যাত্রী বেশে বাসে উঠে কৌশলে গাড়ির কাগজপত্র চুরি করে একটি চক্র। এরপর গাড়ির মালিককে ফোন দিয়ে কাগজের বিনিময়ে চাঁদা দাবি করে তারা। চাঁদা না দিলে কাগজপত্র পুড়িয়ে ফেলার হুমকি দেয়। চক্রটির কাছে জিম্মি হয়ে একপর্যায়ে চুক্তিতে যান অনেক পরিবহন মালিক। 

শনিবার (১৬ জুলাই) রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসিলা থেকে এ চক্রের মূলহোতা রাকিব ওরফে তুফানসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি।

রোববার (১৭ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান ঢাকা মেট্রোর অতিরিক্ত ডিআইজি ইমাম হোসেন।

তিনি বলেন, একটি সংঘবদ্ধ চক্র ২০২০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ঢাকা শহরে চলাচলকারী মিরপুর লিংক, শিকড়, খাজাবাবা, প্রজাপতি ও রবরবসহ বিভিন্ন পরিবহনের বাসে যাত্রীবেশে উঠে অভিনব কায়দায় বাসের ব্লু-বুক ও রেজিস্ট্রেশন সনদসহ অন্যান্য কাগজপত্র চুরি করে আসছে। তারা গাড়ির মালিক, ম্যানেজার ও চালকদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে প্রতিটি গাড়ির কাগজের জন্য ১০ হাজার টাকা করে চাঁদা দাবি করে। মালিকরা চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে চক্রটি গাড়িতে আগুন দেওয়া বা চালকদের প্রাণনাশের হুমকি দেয়।

কাগজপত্র ছাড়া রাস্তায় বাস চালাতে না পারায় বাসের মালিকরা চক্রের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা করে চাঁদা দেন। এরপর চক্রটি কিছু কাগজপত্র ফেরত দেয়। তবে কিছু কাগজ তারা আটকেও রাখে।

আটকে রাখা কাগজ ফেরত দেওয়ার শর্তে পরিবহনের মালিকদের মাসিক চাঁদা দিতে বাধ্য করে চক্রটি। ট্রাফিক পুলিশের মামলা, কোর্ট-কাচারি, দৌড়াদৌড়ির ভয়ে মালিকরা বাধ্য হন চাঁদা দিতে।

কিছু মালিক মাসিক চাঁদা দিতে রাজি না হলে চক্রের মূলহোতা রাকিব মিয়া নিজেকে ‌‌'তুফান' পরিচয় দিয়ে তাদের হুমকি দেয়। সে তাদের বলে, ‘আমি তুফান, আমাকে ঢাকা শহরের অধিকাংশ পরিবহনের মালিক চাঁদা দেয়। চাঁদা না দিলে আমি গাড়ির কাগজ চুরি করতে থাকব। ঢাকা শহরের কোনো পুলিশ আমাকে গ্রেপ্তার করতে পারবে না।’

ডিআইজি ইমাম হোসেন বলেন, সিআইডি ঢাকা মেট্রো-পশ্চিমের একটি টিম তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় শনিবার (১৬ জুলাই) রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে মূলহোতা রাকিব মিয়া ওরফে তুফান এবং তার তিন সহযোগী শুকুর আলী (২৮), হৃদয় হোসেন (২১) ও মো. শামিমকে (২৫) গ্রেপ্তার করে। তাদের কাছ থেকে অনেকগুলো বাসের চুরি যাওয়া রেজিস্ট্রেশন সনদ, ফিটনেস সনদ ও ট্যাক্স টোকেন উদ্ধার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তুফানসহ গ্রেপ্তার হওয়া অন্যরা স্বীকার করে, দীর্ঘদিন ধরে তারা নিজেদের পরিচয় গোপন করে ঢাকা শহরের বিভিন্ন আবাসিক এলাকা থেকে মোবাইল চুরি করে। পরে তারা ওই মোবাইল দিয়ে ফোন করে বিকাশ এজেন্টের মাধ্যমে চাঁদা আদায় করে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেয়।

এক প্রশ্নের জবাবে সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, ২০২০ সালে রাকিব ওরফে তুফান বাসের কাগজ চুরি করা শুরু করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে ধরা না পড়তে ৫৬টি সিম পাল্টায় তুফান।

তিনি জানান, এই চক্রে আরও অন্তত পাঁচজন সদস্য রয়েছে, যাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রেখেছে সিআইডি।

জেইউ/এসকেডি