কোলাহল কমেছে রাজধানীতে, রাস্তায় গণপরিবহন সংকট
আর মাত্র একদিন। তারপরই যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে পালিত হবে ঈদুল আজহা। তাই তো ঈদ সামনে রেখে নাড়ির টানে রাজধানী ছাড়ছে মানুষ। ফলে রাজধানীর বাস টার্মিনাল ও ট্রেন স্টেশনে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে।
অন্যদিকে রাজধানীর কোরবানির পশুর হাটগুলোতে চলছে শেষ মুহূর্তের বেচাকেনা। এর মধ্যেই ধীরে ধীরে নীরব হয়ে আসছে রাজধানী। নগরের ব্যস্ততম সড়কগুলোতে কমেছে মানুষের আনাগোনা। রাস্তার পাশে থাকা অধিকাংশ দোকানপাট ও রেস্টুরেন্ট এখন বন্ধ।
বিজ্ঞাপন
সড়কে কমেছে পরিবহনের সংখ্যাও। যারা নানা প্রয়োজনে বাইরে বের হয়েছেন তারা দীর্ঘসময় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকেও গণপরিবহন পাচ্ছেন না। মাঝে মধ্যে কিছু গণপরিবহন পাওয়া গেলেও সেগুলো এখন বাস ও ট্রেন স্টেশনমুখী যাত্রী তুলছে। স্বল্প দূরত্বের যাত্রী নিতে তাদের মধ্যে অনীহা দেখা গেছে।
শুক্রবার (৮ জুলাই) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত রাজধানীর ফার্মগেট, খামারবাড়ি, বিজয় সরণী, গুলশান, রামপুরা ও নতুন বাজার এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।
সরেজমিনে এসব এলাকায় দেখা যায়, সড়কে মানুষের উপস্থিতি তুলনামূলক কম হলেও একদম ফাঁকা নয়। যানবাহনের সংখ্যাও স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক কম। রিকশা, অটোরিকশা ও ব্যক্তিগত পরিবহনের সংখ্যাই বেশি। গণপরিবহনের সংখ্যাও স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেক কম। মাঝে মধ্যে কয়েকটির দেখা মেললেও সেগুলো বেশি দূরত্বের যাত্রী না হলে নিচ্ছে না।
গণপরিবহন কম থাকায় মানুষকে দীর্ঘসময় রাস্তায় অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। এই সুযোগে সিএনজি ও রিকশাচালকরা বেশি ভাড়া আদায় করছেন বলে অপেক্ষমাণ যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন।
দুপুরে রাজধানীর নতুন বাজারে পরিবার নিয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন গোলাম হোসেন। তিনি কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে যাবেন ঈদের ট্রেন ধরতে। কিন্তু ৩০ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকার পরও বাস পাননি। তিনি বলেন, ট্রেন ধরার জন্য বাসের অপেক্ষা করছি। ৩০ মিনিট ধরে অপেক্ষা করেও বাস পেলাম না। ঈদের সময় প্রতিবারই এমন হয়।
সময় মতো ট্রেন ধরতে শেষে সিএনজি নিয়ে রওনা হন গোলাম হোসেন, তাও স্বাভাবিকের চেয়ে ৩০-৪০ টাকা বেশি ভাড়া দিয়ে।
রামপুরা ব্রিজে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন মো. নাজিম, যাবেন বিজয়নগর। কিন্তু স্বল্প দূরত্ব হওয়ায় যাত্রী তুলছে না বাসগুলোও।
তিনি বলেন, আকাশ পরিবহনের দুটি বাসে উঠেছিলাম। বিজয়নগরের কথা শুনে নামিয়ে দিয়েছে। তারা বলে সদরঘাটের যাত্রী ছাড়া নেবে না। কিন্তু আকাশ লোকাল বাস। তারা সদরঘাট থেকে উত্তরা পর্যন্ত সব স্টপেজের যাত্রী তোলে বাসে। এখন ঈদের সময় বলে নিচ্ছে না।
এ বিষয়ে আকাশ পরিবহনের একটি বাসের হেলপার মো. লিটন বলেন, বাস সদরঘাট থেকে উত্তরা পর্যন্ত যায়। আমরা যাওয়ার সময় সব স্টপেজের যাত্রী উঠাই। কিন্তু ঈদের সময় বলে উত্তরা থেকে যাওয়ার সময় শুধু সদরঘাটের যাত্রী উঠাই কিছু বাড়তি টাকার জন্য। এখন তো ঈদের সময় আমাদেরও তো পরিবার আছে, ঈদ করা লাগবে। ভাইঙ্গা ভাইঙ্গা সময় বেশি লাগে, টাকাও কম উঠে।
এদিকে রাজধানী ধীরে ধীরে ফাঁকা হয়ে আসায় ফুরফুরে মেজাজে আছেন রিকশা ও সিএনজি অটোরিকশা চালকরা। তারা বলছেন, ঈদের সময় অনেকেই বাড়ি যান না। তখন রিকশা আর সিএনজি যাতায়াতের একমাত্র ভরসা। তাই ঈদের সময় তাদেরও ভালো আয় হয়।
কারওয়ান বাজারে যাত্রী নামিয়ে আবার যাত্রী নেওয়ার জন্য অপেক্ষায় থাকা রিকশাচালক শাজাহান বলেন, ঈদের সময় অনেক রিকশাচালক গ্রামে যায় না। কারণ এই সময় বেশি খেপও মারা যায়, টাকাও ভালো আয় হয়। কারণ রাস্তাঘাট থাকে পুরা ফাঁকা। আজ তো রাস্তায় যানজট কম। রিকশা চালাতে এখন খুব মজা লাগে।
এমএসি/এসএসএইচ