বাঁয়ে সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুল, ডানে দেবিদ্বার উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ

জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুল এবং কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ পরস্পরকে কিল-ঘুষি মেরেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। শনিবার দুপুরের দিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির বৈঠকে এ ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, দীর্ঘ ২৬ বছর পর আগামী ২১ জুলাই দেবিদ্বার উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। শনিবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির বৈঠক হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিন, সাধারণ সম্পাদক রোশন আলী মাস্টার, কুমিল্লা-৪ আসনের সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুল, দেবিদ্বার উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একেএম মনিরুজ্জামান। তবে এতে উপস্থিত ছিলেন না সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক গোলাম মোস্তফা।

বৈঠকে এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানের মধ্যে কিল-ঘুষির ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের আহ্বানে কুমিল্লা উত্তর জেলা ও দেবিদ্বার উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা জাতীয় সংসদের এলডি হলে উপস্থিত হন। সেখানে সম্মেলনের বিষয়ে মতবিনিময় করেন নেতারা। এসময় উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের কমিটির বিষয়ে আলোচনা হয়। 

কয়েকটি ইউপি কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রোশন আলী মাস্টার। সর্বশেষ একটি ইউপির নেতার নাম ঘোষণা করা হলে উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘সুন্দর হয়েছে’। এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে আজাদের দিকে তেড়ে আসেন সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুল। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে আজাদকে কিল-ঘুষি মারতে শুরু করেন ফখরুল। আজাদও সংসদ সদস্যকে কিল-ঘুষি মারেন। পরিস্থিতি জটিল হতে থাকলে উপস্থিত নেতারা তাদের শান্ত করেন।

কুমিল্লা উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিন বলেন, সম্মেলন কীভাবে করবে এ নিয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে একটি ইউনিয়নের কমিটি গঠন নিয়ে দুজন হাতাহাতি করেছেন। পরে আমরা ঠিকঠাক করেছি।

সাধারণ সম্পাদক রোশন আলী মাস্টার বলেন, ঘটনার বিষয়ে আমরা কেন্দ্রীয় নেতাদের জানিয়েছি। চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক স্বপন ভাই আগামীকাল (রোববার) ১২টায় দেখা করতে বলেছেন। 

এ বিষয়ে সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের ব্যক্তিগত নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে মোবাইলে ঘটনা উল্লেখ করে খুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি কিংবা ফিরতি কল করেননি। 

রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের অনুসারী দেবিদ্বার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একেএম মনিরুজ্জামান বলেন, বৈঠকে কথা কাটাকাটি হয়েছে, সিরিয়াস কিছু ঘটেনি।  

দেবিদ্বার উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের ব্যক্তিগত মোবাইলে কল দেওয়া হলে তার ঘনিষ্ঠ শাহাদাত হোসেন শিমুল নামে একজন কল রিসিভ করেন। তিনি বলেন, জাতীয় সংসদের এলডি হলে উপজেলা সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সভায় এমপি সাহেব আজাদ ভাইকে কিল-ঘুষি মেরেছেন। এখন তিনি একটি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রয়েছেন।  

আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, আমার কাছে কেউ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করেনি। আমি হাওয়া-হাওয়া শুনেছি, খোঁজ-খবর নেব।

প্রসঙ্গত, দেবিদ্বার উপজেলা আওয়ামী লীগ একাধিক ধারায় বিভক্ত। একসময় গ্রুপিং ছিল সাবেক মন্ত্রী ও কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি এবিএম গোলাম মোস্তফা এবং তার ভাগ্নে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য এএফএম ফখরুল মুন্সীর মধ্যে। দুজনের দ্বন্দ্বে দীর্ঘদিন সম্মেলন হয়নি।

এখন দেবিদ্বার উপজেলা কমিটি চার ধারায় বিভক্ত বলে জানা গেছে। চার গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন এএফএম ফখরুল মুন্সীর ছেলে ও সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুল, কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী এবিএম গোলাম মোস্তাফা, সাধারণ সম্পাদক রওশন আলী মাস্টার, সাংগঠনিক সম্পাদক ও দেবিদ্বার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ।

এইউএ/আরএইচ