ঘাটে মারা যাবে না আর কোনো রোগী
২০১৭ সালে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত (ব্রেন স্ট্রোক) কারণে বাবাকে হারান মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান। ‘আরেকটু আগে আসলে হয়তো রোগীকে বাঁচানো যেত’— বলেছিলেন চিকিৎসক। ওই কথাগুলো মনে হলে এখনও হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। স্রোতস্বিনী পদ্মার ওপর একটু ক্ষোভ থাকলেও এখন কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছেন তিনি। কারণ, তার মতো আর কাউকে প্রিয়জনকে হারাতে হবে না। চোখের সামনে মৃত্যুযন্ত্রণায় ছটফট করতে হবে না কোনো রোগীকে। আগে যেখানে পদ্মা পার হতে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা লাগত, এখন মাত্র ছয় থেকে আট মিনিটে পার হওয়া যাবে প্রমত্ত পদ্মা।
ফলে সময় যেমন বাঁচবে, তেমনি বাঁচবে মুমূর্ষু রোগীর প্রাণ। সেদিনের স্মৃতিচারণ করে মনিরুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এতদিন আমরা এক নরকযন্ত্রণার মধ্যে ছিলাম। শুধুমাত্র পদ্মা সেতু না হওয়ার কারণে। লঞ্চ, ট্রলার আর ফেরি ছিল উত্তাল পদ্মা পার হওয়ার বাহন। অ্যাম্বুলেন্সে মুমূর্ষু কোনো রোগীকে ঢাকায় নিতে ফেরির কোনো বিকল্প ছিল না। আর সেই ফেরি পেতে ভোগান্তির শেষ ছিল না।
বিজ্ঞাপন
‘ফেরি পেলেও নির্ধারিত সময়ে ছাড়া বা সময় মতো অপর পাড়ে পৌঁছানো যেত না। বাবার ক্ষেত্রেও এমনটি ঘটে। তাকে দ্রুত ঢাকায় নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু পদ্মা পার হতেই আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা চলে যায়। অবশেষে ঢাকার হাসপাতালে যখন পৌঁছাই তখন সব শেষ। চিকিৎসক বলেন, আর একটু আগে আসলে তাকে বাঁচানো যেত।’ বাবাকে বাঁচাতে না পারার সেই বেদনা এখনও তাকে কুরে কুরে খায়।
‘শুধু আমার বাবা নয়, কাঁঠালবাগান ঘাটে প্রায়ই এমন বিষাদের ঘটনা ঘটত। নদী পারাপারের অপেক্ষায় থাকা রোগীরা মারা যেত। এখন সেতু হওয়ায় শুধু মূল্যবান জীবনই বাঁচবে না, এ অঞ্চলের মানুষ অর্থনৈতিকভাবেও লাভবান হবেন’— বলেন মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান।
আগামীকাল শনিবার (২৫ জুন) আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হচ্ছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলবাসীর স্বপ্নের ‘পদ্মা সেতু’। একই সঙ্গে অবসান ঘটবে পদ্মার ওপারের মানুষের দীর্ঘদিনের যন্ত্রণা আর বঞ্চনা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পদ্মা সেতু চালু হলে দীর্ঘদিন ধরে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত ২১ জেলায় ঘটবে ‘স্বাস্থ্য বিপ্লব’।
শুধু পদ্মার দক্ষিণ প্রান্তে নয় উত্তর পাড়েও রোগী নিয়ে ভোগান্তি কম ছিল না। ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা হয় এমন এক ভুক্তভোগী জাকির হোসেনের সঙ্গে। স্থানীয় এ ব্যবসায়ী বলেন, দেশে প্রথম যখন করোনা মহামারি দেখা দেয় তখন শ্বশুরকে নিয়ে ঢাকায় চিকিৎসা করাতে যাই। রোজার সময় রোগীকে এক সপ্তাহ হাসপাতালে রেখে মোটামুটি সুস্থ করে তোলা হয়। এদিকে, করোনা সংক্রমণের ভয়। বয়স্ক রোগী, করোনায় আক্রান্ত হলে নিস্তার নাই। অনেক কষ্টে একটি অ্যাম্বুলেন্স জোগাড় করে তাকে নিয়ে মাওয়া ঘাটে আসি। কিন্তু ঘাটে এসে দেখি ফেরি নাই। লঞ্চও বন্ধ। কী করব, কোনা উপায় না পেয়ে বয়স্ক শ্বশুরকে আবার ঢাকায় নিয়ে আসি। কোনো আত্মীয় না থাকায় তাকে আবার ঢাকার একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি করাই। পরদিন আরিচা ঘাট দিয়ে নদী পার হয়ে ফরিদপুর ঘুরে শরীয়তপুরে আসি। ওই সময় যদি ব্রিজটা থাকত তাহলে রোগীকে নিয়ে এত ভোগান্তি পোহাতে হতো না।
