ঈদুল আজহার বাকি মাত্র এক দিন। এ ঈদকে ঘিরে জমে উঠেছে রাজধানী ঢাকার সবচেয়ে বড় স্থায়ী গাবতলী পশুর হাট। এবার হাটে ছোট ও মাঝারি গরুর ক্রেতাই বেশি। এ জন্য যেসব ব্যাপারী বেশি লাভের আশায় বড় গরু এনেছিলেন তারা পড়েছেন বিপাকে। লাভ কম হলেও ঈদের আগের রাতে সব গরু বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা তাদের। 

ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত রমজানের ঈদ থেকেই বাড়তি গরুর দাম। কেনায় বাড়তি দাম পড়েছে। তাই বিক্রিও বেশি দামে করতে হচ্ছে। তবে ক্রেতাদের বরাবর আকর্ষণে থাকে ছোট সাইজের গরু। এবার মাঝারি সাইজের গরুতে বেড়েছে আকর্ষণ।

শুক্রবার (৮ জুলাই) গাবতলী স্থায়ী পশুর হাট ঘুরে দেখা যায়, জুম্মা নামাজের পর ক্রেতার ঢল নামে হাটে। মূল হাট ছাপিয়ে অস্থায়ী সেড বেড়িবাঁধ সড়কেও বেপারিরা গরু নিয়ে দাঁড়িয়েছেন।

সেখানে কথা হয় মেহেরপুরের গোমের আলীর সঙ্গে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, এবার তিন বছর বয়সী ১৪টা গরু এনেছিলাম। ১৩টা বিক্রি করে দিয়েছি। একটাই বড় গরু ছিল, সেটাই রয়ে গেছে। গরুর নাম রাখা হয়েছে মেহেরপুরের বাদশা।

আরও পড়ুন : মুরগিতে ব্যর্থ, গরুর খামারে স্বপ্নজয় পলাশের

গোমের আলী বলেন, গত ৪ জুলাই ঢাকায় আসি। ১৩ টা গরু ছিল ছোট, সেগুলো গতকাল লাভেই বিক্রি করি। তবে বড় গরুটা আর বিক্রি করা যাচ্ছে না। প্রথমে দাম চেয়েছিলাম ১০ লাখ। সেখান থেকে নেমে এখন সাড়ে পাঁচ লাখ চাচ্ছি, তাও ক্রেতার মন গলছে না। 

অন্যদিকে সিরাজগঞ্জ থেকে আসা সামিদুল হক বলেন, ৪২টা গরু এনেছিলাম। বেশিরভাগই দেশি গরু। ৩০টা দেশি গরু বিক্রি করে দিয়েছি। শাহীওয়াল জাতের ১০টা গরু এখনও রয়ে গেছে। সবচেয়ে বড় ক্রস ২টা জোড়া গরুর দাম ৬ লাখ পর্যন্ত উঠেছে। আট লাখে বিক্রি করব। 

মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর থেকে নাছির উদ্দিন এনেছেন দুটি গরু। নিজের ঘরে পালিত দুটির মধ্যে একটি হাটের অন্যতম বড় গরু। ১১০০ কেজির বেশি ওজনের ৩৯ মাসের এ গরুর দর্শনার্থীই বেশি। শুরুতে দাম হাঁকিয়েছিলেন ১৫ লাখ।

তিনি বলেন, বাজার পরিস্থিতি দেখছি ক্রেতাদের আগ্রহ ছোট ও মাঝারি গরুতে। আমার এই বড় গরু বিক্রিতে বেগ পাচ্ছি। সুন্দর বড় এই গরু কিনতে ক্রেতা যা বলছে তাতে লাভ হচ্ছে না। যেহেতু ঘরের গরু। একটু লাভেই বিক্রি করে বাড়ি ফেরার আশা করছি। 

অন্যদিকে রাজবাড়ি থেকে দুটি ক্রস জাতের গরু এনেছেন সুচিন্ত কুমার সেন। তিনি বলেন, সাড়ে তিন বছরের পাকিস্তানি ক্রস জাতের গরু দুটির দাম হাঁকিয়েছি ১০ লাখ। ক্রেতারা সাত লাখ পর্যন্ত জোড়া বলেছে। আট লাখ হলে বিক্রি করব।

তবে নাটোর থেকে আসা আরেক বেপারির অভিযোগ করে বলেন, এবারও লাভের মুখ দেখব না। বড় গরুর বেপারিদের বিপদ। বড় গরুর ভালো দাম পাচ্ছি না। দামদর লাভের হলে কোন বিক্রেতা গরু আটকে রাখে? কালকের দিনটাই বাকি। আশায় আছি বিক্রি হবে।

২৬টা গরু নিয়ে জামালপুরের মাদারগঞ্জ থেকে এসেছেন ব্যাপারী মেহেরুল। তিনি বলেন, ‘লস আর লস! লসের ব্যবসা করতে করতে জানডা শ্যাষ! দেড় লাখ টাকার গরুর দাম সোয়া লাখের উপরে উঠছে না। ক্রেতারা আরেকটু সদয় হলে অল্প লাভে সব গরু বিক্রি করে দেব। ২৬টার মধ্যে মাত্র একটা গরু বিক্রি করতে পারছি।’ 

তবে ক্রেতাদের অভিযোগ, এবার গরুর দাম বেশি। আনিসুর রহমান নামে এক ক্রেতা বলেন,  বড় গরু কিনব বলে হাটে এসেছিলাম। কিন্তু দামের সঙ্গে সামর্থ্যের অনেক ফারাক। এ কারণে বড় গরু বাদ দিয়ে নজর দিয়েছি মাঝারিতে। কিন্তু সেখানেও দাম যে খুব কমে মিলছে তা না। দুই আড়াই লাখ টাকা ছাড়া ভালো গরু পাওয়া যাচ্ছে না। 

ছোট গরু কিনে ফেরার পথে কথা হয় আরেক ক্রেতার সঙ্গে। আব্দুর রহমান নামে এ ক্রেতা বলেন, ৯৫ হাজার টাকায় কিনেছি। ওজন আনুমানিক ৫ মণ হবে। মাঝারি গরুর দামটাও বেশি। আমার মতো ক্রেতাদের জন্য ছোট গরুই বেশি ভালো। এ হাটে ৫৫ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে গরু মিলছে।

জেইউ/এসকেডি