ঠিক মতো চামড়া সংরক্ষণ করতে পারলে ভালো দাম পাওয়া যাবে। বলছেন কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের নেতা টিপু সুলতান / ঢাকা পোস্ট

পবিত্র ঈদুল আজহায় কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহে প্রস্তুত পুরান ঢাকা লালবাগের পোস্তার প্রায় ১০০টি আড়ত। তাদের পাশাপাশি পাইকারি ব্যবসায়ী ও ছোটোখাটো আড়তদাররা চামড়া সংরক্ষণের প্রস্তুতি নিয়েছেন।

পোস্তার কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের নেতা বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব টিপু সুলতান ঢাকা পোস্টকে বলেন, কোরবানির কাঁচা চামড়া সংরক্ষণের জন্য প্রস্তুত পোস্তা। সবাই নিজ নিজ আড়তের ঘরগুলো পরিষ্কার করে প্রস্তুত রেখেছেন।

এদিকে, গত বছরের তুলনায় এবার প্রতি বস্তা লবণের দাম বেড়েছে ৪০০ টাকা। গত বছর এ সময় ৭৪ কেজি ওজনের এক বস্তা লবণের দাম ছিল সর্বোচ্চ ৭০০ টাকা। এবার তা ১০৭০ থেকে ১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে টিপু সুলতান বলেন, এখন পর্যন্ত লবণের সরবরাহ ঠিক আছে। তবে, সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা লবণের দামটা যেন কমিয়ে আনা হয়। পাশাপাশি কোরবানির তিনদিন এর সরবরাহ যেন ঠিক রাখা হয়। এতে চামড়া সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণে সুবিধা হবে।

স্থানীয় আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাধারণত কোরবানির পশুর চামড়া ছাড়ানোর চার থেকে আট ঘণ্টার মধ্যে লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করতে হয়। তা না হলে চামড়ায় পচন দরে। এ বিষয়ে টিপু সুলতান বলেন, যারা চামড়া সংগ্রহ করবেন, তাদের কাছে আমাদের একটাই প্রত্যাশা। তা হলো, পশু জবাইয়ের চার থেকে পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে চামড়া যেন আমাদের কাছে আনা হয়। এর বেশি সময় নিলে চামড়া নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

“এখন বেশ গরম পড়েছে। বৃষ্টিরও আশঙ্কা রয়েছে। গরমের কারণে দ্রুত চামড়া নষ্ট হয়ে যায়। অন্যদিকে, বৃষ্টি হলো চামড়ার ‘বিষ’। তারপরও আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। যদি আবহাওয়া অনুকূলে থাকে এবার চামড়ার ভালো ব্যবসা হবে।”

ঈদের দিন পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে চামড়া না আনার পরামর্শ দিয়ে কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের এ নেতা বলেন, ‘আমরা চাচ্ছি পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ঈদের দিন যেন কোনো চামড়ার গাড়ি না আসে। কারণ, কেউ যদি ওই দিক থেকে চামড়া আনতে শুরু করে তাহলে পোস্তায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে তা নষ্ট হয়ে যাবে। যদি পদ্মা সেতু দিয়ে চামড়া আসতে দেওয়া হয় তাহলে বরিশাল, খুলনা ও যশোর অঞ্চলের মানুষও চামড়া নিয়ে ঢাকায় আসতে শুরু করবেন। এতে রাস্তাতেই ওই চামড়া নষ্ট হয়ে যাবে। কোনো মূল্য থাকবে না।’

চামড়া সংরক্ষণের উপায় সম্পর্কে তিনি বলেন, নিজ নিজ এলাকায় চামড়া সংরক্ষণের পর সঙ্গে সঙ্গে লবণ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। লবণ দিলে চামড়া নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। ওই চামড়া ঈদের দুই/তিনদিন পর আমাদের কাছে আনলে নির্ধারিত মূল্যে তা কিনে নেওয়া হবে। আমরা চাই সরকার এ বিষয়ে দৃষ্টি দেবে। এতে চামড়া নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।

গত বছর ছিল না চামড়ার মূল্য। ক্রেতার অভাবে এভাবেই স্তূপ করে ফেলে রাখা হয় কোরবানির পশুর চামড়া / ফাইল ছবি

এবার সরকার নির্ধারিত দাম অনুযায়ী ঢাকায় লবণযুক্ত গরুর চামড়া প্রতি বর্গফুট ৪৭ থেকে ৫২ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৪০ থেকে ৪৪ টাকা করা হয়েছে। এছাড়া খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ঢাকায় ১৮ থেকে ২০ টাকা, বকরির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১২ থেকে ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ঢাকার বাইরেও বকরি ও খাসির চামড়ার দর একই থাকবে।

চামড়ার দাম প্রসঙ্গে পোস্তার এ ব্যবসায়ী বলেন, সরকার ইতোমধ্যে চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। গতবারের চেয়ে এবার তা ৫ থেকে ১০ শতাংশ বাড়তি। আশা করি, এবার চামড়া ব্যবসায় সবাই লাভবান হবেন।

‘এবার এক লাখ টাকার গরু চামড়া সর্বোচ্চ ৫০০ টাকায় বিক্রি হবে। ছোট গরুর চামড়া ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, মাঝারি গরুর চামড়া ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা, বড় গরুর চামড়া এক হাজার থেকে ১১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হবে’— আশা প্রকাশ করেন টিপু সুলতান।

মৌসুমি ব্যবসায়ীদের প্রতি আপনার পরামর্শ কী হবে— জানতে চাইলে তিনি বলেন, যত দ্রুত সম্ভব চামড়া লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করতে হবে। এতে চামড়ার মান ভালো থাকবে। চামড়া ভালো থাকলে ভালো দামও পাওয়া যাবে। আর যদি চামড়া সংরক্ষণ করতে দেরি হয় তাহলে তা নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। ওই চামড়া তখন বিক্রি করা যাবে না। আমাদের একটাই পরামর্শ, পশু জবাইয়ের চার থেকে পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে লবণ দিয়ে চামড়া সংরক্ষণ করতে হবে। এরপর আপনি দু-চারদিন অপেক্ষা করনে। চামড়াও ভালো থাকবে, দামও পাবেন। আর দেরি করলে শুধু আপনার লোকসান হবে না, নষ্ট হবে দেশীয় সম্পদ। এতে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

এসআই/এমএআর/