‘একটা সেতুর জন্য আমাদের অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। সেতু না থাকায় একটা রোগী নিয়ে ঢাকায় যেতে-আসতে দুই ঘাট ও ফেরি মিলিয়ে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টার মতো সময় লেগে যায়। অনেক সময় ঝড়-তুফানের মুখোমুখি হতে হয়। জীবনকে হাতে নিয়ে উত্তাল পদ্মা পার হতে হয়। এখন আর সেই ভয় নাই। এক মুহূর্তেই পার হওয়া যাবে পদ্মা।’
ছটফট করে মরতে দেখি, কিছুই করার থাকে না
শিমুলিয়া ও জাজিরা ফেরিঘাটে বেশ কয়েকজন অ্যাম্বুলেন্সচালকের সঙ্গে কথা হয় ঢাকা পোস্টের। সাইফুল ইসলাম নামের এক চালক বলেন, অনেক সময় অতিরিক্ত গাড়ির চাপে ঘাটে প্রচণ্ড জ্যাম লেগে যায়। ফেরিরও আস্তে দেরি হয়। তখন রোগীদের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়।
অনেক সময় অপেক্ষায় থাকতে থাকতে ফেরিতেই রোগী মারা যান। বিশেষ করে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, জটিল কোনো রোগ বা দুর্ঘটনায় আহতদের ক্ষেত্রে ফেরি দিয়ে রোগী পারাপার খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। অনেক রোগীকে ছটফট করতে করতে মরতে দেখেছি। করার কিছুই থাকত না। বাকরুদ্ধ স্বজনরা প্রিয়জনের নিথর দেহ নিয়ে ফিরতি ফেরি ধরে বাড়ির পথে রওনা দিতেন।
‘ফেরিতে উঠে গেলে এক ঘণ্টাতেই নদী পার হওয়া যাবে কিন্তু উঠতেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা লেগে যায়। ক্ষেত্রবিশেষ ফেরির জন্য চার/পাঁচ ঘণ্টাও অপেক্ষায় থাকতে হয়। আজ যেমনটা দেখছেন। অনেকগুলো গাড়ি ঘাটে আটকা আছে কিন্তু ফেরি নাই। শুনেছি, আসার পথে একটি ফেরিতে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিয়েছে। যে কারণে রোগী নিয়েই দুই ঘণ্টার বেশি সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে।’
সাইফুল ইসলাম বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে ২১ জেলার রোগীদের জন্য অত্যন্ত আশীর্বাদ হবে। ফেরি পেতে এখন যে সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে, সেতু চালু হলে সেই সময়ে রোগীকে হাসপাতালে পৌঁছে দিতে পারব।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা মুখ ফিরিয়ে নিতেন, এখন তারা আসতে চাইছেন
শরীয়তপুর জেলায় গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। স্থানীয় পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবায় প্রতিষ্ঠানগুলো গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে। কিন্তু উত্তাল পদ্মা পারের ভোগান্তির কারণে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এখানে আসতে চাইতেন না। এখন সেতু হওয়ায় তাদের অনেকেই নিজ থেকে রোগী দেখার বিষয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন।
জাজিরার ডা. কাশেম মেমোরিয়াল ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ঢাকা থেকে এখানে চেম্বার করতে আসতে চাইতেন না। রোগীদের কষ্ট করে ঢাকায় যেতে হতো। এখন সেতু হওয়ায় অনেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এখানে চেম্বার করতে চাইছেন।
‘আগে যেখানে ঢাকা থেকে ফেরি পার হয়ে জাজিরায় আসতে সময় লাগত চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা, সেতু চালু হলে এক থেকে দেড় ঘণ্টায় তারা ঢাকা থেকে জাজিরায় পৌঁছাতে পারবেন। সেতুর কারণে এ অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় আমূল পরিবর্তন ঘটবে’— বিশ্বাস মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানের।
মানুষের সেবায় এখন বেশি বেশি বাড়ি যাওয়া যাবে
বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী এবং বর্তমানে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের ইএনটি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিটু। বাড়ি পিরোজপুর সদর এলাকায়। রাজধানী ঢাকায় বসবাস হলেও নাড়ির টানে প্রতি মাসে যেতে হয় বাড়িতে। নিজ দায়বদ্ধতা থেকে বিনামূল্যে প্রদান করেন স্বাস্থ্যসেবা।
প্রতি মাসে ফেরি পারাপারের ভোগান্তির চিত্র তুলে ধরে ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, প্রতি মাসের শেষ শুক্রবার নিজ এলাকায় যাই। কিন্তু ফেরি পারাপারটা আমার জন্য অত্যন্ত কষ্টকর ও বেদনার ছিল। প্রায় সময় পিরোজপুর থেকে ঢাকায় আসতে আট থেকে ১০ ঘণ্টা চলে যেত। আসা-যাওয়ার দীর্ঘ এ সময়ে আমি নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়তাম।
‘আশা করি, পদ্মা সেতুর কারণে সার্বিক চিত্র পাল্টে যাবে। এটি আমার এবং আমার অঞ্চলের মানুষের জন্য বিশাল এক আশীর্বাদ বয়ে আনবে। সেতু চালু হলে খুব কম সময়ে নিজ এলাকায় পৌঁছাতে পারব। মানুষকেও বেশি সময় দিতে পারব। আমার মতো যারা ঢাকায় থাকেন, তারাও নিজ নিজ এলাকায় মানুষের সেবার জন্য যেতে পারবেন।’
ডা. মনিলাল আইচ লিটু বলেন, গত আট বছর ধরে নিজ এলাকায় বিনামূল্যে হেলথ ক্যাম্প পরিচালনা করে আসছি। দুস্থ রোগীদের ফ্রি ওষুধও সরবরাহ করছি। আগে প্রতি মাসে একবার যেতাম। এখন আশা করছি প্রতি সপ্তাহে যেতে পারব। আমার মতো অনেক কনসালটেন্ট আছেন, যারা শুধুমাত্র যাতায়াতের ভোগান্তির কারণে নিয়মিত এলাকায় যেতে পারেন না। এখন তারাও যাবেন। আশা করি, দক্ষিণাঞ্চলে স্বাস্থ্য খাতে অভূতপূর্ব পরিবর্তন ঘটবে।
বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু, আর দেখতে হবে না আমাদের
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আশরাফুল হক সিয়াম ঢাকা পোস্টকে বলেন, একটা হার্ট অ্যাটাকের রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জরুরিভিত্তিতে ঢাকায় আনতে হয়। এ চিকিৎসায় বাংলাদেশের একমাত্র বিশেষায়িত হাসপাতাল হলো জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল। পদ্মার ওপার থেকে একজন রোগীকে যদি ঢাকা হৃদরোগ হাসপাতালে আসতে হয়, তাহলে তাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেরির জন্য অপেক্ষা করতে হয়। আবার আবহাওয়া খারাপ থাকলে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকে। ওই রোগীগুলো ঢাকায় আসতে পারেন না। এমনও দেখা গেছে, অনেক রোগী পদ্মা পারের অপেক্ষায় থাকতে থাকতে মারা যান।
‘পদ্মা সেতু চালু হলে এখন আর কোনো রোগীকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘাটে অপেক্ষা করতে হবে না। দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা, এমনকি ঝড়-বৃষ্টি হলেও যেকোনো সময় বা যেকোনো অবস্থাতেই তারা আসা-যাওয়া করতে পারবেন। ফলে এমন অসহায় মৃত্যু আর দেখতে হবে না আমাদের।’
ডা. সিয়ামের মতে, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় ওইসব এলাকায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা যেতে চাইতেন না। কিন্তু এখন সেতু চালু হলে চিকিৎসকরা অনায়াসেই যেতে পারবেন। সাধারণ মানুষকে আর কষ্ট করে ঢাকায় ছুটে যেতে হবে না।
চিকিৎসায় কমবে খরচ, বাঁচবে প্রাণ
শরীয়তপুর জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আব্দুস সোবহান ঢাকা পোস্টকে বলেন, জেলা হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাসেবার জন্য ঢাকার মতো তেমন উন্নত প্রযুক্তি নেই। বিশেষ করে হেড ইনজুরি কিংবা স্ট্রোকের রোগীদের বাধ্য হয়েই ঢাকায় পাঠাতে হয়। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, রাত্রিকালীন লঞ্চ কিংবা সড়ক পথের দীর্ঘসূত্রতার কারণে পথেই মারা যেতেন অনেক রোগী। এমনও হয়েছে, ঘাটে গিয়ে যথাসময়ে ফেরি না পাওয়ায় কিংবা কুয়াশার কারণে ফেরি বন্ধ থাকায় বিনা চিকিৎসায় নদীর তীরেই মারা গেছেন অনেকে।
