রাজধানীর খামারবাড়িতে বসেছে তিন দিনব্যাপী জাতীয় ফল মেলা। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হলেও দ্বিতীয় দিনে মেলায় বাগড়া বসিয়েছে বৃষ্টি। তবুও দেশি-বিদেশি শতশত ফলের পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা।

শুক্রবার (১৭ জুন) রাজধানীর ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট চত্বরে আয়োজিত মেলায় আসা দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মেলায় সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে আম, কাঁঠাল, লিচু, জাম। সেই সঙ্গে বিক্রি হচ্ছে খাগড়াছড়ি থেকে আনা সূর্যমুখী কলা, যার রং লাল। আরও রয়েছে চাপালিশ কাঁঠাল, ড্রাগন, লংগান, স্ট্রবেরিসহ দেশে উৎপাদিত প্রায় সব ধরনের বিদেশি ফল।

ফল মেলায় নানা ফলের ভিড়ে নজর কেড়েছে বিশেষ প্রজাতির আম। যা দেখতে অনেকটাই সাগর কলার মতো। আসলে তা কলা নয়, একটু কাছে গিয়েই বুঝা যায় এটি আসলে আমই। এ আমের নাম ব্যানানা ম্যাংগো বা কলা আম।

জানা গেছে, থাইল্যান্ডভিত্তিক এ আম স্বাদে ও গন্ধে অনন্য। দেখতে কলার মতো লম্বা, পাকার সময় দুধে আলতা মেশানো গোলাপি রঙের, আঠি চোকা পাতলা, রয়েছে প্রকৃত আমের স্বাদ। অন্য সব আমের তুলনায় এই বিশেষ জাতের আম তুলনামূলক অনেক মিষ্টি।

মেলায় 'ছালাম ফল বিতান' নামে দোকানে এ ব্যানানা ম্যাংগো নিয়ে শরীয়তপুর থেকে এসেছেন মো. শামীম মিয়া। ব্যতিক্রমী এই আম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমটি মূলত থাইল্যান্ডের একটি জাত। দেশের পাহাড়ি এলাকাগুলোতে এ জাতের আমের চাষ হয়। আমাদের এখানে আমগুলো এসেছে রাঙ্গামাটি থেকে। দেখতে সুন্দর হওয়ায় ক্রেতারা এসে ভিড় করেন। অনেকেই শখ করে কিনে নিয়ে যান।

দাম প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতি কেজি ব্যানানা ম্যাঙ্গো বিক্রি করছি ১৮০ টাকা করে। তুলনামূলক দাম বেশি কি-না জানতে চাইলে বিক্রেতা বলেন, আমটি স্বাদে অনেক মিষ্টি। অন্য আমের তুলনায় ভিন্ন। তাছাড়া আমটি আমাদের দেশে এতোটা পাওয়া যায় না, যে কারণে আমাদেরও বেশি দামে কিনে আনতে হয়। দাম কিছুটা বেশি মনে হলেও ভালোই বিক্রি করছি। 

আমটি দেখতে আসা জাকারিয়া ইসলাম নাম এক ক্রেতা বলেন, আমি এই জাতের আম একাধিকবার খেয়েছি, তাই দূর থেকে দেখে এসেছি। আমটি খেতে অনেক সুস্বাদু। কিন্তু মনে হচ্ছে তুলনামূলক দামটা একটু বেশি।

ফল মেলায় সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে আম। এর মধ্যে আম্রপালি, হিমসাগর জাতের আমের চাহিদা তুঙ্গে। রাজশাহী থেকে মেলায় আসা মো. শাহজাহান মিয়ার সঙ্গে কথা হয় ঢাকা পোস্টের।

তিনি বলেন, মেলায় সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে আম্রপালি জাতের আম। এরপরই বিক্রি হচ্ছে হিমসাগর জাতের আম। এ দুই প্রকৃতির আমই প্রতি কেজি বিক্রি করছি ১০০ টাকা। ভালো আমের দাম একটু বেশিই। বাজারে যেই দামে বিক্রি হচ্ছে, আমরা আরও কম দামে বিক্রি করছি। আমার কাছে একটু দামের আম হলো ল্যাংড়া। এগুলো ৮০-৯০ টাকা কেজি বিক্রি করছি।

মেলায় ফলমূলের দাম প্রসঙ্গে কথা হয় বিক্রেতা আব্দুল করিমের সঙ্গে। তিনি বলেন, মেলায় তুলনামূলক ফলের দাম কম। অন্যান্য বাজার, সুপার শপ বা লোকাল বাজারগুলোতে যদি যান, তাহলে এতো ভালো পণ্য আমাদের মতো কম দামে কেউ দিতে পারবে না।

তিনি আরও বলেন, হিমসাগর আম বিক্রি করছি ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি। আম্রপালি বিক্রি করছি ৮০-৯০ টাকা। এছাড়াও ল্যাংড়া আম বিক্রি করছি ৭০, ৮০ বা ৯০ টাকায়। আমাদের আমগুলো সরাসরি বাগান থেকে আনা।  এগুলোতে কোনো ধরনের ওষুধ বা ক্ষতিকারক রাসায়নিক নেই। 

ব্যানানা ম্যাংগো আমের মূল বৈশিষ্ট্য

> আমটি দেখতে কলার মতো, তাই একে বলা হচ্ছে ব্যানানা ম্যাংগো।

> আমটি পাকলে পাকা কলার মতো হলুদ দেখায়। অনেক সময় সিঁদুরের মতো রঙও দেখা যায়।

> আমটির স্বাদ ও গন্ধ অতুলনীয়। খোসা একেবারে পাতলা। আমের আঁটি অত্যন্ত পাতলা। আঁশ কম।

> পরিপক্ব একটি আমের ওজন ৩০০ গ্রাম থেকে ৩৫০ গ্রাম হয়ে থাকে।

> জুনের শেষ দিকে ও জুলাইয়ের শুরুতেই পাকে।

> আমটির মিষ্টতা ভালো। এই আমটি মিষ্টতা ল্যাংড়া আমের মতো।

> আমটি যেহেতু থাইল্যান্ডের শীর্ষ জনপ্রিয় তাই রপ্তানি চাহিদাও আছে।

> আমটির আকার, রং, স্বাদ ও মিষ্টতার কারণে বিভিন্ন দেশে এরই মধ্যে রপ্তানি হচ্ছে। 

> আমটির চাষ পদ্ধতি অত্যন্ত সহজ। তাই বাণিজ্যিকভাবে বাড়ির আঙ্গিনায়, ছাদে বা টবে অনায়াসে চাষ করা যায়।

ব্যানানা মেঙ্গো প্রসঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আমটি মূলত থাইল্যান্ডের একটি জাত। বাংলাদেশে দিনে দিনে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এ আম। কেউ শখে কেউবা আবার বাণিজ্যিকভাবে চাষ করছেন এ বিদেশি আম। আমটি বর্তমানে আমাদের পাহাড়ি অঞ্চলে ও আমের রাজধানীখ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে। বাংলাদেশের আবহাওয়ায় এ জাতের আমের ভালো ফলন হয়। 

টিআই/এসকেডি