ওষুধ উৎপাদনে ব্যবহৃত কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি, পরিবহন ও ডিস্ট্রিবিউশন ব্যয় বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে ৫৩টি ওষুধের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর বিষয়টিকে মূল্য বৃদ্ধি বলতে নারাজ। তাদের দাবি, ওষুধে ব্যবহৃত কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি হওয়ায় এর সঙ্গে সমন্বয় করে ওষুধের দাম কিছুটা ‘আপডেট’ করা হয়েছে।

শনিবার (১৬ জুলাই) রাতে ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও পরিচালক মো. আইয়ুব হোসেন।

তিনি বলেন, আমাদের প্রাইস পলিসি যথাযথভাবে রিভিউ করেই কিছু ওষুধের দাম আপডেট করা হয়েছে, যা অনেক দিন ধরেই হয়নি। ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি হয় না অনেক দিন, কিন্তু কাঁচামালের ঠিকই দাম বেড়েছে। কাঁচামালের দাম বাড়ায় অনেক ওষুধ মার্কেট থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। সেগুলোর উৎপাদনে আগ্রহ তৈরি করা উচিত। তাছাড়া উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলো তো লস দিয়ে উৎপাদন করবে না।

উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, শুধু কাঁচামালের দামই বাড়েনি, প্যাকেজিং ম্যাটেরিয়াল, পরিবহন ও ডিস্ট্রিবিউশন ব্যয়, ডলারের বিনিময়মূল্য, মুদ্রাস্ফীতিসহ নানা কারণেই ওষুধ উৎপাদনের খরচ বেড়েছে। এসব কারণে ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে।

জানা গেছে, সর্দি-জ্বরসহ বিভিন্ন রোগেই সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় প্যারাসিটামল, নতুন নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী ৭০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে এই ওষুধের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে এক টাকা ২০ পয়সা। আবার কিছু ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি।

এসব প্রসঙ্গে আইয়ুব হোসেন বলেন, পূর্বে প্যারাসিটামল কাঁচামালের মূল্য ছিল ৪৮০ টাকা, সেটি এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯০০ টাকা। সে হিসেবে তারা ওষুধের দামটি মানতে পারছিল না। সবগুলো মিলিয়ে সরকারের যে প্রাইস কমিটি আছে, তাদের সিদ্ধান্তক্রমেই সরকার ওষুধের মূল্যটা আপডেট করেছে। বিষয়টি যে মূল্যবৃদ্ধি এ রকম নয়, এটা এমন না যে কেউ চাইল আর দাম বাড়িয়ে দেওয়া হলো৷

তিনি আরও বলেন, অনেকদিন ধরেই ওষুধ উৎপাদকদের কাছ থেকে দাম বাড়ানোর দাবিটি আমাদের কাছে ছিল। আমরা সবকিছু চিন্তা ভাবনা করে দাম একটু আপডেট করেছি। করোনাকালীন সময়ও প্যারাসিটামলের দাম অনেক বেড়ে গিয়েছিল, কিন্তু বাজারে প্রোডাক্টের দাম বাড়েনি বা আমরা বাড়াইনি।

আরও পড়ুন : যমুনা গ্রুপে যোগ দিলেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা গোলাম রাব্বানী

ওষুধ প্রশাসনের এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা আবারও বলছি, আমরা যে ওষুধের দাম বাড়িয়েছি, বিষয়টি এ রকম নয়। মূল্যটাকে একটু আপডেট করা হয়েছে, সেক্ষেত্রে আমরা ওষুধের কাঁচামালের দামের সঙ্গে কিছুটা সমন্বয় করেছি। নতুন যেই দাম হয়েছে, আমাদের প্রাইস পলিসি অনুযায়ীই হয়েছে। ১১৭টি পণ্যের মধ্যে ৫৩ টি পণ্যের দাম বেড়েছে।

ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত ৩০ জুন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত ওষুধের মূল্যনির্ধারণ কমিটির ৫৮তম সভায় এসব ওষুধের পুনর্নির্ধারিত দাম অনুমোদন করা হয়। তবে এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেনি অধিদপ্তর। সর্বশেষ ২০১৫ সালে কয়েকটি ব্র্যান্ডের ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছিল।

দাম বেড়েছে যেসব ওষুধের

প্যারাসিটামল ৫০০ এমজি ট্যাবলেট: আগে ছিল ৭০ পয়সা, এখন দাম এক টাকা ২০ পয়সা। প্যারাসিটামল ৫০০ এমজি ট্যাবলেট (র‌্যাপিড): আগে ছিল ৭০ পয়সা, এখন এক টাকা ৩০ পয়সা। প্যারাসিটামল ৬৫০ এমজি ট্যাবলেট (এক্সআর): আগে ছিল এক টাকা ৩১ পয়সা, এখন দুই টাকা।প্যারাসিটামল ১০০০ এমজি ট্যাবলেট: আগে ছিল এক টাকা ৪ পয়সা, বর্তমান দাম দুই টাকা ২৫ পয়সা। প্যারাসিটামল ৮০ এমজি ড্রাপস ১৫ এমএল বোতল: আগে ছিল ১২ টাকা ৮৮ পয়সা, এখন ২০ টাকা। প্যারাসিটামল ৮০ এমজি ড্রাপস ৩০ এমএল বোতল: আগে ছিল ১৮ টাকা, এখন দাম ৩০ টাকা।

