কুমিল্লায় ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং’-এর অভিযোগ নাকচ ইসির
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং’-এর অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আলমগীর বলেছেন, রেজাল্ট ম্যানিপুলেট করার সুযোগ রিটার্নিং অফিসারের নেই।
বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। ইসি আলমগীর বলেন, প্রার্থীর এজেন্টদের কাছে কপি আছে। এরপরও কারো সন্দেহ থাকলে ট্রাইব্যুনালে যেতে পারেন।
বিজ্ঞাপন
প্রার্থীদের সন্দেহের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, কোনো সন্দেহ থাকলে পাসওয়ার্ড দিয়ে ইভিএম ওপেন করে আবার দেখা যাবে। অনেকে আছেন না জেনে, জানার ভান করে এগুলো করেন। আবার অনেকে আছে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য অপপ্রচার চালান।
নির্বাচন কমিশন ফল পরিবর্তন করেছে—এমন অভিযোগের দৃষ্টি আকর্ষণের পর এ কমিশনার বলেন, কমিশন তো সরাসরি নির্বাচন পরিচালনা করে না। পরিচালনা করেন রিটার্নিং অফিসার। তিনি কেন্দ্র ঠিক করেন, প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। আসলে নির্বাচন করেন প্রিসাইডিং অফিসার। তারা ফল প্রকাশ করে কেন্দ্রে টানিয়ে দেন, ঘোষণা দেন, সেখানে প্রার্থীর এজেন্টদের সই নেন। একটা কপি তাদের দেন। একটি মালপত্রের সঙ্গে পাঠান। আরেকটি কপি রিটার্নিং অফিসারের কাছে থাকে। রিটার্নিং কর্মকর্তা শুধু কম্পাইলেশন করেন। তার কাজ হলো কেবল পড়ে শোনানো। তাহলে তিনি কীভাবে পরিবর্তন করবেন, পরিবর্ধন করবেন, পরিমার্জন করবেন? সে সুযোগ আছে?
তিনি আরও বলেন, রিটার্নিং কর্মকর্তা কেবল দেখেন যে, বেসরকারি ফলে যোগ-বিয়োগ ঠিক আছে কি না, সবার সই আছে কি না, ইভিএমের সঙ্গে মিল আছে কি না। এরপর তিনি আমাদের কাছে পাঠান। এরপর আমরা গেজেট প্রকাশের আগে দেখি, সেখানে ভুল থাকলে আমরা আবার ফেরত পাঠাই।
ইভিএমে কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা হয়েছে উল্লেখ করে ইসি আলমগীর বলেন, আমাদের সবাই তো এ রকম নয়, অনেকেই বোঝেন না, বয়স বেশি থাকে। এছাড়া বৃষ্টি ছিল। এসব কারণে ধীরগতি হয়েছে। আমাদের দৃষ্টিতে মনে হয়নি। আপনাদের চোখ দিয়ে যা দেখেছি, সুন্দর ও সুষ্ঠু হয়েছে। যারা প্রার্থী ছিলেন, তারাও কিন্তু সেটি বলেছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তার পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করার সুযোগ নেই।
ইভিএমের কারণে পারসেন্টেজ কমছে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, না, কমেনি। নরমালি নগর এলাকায় যেসব ভোট আমি আগেও দেখেছি, তাদের সমাজের প্রতি, রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্ব কম থাকে। অথচ তারাই শিক্ষিত বেশি, তাই ভোট কম পড়ে। কেবল কুমিল্লা নয়, প্রত্যেকটি জায়গায় ভোট সুষ্ঠু হয়েছে।
কুমিল্লার ১০৫টি কেন্দ্রের ফল ঠিক আছে জানিয়ে তিনি বলেন, এটি আসলে আগে দেখা হয় ঠিক আছে কি না। ১০১ কেন্দ্রের ফল দেওয়ার পর প্রার্থীর সমর্থকরা এসে পরিবেশ নষ্ট করে ফেলেন। রেজাল্ট ঘোষণা যে দেবেন, কার কথা কে শোনে। শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য ১৫-২০ মিনিট সময় লাগে। যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছিল, রিটার্নিং অফিসার এসপি ও ডিসিকে ফোন করেন, আমাদের জানান। তারপর পরিবেশ সামাল দেন তারা। না হলে তো বলতেন, কী ঘোষণা দিয়েছে তা তো আমরা শুনিনি।
সংসদ নির্বাচনে কি এমপিদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন— এমন প্রশ্নের জবাবে এ কমিশনার বলেন, আইন আইনের জায়গায় থাকবে। আইন যতদিন পরিবর্তন না হচ্ছে যখন প্রয়োজন হবে, তখন দেখব।
ভোট চলাকালে কোনো অভিযোগ না থাকার কথা বললেও ফল ঘোষণার পর কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করেছেন গত দুইবারের নির্বাচনে জয় পাওয়া বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত মনিরুল হক সাক্কু।
তার অভিযোগ, একেবারে শেষ মুহূর্তে উপর মহলের ফোনে তার জয় ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। ২০১২ সালের প্রথম নির্বাচনে ৩৫ হাজার ভোটে, ২০১৭ সালের দ্বিতীয় নির্বাচনে ১১ হাজার ভোটে জয় পাওয়া সাক্কু এবার হেরেছেন মাত্র ৩৪৩ ভোটে।
এসআর/আরএইচ