপন
সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অনৈতিকভাবে কর্মী পাঠানোর অপচেষ্টাকারীদের লাইসেন্স বাতিল ও বিচারের দাবিও জানানো হয়েছে। এছাড়া সিন্ডিকেট পদ্ধতি বাতিল করে সকল বৈধ এজেন্সির জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার উন্মুক্ত রাখা এবং জনশক্তি রপ্তানির জটিলতা নিরসনে ১০ দফা দাবি জানায় বায়রা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বায়রার সভাপতি ড. মোহাম্মদ ফারুক।
• আরও পড়ুন : জটিলতা কেটেছে, দুই হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক নিতে প্রস্তুত মালয়েশিয়া
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে শ্রমিক রপ্তানি হলে অভিবাসন ব্যয় কয়েক গুণ বেড়ে যাবে। কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ শ্রমিক রপ্তানি করা যাবে না। আন্দোলন ও আইনি পদক্ষেপের কারণে বাজারটি উন্মুক্ত হওয়ার সাথে সাথে বন্ধ হয়ে যাবে। দেশে-বিদেশে আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়ে যাবে। যেই উদ্দেশ্য নিয়ে শ্রমবাজারটি খোলা হচ্ছে তা চরমভাবে ব্যাহত হবে। ব্যবসা বাণিজ্যে সুষ্ঠু-সুন্দর প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ টিকিয়ে রাখা ও আরও উন্নত পরিবেশ সৃষ্টির জন্য বাংলাদেশ সরকার ২০১২ সালে একটি আইন প্রণয়ন করে। যা কম্পিটিশন অ্যাক্ট ২০১২ নামে পরিচিত। আমরা আইএলও সনদে স্বাক্ষরকারী দেশ। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে শ্রমিক রপ্তানি এই দুইটি আইনের পরিপন্থি। সরকারের নিরাপদ ও টেকসই অভিবাসন নীতির পরিপন্থি, নৈতিকতা ও সভ্যতার পরিপন্থি।
যেসব কোম্পানি ও এজেন্সি দূতাবাস থেকে নিয়োগপত্র সত্যায়িত করেছে সেগুলোর নামও তুলে ধরা হয়। এগুলো হলো- অরবিটাল এন্টারপ্রাইজ, আহমেদ ইন্টারন্যাশনাল, নিউ ইডজ ইন্টারন্যাশনাল, পাথপাইন্ডার ইন্টারন্যাশনাল, গ্রীন ল্যান্ড ওভারসীজ, বিনিময় ইন্টারন্যাশনাল, এমিআল ইন্টারন্যাশনাল, ইম্পেরিয়াল রিসোর্স লিমিটেড, এস এম ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, ইরভিং এন্টারপ্রাইজ, আল বোখারী ইন্টারন্যাশনাল, সাউথ পয়েন্ট ওভারসীজ লিমিটেড।
জনশক্তি রপ্তানির জটিলতা নিরসনে ১০ দফা দাবিও তুলে ধরা হয় সংবাদ সম্মেলন থেকে। তাদের দাবিগুলো হলো-
১. ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর শ্রমিক রপ্তানি নিয়ে মালয়েশিয়ার সাথে যে সমঝোতা চুক্তি হয়েছে সেই চুক্তি থেকে বি পরিশিষ্টের আটির্কেল-সি (৫) সংশোধন করতে হবে।
২. সকল বৈধ এজেন্সির জন্য মালয়েশিয়া, লিবিয়াসহ সকল শ্রমবাজার উন্মুক্ত রাখতে হবে।
৩. বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক রপ্তানিতে এফডব্লিউসিএমএস সফটওয়্যার ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
৪. ২ জুন জেডব্লিউজি মিটিংয়ে গৃহীত এসওপি বাতিল বা সংশোধন করতে হবে।
৫.দূতাবাস, বিএমইটি ও মন্ত্রণালয়ে এফডব্লিউসিএমএসের অফিস খোলার অনুমতি বাতিল করতে হবে।
৬. সিন্ডিকেটের যে সব সদস্য মন্ত্রণালয়ের বিনা অনুমতিতে মালয়েশিয়ার জন্য কর্মী বাছাই ও মেডিকেল টেস্ট করেছে তাদের লাইসেন্স স্থগিত করতে হবে।
৭. ২০১৬ সালে যে ১০টি সিন্ডিকেট মালয়েশিয়ায় শ্রমিক রপ্তানি করেছে তদন্ত করে তাদের দ্বারা সংগঠিত অপরাধের বিচার করতে হবে।
৮. ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরের পর যে ২৫টি এজেন্সি সিন্ডিকেট করে শ্রমিক রপ্তানি করার চেষ্টায় লিপ্ত আছে তাদের লাইসেন্স বাতিল করতে হবে।
৯. সিন্ডিকেটের যে সব সদস্যের নামে চাহিদাপত্র সত্যায়িত হয়েছে তা বাতিল করতে হবে এবং নিয়োগানুমতি বন্ধ রাখতে হবে।
১০. প্রতিযোগীতা আইন ২০১২ ও আইএলও কনভেনশন অনুযায়ী সকল বৈধ এজেন্সিকে সকল দেশে শ্রমিক রপ্তানির সুযোগ দিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন সম্মিলিত সমন্বয় ফ্রন্টের সভাপতি ড. মোহাম্মদ ফারুক, সিনিয়র সহ-সভাপতি রিয়াজ-উল ইসলাম, মহাসচিব মোস্তফা মাহমুদ, সহ-সভাপতি গোলাম মোস্তফা বাবুল, আবদুল আলিম,আরিফুর রহমান, মাইনুদ্দিন তিতাসসহ প্রমুখ।
আইবি/এনএফ