প্যারাসিটামল ১২০ এমজি/৫ এমএল সাসপেনশন (৬০ এমএল) বোতল: আগে ছিল ১৮ টাকা, বর্তমান দাম ৩৫ টাকা। প্যারাসিটামল ১২০ এমজি/৫ এমএল সাসপেনশন ১০০ এমএল বোতল: আগে ছিল ৩০ টাকা ৮ পয়সা, বর্তমান দাম ৫০ টাকা। প্যারাসিটামল ১২০ এমজি/৫ এমএল সিরাপ (৬০ এমএল) বোতল: আগের দাম ১৮ টাকা, বর্তমান দাম ৩৫ টাকা। প্যারাসিটামল ১২০ এমজি/৫ এমএল সিরাপ (১০০ এমএল) বোতল: আগে ছিল ২৭ টাকা ৭২ পয়সা, বর্তমান দাম ৫০ টাকা।

মেট্রোনিডাজল ২০০ এমজি ট্যাবলেট কোটেড: আগে দাম ছিল ৬০ পয়সা, বর্তমান দাম এক টাকা। মেট্রোনিডাজল ২৫০ এমজি ট্যাবলেট কোটেড: আগের দাম ৯২ পয়সা, বর্তমান দাম এক টাকা ২৫ পয়সা। মেট্রোনিডাজল ৪০০ এমজি ট্যাবলেট কোটেড: আগের দাম এক টাকা ৩৭ পয়সা, বর্তমান দাম এক টাকা ৭০ পয়সা। মেট্রোনিডাজল ৫০০ এমজি ট্যাবলেট কোটেড: আগে ছিল এক টাকা ৬৬ পয়সা, বর্তমান দাম দুই টাকা।মেট্রোনিডাজল ২০০এমজি/৫এমএল সাসপেনশন ৬০ এমএল বোতল: আগের দাম ২৬ টাকা, বর্তমানে ৩৫ টাকা।

আরও পড়ুন : স্থানীয়দের সহযোগিতার হাতটা খুব জরুরি : মাশরাফি

মেট্রোনিডাজল ২০০এমজি/৫এমএল সাসপেনশন ১০০ এমএল বোতল: আগের মূল্য ৩৪ টাকা ৯২ পয়সা, বর্তমানে ৪৫ টাকা। মেট্রোনিডাজল ৫০০এমজি/১০০ এমএল ইনফিউশন, ১০০ এমএল বোতল: আগের মূল্য ৭৪ টাকা ৩৫ পয়সা, বর্তমানে ৮৫ টাকা।

এমোক্সিসিলিন বিপি ১২৫ এমজি/১.২৫ এমএল সাসপেনশন ১৫ মিলি বোতল: আগের দাম ২৬ টাকা ৩৪ পয়সা, বর্তমানে ৩৫ টাকা। এমোক্সিসিলিন বিপি ১২৫ এমজি/৫ এমএল সাসপেনশন ১০০ মিলি বোতল: আগের দাম ৪১ টাকা ৪০ পয়সা, বর্তমানে ৭০ টাকা। এমোক্সিসিলিন বিপি ২৫০ এমজি/৫ এমএল সাসপেনশন-ডিএস ১৫ মিলি বোতল: আগের দাম ৬৭ টাকা ৯৪ পয়সা, বর্তমানে ১০০ টাকা।

এমোক্সিসিলিন বিপি ২৫০ এমজি ক্যাপসুল: আগের দাম ৩ টাকা ১৫ পয়সা, বর্তমানে ৪ টাকা।এমোক্সিসিলিন বিপি ৫০০ এমজি ক্যাপসুল: আগের দাম ৫ টাকা ৯০ পয়সা, বর্তমানে ৭ টাকা ৫ পয়সা। এমোক্সিসিলিন বিপি ৫০০ এমজি ইনজেকশন: আগের দাম ২৪ টাকা ১০ পয়সা, বর্তমানে ৫৫ টাকা।

জাইলোমেট্রোজালিন এইচসিআই ০.০৫% নাসাল ড্রাপ ১৫ এমএল: আগের দাম ৯ টাকা ৬০ পয়সা, বর্তমানে ১৮ টাকা। জাইলোমেট্রোজালিন এইচসিআই ০.১% নাসাল ড্রাপ ১৫ এমএল: আগের দাম ১০ টাকা ৪ পয়সা, বর্তমানে ২০ টাকা।

প্রোকলেপেরাজিন ৫এমজি ট্যাবলেট: আগের দাম ৪০ পয়সা, বর্তমানে ৬৫ পয়সা। প্রোকলেপেরাজিন ১২.৫ এমজি ইনজেকশন: আগের দাম ৪ টাকা ৩৬ পয়সা, বর্তমানে ৯ টাকা।

