ঈদের আগের রাতে নাটোর থেকে রওনা দিয়ে ভোরে ঢাকায় পৌঁছেছেন জাহাঙ্গীর আলমসহ চারজন। এরা মৌসুমি কসাই হিসেবে কাজ করতে ঢাকায় এসেছেন। নাটোরে তাদের এলাকা থেকেই এসেছেন ১৪ জন। ঢাকাতে নেমেই তারা বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছেন। 

তাদের দাবি বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার হাজার মৌসুমি কসাই গতকাল এবং আজ ঢাকায় এসেছেন।

বছর জুড়ে তারা নিজ নিজ এলাকায় বিভিন্ন কাজ করলেও ঈদের দুইদিন তারা ঢাকায় এসে মৌসুমি কসাই হিসেবে কাজ করেন। এই সময় রাজধানী ঢাকায় প্রচুর কসাইয়ের চাহিদা থাকায় এবং আয়ও ভালো হয় বলে ঈদের সময় ঢাকায় চলে আসেন। আগেও কাজ করে যাওয়ার কারণে নির্দিষ্ট কিছু গ্রাহক তাদের থাকেই। এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পরে কাজও খুঁজে নেন তারা।

এমন বেশকয়জন মৌসুমি কসাইয়ের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকায় মূলত এলাকাভেদে কাজের বিভিন্ন রকমের মজুরি। কোনো এলাকায় গরুর যে মূল্য, তার প্রতি ১০০০ টাকার জন্য ১০০ টাকা করে কসাইরা কাজ করেন। আবার গুলশান, বারিধারা, বনানীর মতো অভিজাত এলাকায় গরুর দামের প্রতি হাজারে ২০০ টাকা করে পান কসাইরা। এছাড়াও রাজধানীর অন্যান্য এলাকায় গরুর আকৃতি বুঝে ‘ঠিকা’ চুক্তিতে অর্থাৎ কোনো গরুর জন্য  ১০ হাজার আবার কোনোটার জন্য ১৫ হাজার টাকায় মাংস কাটার কাজ করেন তারা।

জাহাঙ্গীর আলম মূলত এলাকায় ভাঙারি ব্যবসা করেন। কোরবানি ঈদের সময় ঢাকায় যেহেতু কসাইয়ের সঙ্কট থাকে তাই তিনি প্রতি বছর কিছু লোকজন ও মাংস কাটার প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন।  

জাহাঙ্গী বলেন, গতবার গুলশানে যেই বাসায় গরুর কাজ করেছিলাম তারাই আবার ডেকেছে। আজ সেখানেই কাজ করব। গুলশানে প্রতি গরুর দামের হাজারে ২০০ টাকা করে কাজ ঠিক হয়েছে। সেখানে একটা কাজ ৩ জন মিলে করব। আর বাকি লোকদের বিভিন্ন এলাকায় পাঠিয়ে দিয়েছি, তারা ঘুরে ঘুরে চুক্তিভিত্তিক কাজ করবে। 

আরও পড়ুন : বানভাসিদের কান্নার রোল সিলেটের শাহী ঈদগাহ মাঠে

রাজধানীর উত্তরা এলাকায় কসাইয়ের কাজ করতে পাবনা থেকে এসেছেন ফরিদুল ইসলাম ও তার তিন সহযোগী। সার্বিক বিষয়ের বর্ণনা দিয়ে ফরিদুল ইসলাম বলেন, ঈদের দিন এবং পরের দিন কাজ পাওয়া যায় ঢাকায়। তাই আমরা প্রতি বছর ঈদে ঢাকায় চলে আসি, দুই দিন কাজ করে ভালোই আয় হয়। দুই দিনে ৪/৫ টাকা কাজ করা যায়। অনেকে আগের দিন এসে বাসায় বাসায় গিয়ে কসাইয়ের কাজ করার অফার দেয়, কসাইয়ের সঙ্কট থাকার কারণে অনেকেই রাজি হয়ে যায়। তখন রেট নিয়ে আলোচনা হয়। ওই কাজটা মূল হিসেবে ধরে আমরা কাজ করি। এছাড়া ঈদের পরের দিনেও কসাইয়ের কাজ পাওয়া যায়।  

লালু মিয়া ঢাকার বাড্ডায় একটি চায়ের দোকান পরিচালনা করেন। কোরবানি ঈদের সময়টাতে তিনি আশপাশের বাসাগুলোতে কোরবানির মাংসের কাজ করানোর জন্য কসাই সাপ্লাই দেন। এটা তার মৌসুমি ব্যবসা।  

আলাপকালে লালু মিয়া জানান, আশপাশে সব বাসাতে পরিচিত। কোরবানি ঈদের সময় তারা আমার কাছে কসাই চায়। আমারও কিছু মৌসুমি কসাইয়ের সঙ্গে পরিচয় আছে। তাদের বললে, তারা উত্তরবঙ্গ থেকে ঈদের আগের দিন চলে আসে, আমার এখানে থাকে। আমি আগেই ‘কন্ট্রাক্ট’ নিয়ে রাখি, সেই অনুযায়ী কসাই সাপ্লাইই দেই। এতে করে আমারও ব্যবসা হয়, আর মৌসুমি কসাইরাও কাজ পেয়ে যায়। ঈদের দুই দিনে তারা একেক জন ১০/১৫  এমনকি ২০ হাজার টাকাও ইনকাম করে নিয়ে যায়।   

আরও পড়ুন : সবার মধ্যে জেগে উঠুক ত্যাগের আদর্শ : রাষ্ট্রপতি

এমনই এক মৌসুমি কসাই সাজ্জাদ হোসেন বলেন, বিভিন্ন জন এলাকায় বিভিন্ন কাজ করে। আর কোরবানি ঈদের সময়টাতে আমরা দুই দিনের মৌসুমি কসাই হয়ে যাই। প্রতি গরু ১০ থেকে ২০ হাজার টাকায় বানানোর কাজ করি। কাজ শেষে নিজের টিমের মধ্যে টাকা ভাগ করে নেই। এতে করে প্রতিজনের ভাগে এই দুই দিনে মোটামুটি ১০/১৫ হাজার টাকা করে আয় হয়।

রাজধানীর মালিবাগ এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা মোজাম্মেল হক। তিনি এ বছর দুইটি গরু কোরবানি দিচ্ছন। তিনি বলেন, ঈদের আগের দিন ৪ জন লোক এসেছে আমার বাসায়, তারা রংপুর থেকে ঢাকায় কসাইয়ের কাজ করতে এসেছে। দুই গরু ২০ হাজার টাকায় তাদের সঙ্গে আমার চুক্তি হয়েছে। আমার কাজ শেষে তারা আরও অন্যান্য কাজ করবে। এরা মূলত মৌসুমি কসাই। ঈদের সময় শুধু ঢাকাতেই কাজ করতে আসে। বাকি সময় নিজ এলাকায় অন্যান্য পেশায় তারা নিয়োজিত থাকে। আমাদের ঢাকায় যেহেতু কসাই সঙ্কট থাকে ঈদের সময়, তাই মৌসুমি কসাই আসায় আমাদের উপকার হয়েছে। কোরবানির কাজ দ্রুত আমরা শেষ করতে পারছি। এছাড়া তারাও একটা মৌসুমি ব্যবসা থেকে ভালো মানের আয় করে নিচ্ছে এই দুই দিনে।

এএসএস/এনএফ