দুই বছর পর বাংলাদেশ-ভারত রুটে সৌহার্দ্য বাস চালু
দুই বছর তিন মাস বন্ধ থাকার পর আবারও ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বাস চলাচল শুরু হয়েছে। সোমবার (২৭ জুন) আন্তর্জাতিক এ পরিষেবাটি চালু হয়।
প্রথম যাত্রাতে কলকাতা থেকে ছেড়ে আসা বাস পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে পৌঁছাবে ঢাকায়। এ দিন সকালে কলকাতা থেকে ছেড়ে আসা শ্যামলী পরিবহনটি পুলিশি নিরাপত্তায় রাত পৌনে ৮টায় খুলনা নিউ মার্কেট আসলে ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানানো হয়। বাসটি ঢাকার উদ্দেশ্যে ৮টা ২০ মিনিটে ছেড়ে যায়। দীর্ঘদিন পর কলকাতা-খুলনা-ঢাকা রুটে সরাসরি বাস চলাচল শুরু হওয়ায় খুশি দুই দেশের যাত্রীরা।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, ঢাকা-কলকাতা-ঢাকার মধ্যে সরকারিভাবে যাত্রীবাহী বাস পরিষেবা চালু করেছিল বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত পরিবহন সংস্থা বিআরটিসি ও পশ্চিমবঙ্গের রাষ্ট্রায়ত্ত পরিবহন সংস্থা ডব্লিউবিএসটিসি। ভারত ও বাংলাদেশ সরকার দুই রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থাকে প্রতি সপ্তাহে তিন দিন করে ছয় দিন যাত্রীবাহী বাস চলাচলের অনুমতি দিয়েছিল। সে অনুযায়ী ঢাকা থেকে প্রতি সপ্তাহে শনি, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে কলকাতা এবং রোববার বাদে বাকি তিন দিন কলকাতা থেকে ঢাকা বাস চলছিল।
তবে করোনার কারণে ২০২০ সালের ১২ মার্চ থেকে ঢাকা-কলকাতা-ঢাকা বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর ১০ জুন থেকে ঢাকা-কলকাতা বাস পরিষেবা আবার চালু করেছে বিআরটিসি। তবে রাষ্ট্রীয় পরিবহন করপোরেশনের অনুমতি না মেলায় কলকাতা থেকে ঢাকা পথে বাস চালু বিলম্ব হচ্ছিল। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের কাছ থেকে অনুমতি পাওয়ার পরই সোমবার থেকে কলকাতা-ঢাকা যাত্রীবাহী বাসের চলাচল আবার শুরু হয়।
শ্যামলী পরিবহনের দক্ষিণবঙ্গের বিভাগীয় ইনচার্জ ইফতেখার হোসেন বলেন, সোমবার সকাল সাড়ে ৭টায় কলকাতা করুণাময় বাস টার্মিনাল থেকে ২৮ জন যাত্রী নিয়ে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। বাস সার্ভিসটি কলকাতা থেকে প্রতি সোমবার, বুধবার ও শুক্রবার ছেড়ে বেনাপোল বন্দর হয়ে খুলনা-ঢাকায় যাবে। এছাড়া বাসটি ঢাকা থেকে ছেড়ে প্রতি শনিবার, মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিবার খুলনা হয়ে বেনাপোল বন্দর দিয়ে কলকাতা যাবে। প্রথমদিন উদ্বোধনসহ নানা কারণে বিভিন্ন স্থানে থামতে হয়েছে। যে কারণে সময়ও বেশি লেগেছে। তবে পরবর্তী দিন থেকে সিডিউল মানা হবে।
তিনি আরও বলেন, কলকাতা থেকে ঢাকা পর্যন্ত যাত্রীদের কাছ থেকে ১ হাজার ৪০০ রুপি নেওয়া হচ্ছে। ঢাকা থেকে কলকাতা পর্যন্ত ১ হাজার ৯০০ টাকা ভাড়া নেওয়া হবে।