ডায়াজেপাম ১০এমজি/২এমএল ইনজেকশন: আগের দাম ৩ টাকা ২২ পয়সা, বর্তমানে ৭ টাকা। মিথাইলডোপা ২৫০ এমজি ট্যাবলেট: আগের দাম এক টাকা ৫০ পয়সা, বর্তমানে ৩ টাকা ৪৮ পয়সা। মিথাইলডোপা ৫০০ এমজি ট্যাবলেট: আগের দাম ৫ টাকা ১৩ পয়সা, বর্তমানে ৬ টাকা ৯ পয়সা।

ফ্রুসেমাইড ২০ এমজি/২এমএল ইনজেকশন: আগের দাম ৫ টাকা ৯৯ পয়সা, বর্তমানে ৯ টাকা।ফ্রুসেমাইড ৪০ এমজি ট্যাবলেট: আগের দাম ৫৬ পয়সা, বর্তমানে এক টাকা।

ফেনোবারাবিটাল ৩০ এমজি ট্যাবলেট: আগের দাম ৬৮ পয়সা, বর্তমানে এক টাকা।ফেনোবারাবিটাল ৬০ এমজি ট্যাবলেট: আগের দাম এক টাকা, বর্তমানে এক টাকা ৫০ পয়সা।ফেনোবারাবিটাল ৫০ এমএল এলিক্সির ২০এমজি৫ এমএল বোতল: আগের দাম ২১ টাকা ৭৮ পয়সা, বর্তমানে ৪৩ টাকা। ফেনোবারাবিটাল ১০০ এমএল এলিক্সির ২০ এমজি/৫ এমএল বোতল: আগের দাম ৫০ টাকা, বর্তমানে ৭০ টাকা।

ওআরএস ৫০০ এমএল স্যাটেস: আগের দাম ৪ টাকা ৩৫ পয়সা, বর্তমানে ৬ টাকা। ওআরএস ফ্রুটি ২৫০ এমএল স্যাটেস: আগের দাম ৪ টাকা ৪০ পয়সা, বর্তমানে ৬ টাকা।

লিডোকেইন ১% ডব্লিউভি, ২০ এমজি/২এমএল ইনজেকশন: আগের দাম ৩ টাকা ৬ পয়সা, বর্তমানে ৭ টাকা। লিডোকেইন ১% ডব্লিউভি, ৫০ এমএল ইনজেকশন: আগের দাম ২০ টাকা, বর্তমানে ৩৫ টাকা। লিডোকেইন ২% ডব্লিউভি, ৫০ এমএল ইনজেকশন: আগের দাম ২৫ টাকা, বর্তমানে ৪০ টাকা।

ফলিক এডিস ০.০৫ এমজি/১০০এমএল ওরাল সলিউশনের (১০০ এমএল বোতল): ৫০ টাকা। ক্লোরফেনিরামিন ২এমজি/৫এমএল সিরাপের (৬০ এমএল বোতল): আগের দাম ১৩ টাকা, বর্তমানে ২০ টাকা। বেনজাথিন বেনজিলপেনিসিলিন ১২ লাখ ইউনিট/ভায়ল ইনজেকশন: আগের দাম ১৫ টাকা ৬০ পয়সা, বর্তমানে ৩০ টাকা।

এ্যসপিরিন ৭৫ এমজি ট্যাবলেট: আগের দাম ৫৫ পয়সা, বর্তমানে ৮০ পয়সা। এ্যসপিরিন ৩০০ এমজি ট্যাবলেট: আগের দাম দেড় টাকা, বর্তমানে ২ টাকা। ফেনোক্সিমিথাইল পেনিসিলিন ২৫০ এমজি ট্যাবলেট: আগের দাম দুই টাকা, বর্তমানে দুই টাকা ৮০ পয়সা।

ফেনোক্সিমিথাইল পেনিসিলিন ৫০০ এমজি ট্যাবলেট: আগের দাম ৩ টাকা ৮৬ পয়সা, বর্তমানে ৫ টাকা ৫০ পয়সা। ফেনোক্সিমিথাইল পেনিসিলিন ২৫০ এমজি/৫এমএল সিরাপের (৫০ এমএল বোতল): আগের দাম ২১ টাকা ৫০ পয়সা, বর্তমানে ৩৫ টাকা।

প্রোমেথাজিন ৫এমজি/৫এমএল এলিক্সির (১০০ এমএল বোতল): আগের দাম ২১ টাকা ৩৫ পয়সা, বর্তমানে ৩৫ পয়সা। প্রোমেথাজিন ২৫এমজি/এমএল ইনজেকশন: আগের দাম ৩ টাকা, বর্তমানে ৭ টাকা। নরগেস্টেরেল ০.৩০ এমজি+ইথাইনিলিস্ট্রাডল ০.০৩এমজি ট্যাবলেট: আগের দাম এক টাকা ৫০ পয়সা, বর্তমানে দুই টাকা। ফেরোস ফেমেরেট ৭৫ এমজি ট্যাবলেট: আগের দাম ৩৮ পয়সা, বর্তমানে ৫০ পয়সা।

টিআই/এসকেডি