প্রস্তাবিত ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেটে দেশ থেকে বিভিন্ন উপায়ে পাচার হওয়া অর্থ বৈধ করার সুযোগ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। কর দিয়ে এসব অর্থ বৈধ হয়ে গেলে এর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারবে না কর বিভাগসহ যে কোনো কর্তৃপক্ষ। 

বৃহস্পতিবার (৯ জুন) বিকেল ৩টায় জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপনকালে তিনি এই প্রস্তাব দেন।

এমন প্রস্তাবকে সম্পূর্ণ অনৈতিক, অযৌক্তিক ও আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে দাবি করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি)  নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।

প্রস্তাবিত বাজেটের বিষয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ঢাকা পোস্টের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, বাজেটে সরাসরি পাচার করা অর্থ ফেরতের সুযোগের কথা বলা হয়নি। তবে প্রস্তাবনা দেখে ধরে নেওয়া যায় এটা মূলত অর্থ পাচারকারীদের দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বলতে চাই এটা সম্পূর্ণ অনৈতিক, অযৌক্তিক ও আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।  বিশেষ করে আমাদের অ্যান্টি মানি লন্ডারিং আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। 

তিনি বলেন, অর্থপাচার মতো একটা গুরুতর অভিযোগ যেটা আন্তর্জাতিকভাবে অপরাধ, সেটাকে বৈধতা দেওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এটা নৈতিকতার স্খালন এবং অর্থ পাচারকে সুরক্ষা দেওয়ার মতো একটা বিষয়। যেখানে অ্যান্টি মানি লন্ডারিং আইনে পাচারকারীদের অর্থ জব্দ ও সমপরিমাণ অর্থ জরিমানা এবং অপরাধের ১০ বছর কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। সেখানে পাচার হওয়া অর্থ ফেরতে নামমাত্র করের বিনিময়ে বৈধতা দেওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় এবং আইনবিরোধী।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আমরা মনে করি এটা উচ্চ বিলাসী প্রস্তাবনা, বাস্তবসম্মত নয়। কারণ হচ্ছে যারা অবৈধভাবে অর্থপাচার করেছে তারা ওই দেশ থেকে চাইলেও ওই অর্থ ফেরত আনতে পারবে না। এটা আইনের প্রক্রিয়ার আওতায় দুই দেশের মিউচুয়াল আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের একটি বিষয়। ওই চুক্তি না থাকলে টাকা ফেরত আসবে না। সুযোগ দেওয়া হলেও এটা কোনো কাজে আসবে না বলে আমরা মনে করি। যেমন, ভারতে ধরা পড়া পিকে হালদার। পিকে হালদারের পাচারকৃত সম্পদ দেশে ফেরত আনা কি পিকে হালদারের হাতে রয়েছে? এটা তো ভারত সরকারের বিষয়। 

পাচার করা অর্থের বিষয়ে প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, প্রস্তাবিত বিধান অনুযায়ী বিদেশে অবস্থিত যেকোনো সম্পদের ওপর কর পরিশোধ করা হলে আয়কর কর্তৃপক্ষসহ যেকোনো কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করবে না। বিদেশে অর্জিত স্থাবর সম্পত্তি বাংলাদেশে আনা না হলে এর ওপর ১৫ শতাংশ, বিদেশে থাকা অস্থাবর সম্পত্তি বাংলাদেশে আনা না হলে ১০ শতাংশ ও বাংলাদেশে পাঠানো (রেমিট্যান্স) নগদ অর্থের ওপর ৭ শতাংশ হারে করারোপের প্রস্তাব করেন তিনি। এ সুবিধা ২০২২ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। প্রস্তাবিত বিধান কার্যকর হলে অর্থনীতির মূল স্রোতে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে, আয়কর রাজস্ব আহরণ বাড়বে। 

‘কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’ স্লোগান নিয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে জাতীয় সংসদে। নতুন এ বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এতে মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ।

আরএম/এসকেডি