‘একজন রোগী অ্যাম্বুলেন্সে ফেরি পার হয়ে ঢাকার কোনো হাসপাতালে যান, তাহলে তার প্রায় ছয় থেকে সাত হাজার টাকার মতো ব্যয় হয়। যদিও দূরত্ব খুব বেশি নয়। আমাদের সীমাবদ্ধতার কারণে সবসময় তারা সরকারি অ্যাম্বুলেন্সও ব্যবহার করতে পারেন না। যে কারণে বাধ্য হয়ে বেশি ভাড়ায় তাদের বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স নিতে হয়। এখানে শুধু যে অর্থনৈতিক ক্ষতি, তা নয়। ঢাকায় পৌঁছাতে অনেক সময়ও লেগে যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে পথেই রোগীর অবস্থা খারাপ হয়ে যায়, এমনকি মারাও যায়। এটা আসলেই খুব বেদনাদায়ক। পদ্মা সেতু চালু হলে সময় ও অর্থ— দুদিক দিয়েই বেঁচে যাবেন এখানকার সাধারণ মানুষ।’
এছাড়া সেতু চালু হলে যাতায়াতে সুবিধা হবে। ঢাকার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাও এখানে অল্প সময়ের মধ্যে আসতে পারবেন। ফলে রোগীরা নিজ এলাকাতেই উন্নত চিকিৎসা পাবেন।
সেতু চালু হলে সরকারি হাসপাতালের ওপর চাপ কমবে কি না— জানতে চাইলে ডা. আব্দুস সোবহান বলেন, রোগীরা যদি সহজেই ঢাকায় যেতে পারেন তাহলে আমাদের ওপর চাপ কিছুটা কমবে। বিশেষ করে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাকসহ জটিল রোগে আক্রান্তরা উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকামুখী হবেন। তবে, প্রাইমারি ডায়াগনসিস করার জন্য তো আমাদের কাছে আসতেই হবে। সাধারণ রোগী যারা আছেন তাদের সংখ্যাটা হয়তো কমবে না, বরং রাস্তাঘাটের সুবিধার কারণে আরও বাড়বে।
ভাগ্য বদলাবে সব শ্রেণি ও পেশার মানুষের
সেতু চালু হলে শুধু চিকিৎসাসেবা নয়, এ অঞ্চলের সব শ্রেণি ও পেশার মানুষের ভাগ্য বদলে যাবে— এমন মন্তব্য করেন জাজিরা থানার নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান সোহেল। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, মুমূর্ষু রোগীদের নদী পার হতে সময় লাগতো। হার্ট অ্যাটাক ও সুইসাইড কেসগুলোতে আমরা ঠিক মতো ট্রিটমেন্ট দিতে পারতাম না। সাপে কামড় বা অন্যান্য ইমার্জেন্সি অবস্থায়ও দ্রুত চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হতো না। এখন এগুলো দ্রুত হবে, আশা করি।
‘কৃষিপ্রধান এ অঞ্চলের কৃষকরাও এখন লাভবান হবেন। এখানে মূলত মসলাজাতীয় পণ্য ও শাকসবজির চাষ হয়। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাব ও যোগাযোগ ব্যবস্থার অপ্রতুলতার কারণে এতদিন কৃষকরা ন্যায্য দাম পেতেন না। পদ্মা সেতু চালু হলে এ অঞ্চলের কৃষিক্ষেত্রেও বিপ্লব ঘটবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ঢাকায় পণ্য সরবরাহের পাশাপাশি কৃষকরা ন্যায্যমূল্যও পাবেন।’
শরীয়তপুর জেলা সদর হাসপাতালের তথ্য মতে, গত পাঁচ মাসে ৪২৬ রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেলসহ বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়। গত জানুয়ারি মাসে ৮৫ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৬৩ জন, মার্চে ১০৫ জন, এপ্রিলে ৯৫ জন এবং মে মাসের ২৯ তারিখ পর্যন্ত ৭৮ রোগীকে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
মূলত হৃদরোগ, স্ট্রোক ও সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মক জখম রোগীদের ক্ষেত্রে জুরুরিভিত্তিতে ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। রাজধানীর হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাদের পাঠানো হয়।
টিআই/এমএআর/ওএফ