রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে সংঘবদ্ধ মলম পার্টি ও ছিনতাইকারী চক্রের ২৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে এলিট ফোর্স র‍্যাব।

এসময় তাদের কাছ থেকে অজ্ঞান ও ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত বিষাক্ত মলম, নগদ টাকা ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।

মঙ্গলবার (২৮ জুন) দুপুরে র‍্যাব-৩ এর স্টাফ অফিসার (অপস্ ও ইন্ট শাখা) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বীণা রানী দাস এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, প্রতিদিন অজ্ঞানপার্টি ও ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে সর্বস্ব হারিয়ে জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে থাকেন অসংখ্য যাত্রী-পথচারী। এসব ভুক্তভোগীদের বেশির ভাগই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারস্থ হন না। যার ফলে সংঘবদ্ধ অজ্ঞানপার্টি ও ছিনতাইকারী চক্রের তৎপরতা দিন দিন বেপরোয়াভাবে বাড়ছে। এই চক্রের সদস্যদের প্রায় সবাই মাদকাসক্ত।

সাম্প্রতিককালে অজ্ঞানপার্টি ও ছিনতাইকারী চক্রের তৎপরতা বাড়ার বিষয়টি আমলে নিয়ে র‍্যাব-৩ গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। একটি দল রাজধানীর খিলগাঁও, পল্টন, মুগদা, শাহজাহানপুর, শাহবাগ, মতিঝিল এবং হাতিরঝিল থানাধীন এলাকায় সোমবার (২৭ জুন) রাতে অভিযান চালিয়ে এই চক্রের ২৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তার অজ্ঞানপার্টি ও ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা হলেন, পাপ্পু (২৮), জীবন (২২), সজীব (২৬), শহিদ শেখ (৩০), আলাউদ্দিন (৪২), শফিক (১৮), আব্দুল হক হৃদয় (২২), রানা (১৮), অন্তর (২৬), মেহেদী হাসান (২০), শাকিল (২৫), রাব্বী আপন (২০), আলমগীর (৪৫), ফাইম(২২), মামুন শেখ (৪২), সজল (২৬), ফেরদৌস (৩২), রুবেল মাতবর (৩৪), হানিফ ব্যাপারী (২৯), জাকির হোসেন (২৪), সোহেল (১৯), মাহাবুব ইসলাম রিয়ন (৪২), আব্দুল মান্নান (১৯), হাবীব মিয়া(২২), হৃদয় ওরফে মুজিবর (১৯) এবং রিফাত উদ্দিন চৌধুরী ওরফে দুখু (২৪)।

তাদের কাছ থেকে ৩টি এন্টিকাটার, ১১টি ব্লেড, ১০টি বিষাক্ত মলম, ১টি চাকু, ৯টি মোবাইল এবং নগদ ৩ হাজার ২৯০ টাকা উদ্ধার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন এলাকায় অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা ঘোরাফেরা করে। সহজ সরল যাত্রীদের টার্গেট করে ডাব, কোমল পানীয় কিংবা পানির সঙ্গে বিষাক্ত চেতনানাশক ওষুধ মিশিয়ে খাওয়ানোর চেষ্টা করে।

আবার কখনো বাস ও ট্রেনে চড়ে যাত্রীদের পাশে বসে নাকের কাছে চেতনানাশক ওষুধে ভেজানো রুমাল দিয়ে তাদের অজ্ঞান করে থাকে। বিষাক্ত পানীয় সেবন করার বা বিষাক্ত স্প্রের ঘ্রাণ নেওয়ার পর যাত্রী অজ্ঞান হয়ে পড়লে তার সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে চক্রের সদস্যরা ভিড়ের মধ্যে মিশে যান।

এছাড়া কখনো ভিড়ের মধ্যে যাত্রীদের চোখে-মুখে বিষাক্ত মলম বা মরিচের গুড়া বা বিষাক্ত স্প্রে করে তাদের সর্বস্ব কেড়ে নেয়। চেতনানাশকের পরিমাণ বেশি হলে কোনো কোনো ভুক্তভোগীর জ্ঞান ফিরতে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত লেগে যায়। ব্যক্তি শারীরিকভাবে দুর্বল ও বয়স্ক হলে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ারও আশঙ্কা থাকে।

অন্যদিকে ভুক্তভোগীর চোখে-মুখে বিষাক্ত মলম লাগানোর ফলে তার দৃষ্টিশক্তি চিরতরে হারানোর সম্ভাবনা থেকে যায়। এসব অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা নির্বিঘ্নে তাদের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।

অন্যদিকে সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারীরা রাজধানীর বিভিন্ন অলি গলিতে উৎ পেতে থাকে। সুযোগ বুঝে তারা পথচারী, রিকশা আরোহী, যানজটে থাকা সিএনজি, অটোরিকশার যাত্রীদের ধারালো অস্ত্র প্রদর্শন করে সর্বস্ব লুটে নেয়। সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত জনশূন্য সড়ক, লঞ্চঘাট, বাসস্ট্যান্ড, রেল স্টেশন এলাকায় ছিনতাইকারীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। ছিনতাইকাজে বাধা দিলে তারা নিরীহ পথচারীদের প্রাণঘাতী আঘাত করতেও দ্বিধা করে না।

খিলগাঁও, মালিবাগ রেল গেইট, দৈনিক বাংলা মোড়, পীরজঙ্গি মাজার ক্রসিং, কমলাপুর বটতলা, মতিঝিল কালভার্ট রোড, নাসিরের টেক হাতিরঝিল, শাহবাগ, গুলবাগ, রাজউক ক্রসিং, ইউবিএল ক্রসিং পল্টন মোড়, গোলাপ শাহর মাজার ক্রসিং, হাইকোর্ট ক্রসিং, আব্দুল গণি রোড, মানিকনগর স্টেডিয়ামের সামনে, নন্দীপাড়া ব্রিজ, বাসাবো ক্রসিং এলাকায় সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত ছিনতাইকারীদের তৎপরতা বেশি। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

জেইউ/এমএইচএস