আর চাপ দিয়েন না, ভেতরে জায়গা নেই
ঈদযাত্রার তৃতীয় দিন চাঁপাইনবাবগঞ্জগামী বনলতা এক্সপ্রেস কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে। কিন্তু ট্রেনটি কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে আসে দুপুর ২টার পর।
ততক্ষণে রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জগামী যাত্রীরা জড়ো হয়েছেন পাঁচ নম্বর প্লাটফর্মে। কারো হাতে সিটের টিকিট আবার কারো হাতে স্ট্যান্ডিং টিকিট। ট্রেনটি প্লাটফর্মে দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীরা হুড়মুড় করে ট্রেনে উঠতে থাকেন।
বিজ্ঞাপন
কিছুক্ষণের মধ্যেই বনলতা এক্সপ্রেস যাত্রীতে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। বলতে গেলে ভেতরে তিল পরিমাণ জায়গা নেই। অনেকেই ভেতরে জায়গা না পেয়ে ঝুলে পড়েন ট্রেনের বগির দরজায়। এরপরও অনেক যাত্রী ট্রেনে ওঠার চেষ্টা করছেন, অপেক্ষায় রয়েছেন সুযোগের।
এরইমধ্যে ট্রেনের বেশ কয়েকটি বগিতে চিৎকার-চেঁচামেচির আওয়াজ পাওয়া যায়। পরে বগিতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভেতরে প্রচণ্ড গরমের কারণে হাঁসফাঁস অবস্থা। কারো শিশু চিৎকার করছিল, আবার কেউ ভিড়ের কারণে নিজের সিটে যেতে না পারায় সামনে জটলা সৃষ্টি করা লোকজনদের সঙ্গে ঝগড়া করছিলেন রাস্তা দেওয়ার জন্য।
আরও পড়ুন : মোটরসাইকেলের মুভমেন্ট পাস পাওয়া যাবে কোথায়, কীভাবে নেবেন
বৃহস্পতিবার ঘড়িতে তখন দুপুর ২টা ৪০ মিনিট। বনলতা এক্সপ্রেস যখন হুইসেল দেয়, ঠিক তখনই শুরু হয় আসল যুদ্ধ। এতক্ষণ যারা ট্রেনে উঠতে পারেননি, তারা তখন ট্রেনের দরজায় ঝুলে পড়েন।
তখন ভেতর থেকে অনেকে আবার চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘আর চাপ দিয়েন না, ভেতরে জায়গা নেই’। তখন দরজায় ঝুলে থাকা ব্যক্তি চিৎকার করে বলতে থাকেন, ভাই আমাকে ভেতরে যেতে হবে। আমার সিট আছে। ভেতরে যেতে দিন।
এরইমধ্যে দুয়েকজন যাত্রীক দেখা যায় ট্রেন ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ছাদে ওঠার চেষ্টা করছেন। তবে নিরাপত্তাকর্মীরা তাদের লাঠিপেটা করে নামিয়ে দেন। অনেককে দেখা যায় প্ল্যাটফর্ম ত্যাগ করার আগ পর্যন্ত বনলতার পেছনে পেছনে ছুটতে। শেষ মুহূর্তে কোনোমতে ট্রেনে ঝুলে পড়েন তারা।
ট্রেন ছাড়ার আগ মুহূর্তে চাঁপাইনবাবগঞ্জগামী যাত্রী ইমরান খান ট্রেনের ভেতর থেকে জানালা দিয়ে ঢাকা পোস্টকে বলেন, কোনোমতে নিজের সিটে এসে পৌঁছেছি। ভেতরে পা রাখার জায়গা নেই। এত মানুষ, ভাবা যায় না। আগে যেসব মানুষ ট্রেনের ছাদে করে যেত তারা এখন ভেতরে চলে এসেছে। পরিস্থিতি ভয়াবহ।
অন্যদিকে ট্রেনের দরজায় ঝুলছিলেন মো. মিলন। ট্রেন ছাড়ার আগ মুহূর্তে তিনি বলেন, ভেতরে এত মানুষ, কী আর বলব। সিটের টিকিট কেটেও ভেতরে যেতে না পেরে এখন ঝুলছি।
শুধু বনলতাই নয়, দুপুরের পর থেকে আরও কয়েকটি ট্রেনের যাত্রা বিলম্বিত হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জগামী রাজশাহী কমিউটার ১২টা ২০ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলেও ছেড়ে গেছে ৩ টার দিকে। রাজশাহীগামী সিল্ক সিটি ২টা ৪৫ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সাড়ে তিনটা পর্যন্ত ছাড়েনি।
কমলাপরের স্টেশন ম্যানেজার মো. মাসুদ সারওয়ার বলেন, বনলতা এক্সপ্রেস ও রাজশাহী কমিউটার ট্রেন দেরিতে আসায় যাত্রা দেরি হয়েছে। সিল্ক সিটি প্ল্যাটফর্মে দেরিতে এসেছে। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি ট্রেনের শিডিউল ধরে রাখার জন্য। কিন্তু ট্রেন যদি দেরিতে আসে তাহলে তো আমরা আর কিছু করতে পারি না।
এমএসি/আরএইচ