পদ্মা সেতু
কতটা প্রস্তুত আঞ্চলিক সড়ক, কী করা দরকার?
পদ্মা সেতু চালুর মধ্য দিয়ে ২৫ জুন দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের ভাগ্য বদলে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে যাচ্ছে। তবে এজন্য সেতু চালুর পাশাপাশি আরও কিছু বিষয় গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা দরকার। যারা সেতু ব্যবহার করবেন তারা বলছেন দক্ষিণ ও পশ্চিমমুখী সব সড়কপথকে আরও সম্প্রসারণ ও উপযোগী করতে হবে। কিছু জায়গায় লাগতে পারে কার্যকর সেতু বা ফেরি। তবেই মিলবে কাঙ্ক্ষিত সুফল।
পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই সেতু ঘিরে সোনালি ভবিষ্যত দেখতে পাচ্ছেন ২১ জেলার মানুষ। সেতু চালু হলে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের সঙ্গে এ অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হবে। এ নিয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত ট্রাক, মিনি ট্রাক ও পিকআপ চালকরা।
বিজ্ঞাপন
শরীয়তপুর বাস মালিক সমিতির ২৪ সদস্য এক হয়ে ‘শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস’ নামে নতুন বাস নামাচ্ছেন। বাসের সংখ্যাও প্রাথমিকভাবে ২৪টি। এসব বাস সরাসরি শরীয়তপুর থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা যাবে।
মঙ্গল মাঝি সাত্তার মাদবর ঘাট
পদ্মার ওপারে শরীয়তপুরের মঙ্গল মাঝি সাত্তার মাদবর ঘাট। সেখানে কাঁচামাল নিয়ে ফেরির অপেক্ষায় থাকা ট্রাকচালক আব্দুর রহিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বেলা তিনটার দিকে কাঁচামাল নিয়ে বাগেরহাট থেকে এখানে এসেছি। কিন্তু এখনো ঘাট পার হতে পারিনি। গরমে অতিষ্ঠ হয়ে গেছি।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতু চালুর অপেক্ষায় আছি। সেতু চালু হলে কয়েক ঘন্টার মধ্যে ঢাকায় এসব মালামাল পৌঁছে যাবে। এতে আমাদের দুর্ভোগ-দুর্দশা কমবে, কাঁচামালও নষ্ট হবে না।
কাজির হাট থেকে পেপে নিয়ে সিলেট যাবেন ট্রাকচালক সৌরভ। তিনি ঘাটের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে ঢাকা পোস্টকে বলেন, শরীয়তপুরের কাজির হাট থেকে পেঁপে কিনেছি। বেলা ৩টার সময় এসেছি, এখন রাত ৯টা বাজে। কখন নদী পার হতে পারব বলতে পারছি না।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে ঘাটের এই ৬-৭ ঘণ্টা বেঁচে যাবে। এতে আমরা যেমন ভালো দাম পাব তেমনি কৃষকরাও ভালো দাম পাবেন।
মাদারীপুর শিবচর থেকে মিষ্টি কুমড়া নিয়ে আসা ট্রাক চালক সাইফুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ৮-৯ ঘণ্টা ফেরিতে ওঠার জন্য বসে আছি। আমাগো গাড়ি ছাড়ে না, খালি প্রাইভেটকার ছাড়ে।
তিনি বলেন, ঘাটে বসে থাকলে ট্রাকের ট্রিপ কমে যায়। এতে রোজগারও কমে যায়। পদ্মা সেতু হলে দিনে চার/পাঁচটা ট্রিপ মারতে পারব। এটা ভাবতে ভালো লাগছে।
নামছে নতুন বাস, উপযোগী সড়কের কী খবর?