শ্যামলী পরিবহনের কর্ণধার অবনী কুমার ঘোষ বলেন, দীর্ঘদিন পর সড়ক পথে বাংলাদেশে আসতে পেরে খুব ভালো লাগছে। করোনার কারণে ২০২০ সালের ১২ মার্চ এই সার্ভিসটি বন্ধ হয়ে যায়। খুলনাবাসী এবং সাংবাদিকদের অনুপ্রেরণায় সার্ভিসটি আবার চালু করেছি। খুলনার সাংবাদিক এবং সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক কলকাতা গিয়েছিলেন। সেই সময়ে এই সার্ভিসটি চালুর আশ্বাস দিয়েছিলাম।
তিনি বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় সব জিনিষের দাম বেড়ে গেছে। মানুষের আয় কমে গেছে। নূন্যতম ভাড়ায় খুলনার মানুষ যেন কলকাতায় যেতে পারে সেদিকে দৃষ্টি রাখব। সবেমাত্র সার্ভিসটি চালু হয়েছে। সামনে ঈদের উৎসব ও পূজায় যাত্রীদের সংখ্যা বাড়তে পারে।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন পরে সার্ভিসটি চালু করেছি। মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে যাত্রা করছেন। প্রথমদিন সর্বমোট ২৮ জন যাত্রী নিয়ে বেনাপোল বন্দর হয়ে খুলনা এসেছি। এখন ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হবো। পরবর্তীতে প্রতিদিন কলকাতা থেকে বেনাপোল হয়ে বাংলাদেশে তিনটি গাড়ি চলবে। হয়তো সবগুলো খুলনা হয়ে যেতে পারবে না। তবে খুলনা-কলকাতা সরাসরি একটি বাস সার্ভিস চালু করা হবে।
খুলনা প্রেসক্লাবের সভাপতি এস এম নজরুল ইসলাম বলেন, এটা খুলনাবাসীর জন্য একটি আনন্দঘন মুহূর্ত। শ্যামলী পরিবহনের মাধ্যমে সরাসরি খুলনা থেকে অল্প সময়ের মধ্যে কোলকাতায় পৌঁছে যাব। ঈদের সময়ে আরও বেশি যাত্রী হবে। গাড়ির সংখ্যা বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছি, যেন মানুষ এ পরিবহনের সঙ্গে যেন সবাই মন খুলে সম্পৃক্ত থাকতে পারে।
কোলকাতার বাসিন্দা সীমা দাস বলেন, এই প্রথম আমি বাংলাদেশে এসেছি। করোনার কারণে ২ বছর তিন মাস পর শ্যামলী নতুন করে চালু হয়েছে। আমাদের মেলবন্ধন ট্রেন, বাস, বিমানের ফ্লাইটে হয়। তার মধ্যে কোন একটি বাহনের পরিষেবা বন্ধ হয়ে গেলে দুদেশের পক্ষে অনেক অসুবিধা হয়ে যায়। এটা দুই দেশের জন্য অনেক আনন্দের বিষয়।
কলকাতার বারাসাতের বাসিন্দা রাজন্দ্র কর্মকার বলেন, সার্ভিসটি ভালো লেগেছে। সরাসরি বাসে আসায় কোন জটিলতা নেই। এক্ষেত্রে ইমিগ্রেশনের কাজ বাসের লোকজন করে দিয়েছে।
কলকাতার ফ্যাশন ডিজাইনার ইরাণী মিত্র বলেন, ঢাকায় একটি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য এসেছি। বাস সার্ভিসটি ছিল না। দুই বছর বন্ধ থাকার পর সার্ভিসটি চালু হয়েছে। বন্ধের পর প্রথম যাত্রী এবং অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে যেতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। একইসঙ্গে পদ্মা সেতু দিয়ে প্রথম যাত্রা করব। এটি একটি উপরি পাওনা। এটিও একটি অ্যাওয়ার্ড আমার কাছে। বাস কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা খুবই ভালো। তাদের সার্ভিস ও ব্যবহারে আমি আপ্লুত।
মোহাম্মদ মিলন/আইএসএইচ