রাজধানীতে পানির মূল্য যৌক্তিকভাবে নির্ধারণের জন্য ঢাকা ওয়াসাকে নির্দেশ দিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, পানির দাম অবশ্যই যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করতে হবে। মানুষের জন্য যেন কষ্টকর না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আবার কম মূল্যে পানি সরবরাহ করতে গিয়ে প্রতিষ্ঠান যাতে অকার্যকর না হয় সে দিকটায়ও লক্ষ্য রাখতে হবে।

রোববার (১৭ জুলাই) রাজধানীর একটি পাঁচ তারকামানের হোটেলে ওয়াটার এইড এবং ঢাকা পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষের (ঢাকা ওয়াসা) এলাকাভিত্তিক পানির মূল্য নির্ধারণ বিষয়ক টেকনিক্যাল স্টাডির (কারিগরি গবেষণা) ফল উপস্থাপন  অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

তাজুল ইসলাম বলেন, ভুর্তকি দিয়ে কোনো প্রতিষ্ঠান টিকে থাকতে পারবে না। পানির দাম কত হবে তা ওয়াসার বোর্ড সভার মাধ্যমে নির্ধারণ করতে হবে। অযৌক্তিকভাবে পানির দাম যেমন বাড়ানো উচিত নয়, তেমনি যৌক্তিক মূল্য দিতে অসহযোগিতা করার সুযোগ নেই। উৎপাদন খরচ কোনোভাবেই বিক্রির চেয়ে কম হতে পারে না। শুধু দাম বাড়লেই প্রতিষ্ঠান লাভজনক হবে না। যদি সেখানে অব্যবস্থাপনা থাকে। অব্যবস্থাপনা বা দুর্নীতির কারণে পানির দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে কি না সেটাও খতিয়ে দেখা হবে। দুর্নীতিকে কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না।

তিনি বলেন, অভিজাত এলাকায় বসবাসরত মানুষকে যে মূল্যে পানি দেওয়া হয়, বস্তিবাসী বা নিম্নবিত্তদের তার থেকে কম মূল্যে পানি সরবরাহ করা উচিত। গরিব মানুষের কাছ থেকে রাজস্ব নিয়ে ধনীদের কম দামে পানি দেওয়ার সুযোগ নেই। এজন্য জোনভিত্তিক পানির মূল্য নির্ধারণ করতে হবে। আর শুধু পানি নয় গ্যাস, বিদ্যুৎ ও হোল্ডিং ট্যাক্সসহ অন্যান্য ইউটিলিটিক্যাল সার্ভিসের মূল্য নির্ধারণ হওয়া উচিত।

মন্ত্রী বলেন, বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের মূল শহরে বেশি মানুষ বসবাস করে না। কারণ এখানে বসবাস করা অনেক ব্যয়বহুল। তাই ব্যয় সংকোচনের জন্য পার্শ্ববর্তী শহরে বসবাস করে। সকালে ট্রেনে করে মানুষ শহরে এসে অফিস করে বিকেলে চলে যায়। আমরাও যদি আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়ন করতে পারি তাহলে ঢাকার মানুষকে আশপাশের শহরে রিলোকেট করা সম্ভব হবে।

তিনি বলেন, সবাই ঢাকায় থাকতে চায়। দেশের সব মানুষকে ঢাকায় রাখা যাবে না। আবার ঢাকা থেকে মানুষকে জোর করে বের করে দেওয়াও যাবে না। শহরমুখী মানুষের চাপ কমাতে গ্রামগুলোকে উন্নত করতে হবে। আধুনিক নাগরিক সেবা গ্রামে পৌঁছে দিতে সরকার আমার গ্রাম আমার শহর দর্শন বাস্তবায়ন করছে। শহরের সব সুযোগ-সুবিধা গ্রামে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। গ্রামে বসে শহরের আধুনিক সব নাগরিক সেবা পেলে মানুষ শহরে আসবে না বলেও উল্লেখ করেন মন্ত্রী। শহরের সেবা গ্রামে পৌঁছে দিতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়ে কাজ করছে।

তিনি আরও বলেন, সব প্রতিষ্ঠান কাজ করার জন্য একদিকে যেমন সুযোগ দিতে হবে, তেমনি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্বশীল হতে হবে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। নাগরিককে দ্রুত সেবা দেওয়ার মানসিকতা তৈরি করতে হবে। দিনের পর দিন সেবাগ্রহীতাকে কোনোভাবেই হয়রানি করা যাবে না।

ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী, ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা এবং ওয়াটারএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিনা জাহান।

এমএইচএন/জেডএস