শরীয়তপুর বাস মালিক সমিতির ২৪ জন সদস্য এক হয়ে ‘শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস’ নামে নতুন বাস নামাচ্ছেন ঢাকায় যাতায়াতের জন্য। বাসের সংখ্যাও প্রাথমিকভাবে ২৪টি। যেগুলো সরাসরি শরীয়তপুর থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা যাবে।
বাসগুলোর নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। পদ্মা সেতু চালুর সাথে সাথে তাদের বাসও চলাচল শুরু করবে। অর্থাৎ আগামী ২৬ জুন থেকে চলবে শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস।
এ ব্যাপারে শরীয়তপুর বাস মালিক সমিতির সভাপতি ফারুক আহমদ তালুকদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, শরীয়তপুরবাসীর জন্য স্বপ্নের মতো ঘটনা পদ্মা সেতু চালু হওয়া। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞ এখানকার সব মানুষ।
তিনি বলেন, তবে আমাদের কিছু দাবি-দাওয়া আছে। শরীয়তপুরের অনেক সড়ক এখনো পদ্মা সেতুতে গাড়ি নিয়ে যাওয়ার উপযোগী নয়। পদ্মা সেতু চালু হলে আমাদের সড়ক সে চাপ সামলাতে পারবে না। এজন্য অবশ্য ফোর লেনের কাজ শুরু হয়েছে। তবে এটা যথেষ্ট নয়। আমাদের আবুপুর থেকে বরিশাল পর্যন্ত ভালো সড়ক হওয়া দরকার। তাহলে ৫০ কিমি সড়কপথ কমবে।
শরীয়তপুর বাস মালিক সমিতির সহ-সভাপতি শাখাওয়াত হোসেন চুন্নু ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাস্তার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের ঢাকাগামী যান চলাচলে সমস্যা হবে। আমাদের দাবি, ফোর লেনের কাজ যেন দ্রুত শেষ করা হয়।
পদ্মা সেতু চালুর মধ্য দিয়ে ২৫ জুন দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের ভাগ্য বদলে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে যাচ্ছে। তবে এজন্য সেতু চালুর পাশাপাশি আরও কিছু বিষয় গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা দরকার। যারা সেতু ব্যবহার করবেন তারা বলছেন দক্ষিণ ও পশ্চিমমুখী সব সড়কপথকে আরও সম্প্রসারণ ও উপযোগী করতে হবে। কিছু জায়গায় লাগতে পারে কার্যকর সেতু বা ফেরি। তবেই মিলবে কাঙ্ক্ষিত সুফল
এছাড়া শরীয়তপুরের দক্ষিণে আবুপুর থেকে বরিশালের মুলাদি পর্যন্ত যাতায়াতে ফোর লেন এবং প্রয়োজনীয় ব্রিজগুলো করা দরকার। অথবা সেখানে ফেরি চলাচলের ব্যবস্থা করা দরকার। তবেই গতিশীল হবে এ অঞ্চলের যান চলাচল।
স্থানীয় পরিবহন ব্যবসায়ী আব্দুল খালেক পালোয়ান বলেন, সকাল ছয়টায় যদি বরিশাল থেকে কোনো বাস ছাড়ে তাহলে সেটি ঢাকায় পৌঁছাতে লাগবে ৬ ঘন্টা। কিন্তু সেগুলো যদি মুলাদি থেকে শরীয়তপুর হয়ে পদ্মা সেতুতে ওঠে তাহলে সময় কমে আসবে মাত্র তিন ঘন্টায়। এতে সময়ও যেমন বাঁচবে তেমনি খরচও কমবে।
এজন্য শরীয়তপুর থেকে পদ্মা সেতু পর্যন্ত সড়কের উন্নয়ন যেমন দরকার তেমনি শরীয়তপুর থেকে আবুপুর-মুলাদি হয়ে বরিশাল পর্যন্ত ব্রিজ ও সড়কের উন্নয়নও দরকার। অর্থাৎ বরিশাল পর্যন্ত সড়ক যাতায়াত স্মুথ করা দরকার।
টোল কম চান দূরের পথের বাসমালিকরা
বরগুনা জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সগীর হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, পদ্মা সেতু দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য আশীর্বাদ। তবে সেতুর টোল নিয়ে আমরা চিন্তায় আছি। বর্তমানে বরগুনা থেকে ঢাকা ও ঢাকা থেকে বরগুনা আসা-যাওয়ায় প্রতিটি বাসে সব মিলিয়ে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়। এখন শুধু সেতু পারাপার করতেই ২৪শ টাকা করে প্রায় ৫ হাজার টাকা লাগবে। টোল কমিয়ে সহনীয় পর্যায়ে আনা হলে আমরা উপকৃত হবো। যাত্রীদেরও বাড়তি ভাড়ার বেগ পেতে হবে না।
আঞ্চলিক সড়কপথের সংস্কার ও উন্নয়ন জরুরি : জেলা প্রশাসক
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মো. পারভেজ হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাহসের প্রতিফলন পদ্মা সেতু। আমাদের এ অঞ্চলের উন্নয়নকে আর কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না। এখানে বেশ কিছু অ্যাগ্রো-নির্ভর ইন্ড্রাস্ট্রি স্থাপনের চেষ্টা করা হচ্ছে। মৃৎশিল্প, কাঁচ শিল্প আগে থেকেই আছে। জাজিরার কালো জিরা আছে। আমরা এসব ব্র্যান্ডিং করার সুযোগ পাব। আর ইপিজেড হলে তো কোনো কথাই নেই। অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
তিনি বলেন, সেতুর পাশাপাশি এই অঞ্চলের সড়কপথের সংস্কার ও উন্নয়ন খুবই জরুরি। তবেই আমরা সেতুর সুবিধাটা নিতে পারব। পদ্মা সেতু থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত রাস্তা আছে। শরীয়তপুর পর্যন্ত ভালো রাস্তা ছিল না। এখন ফোর লেনের কাজ শুরু হয়েছে। এই রাস্তা শেষ হলে সবাই শরিয়তপুরের ওপর দিয়ে যাতায়াত করবে। মোংলা পোর্টগামী গাড়ীকেও শরিয়তপুরের সড়কে উঠতে হবে। শরিয়তপুরের মানুষ সুবিধা নিতে প্রস্তুত।
জেইউ/এআর/জেএস