মঙ্গলবার (৭ জুন) রাত ৮টা ৪৯ মিনিটে মহাখালীর ভাড়া বাসা থেকে বের হন বেসরকারি টেলিভিশন ডিবিসি নিউজের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ প্রডিউসার আব্দুল বারী। এরপর আর বাসায় ফেরেননি তিনি। গুলশান থানাধীন নিকেতনের লেকপাড়ে পড়েছিল তার নিথর রক্তাক্ত মরদেহ।

পুলিশ জানায়, বুধবার (৮ জুন) সকালে ছিন্নমূল কয়েকজন শিশু নিকেতনের পাশে লেকপাড়ে একজনের মরদেহ দেখে পুলিশকে খবর দেয়। পরে সকালে আবদুল বারীর মরদেহ উদ্ধার করে গুলশান থানা পুলিশ। পুলিশের ধারণা, ৭-৮ ঘণ্টা আগে তাকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে।

কে বা কারা আব্দুল বারীকে হত্যা করেছে তা স্পষ্ট না হলেও পুলিশ বলছে, পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে তাকে। এর নেপথ্যে যে বা যারাই থাক তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে। ইতোমধ্যে থানা পুলিশের পাশাপাশি ছায়া তদন্তে নেমেছে গুলশান গোয়েন্দা পুলিশ।

গুলশান পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, বেসরকারি টেলিভিশন ডিবিসি নিউজের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ প্রডিউসার আব্দুল বারী কেন, কীভাবে এখানে আসলেন, কারা এই হত্যার ঘটনা কেন ঘটিয়েছে, ঘটনার পেছনে কারা জড়িত, তা নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমাদের প্রাথমিক ধারণা, তাকে ফেলে হত্যা করা হয়েছে। আশা করছি দ্রুতই জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে পারব।

তিনি বলেন, আমরা সুরতহালে দেখেছি, তার গলায় দাগ ও নাভির উপরে কাটা দাগ দেখেছি। সব কিছু নিয়েই কাজ করছি। তথ্য-প্রযুক্তিগত সহায়তা ও ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে তা বিশ্লেষণ করা হবে।

মামলার বিষয়ে গুলশান ডিসি বলেন, আইনগত প্রক্রিয়ায় এই ঘটনায় মামলা হবে।

গুলশান গোয়েন্দা বিভাগের উপ-কমিশনার(ডিসি) মশিউর রহমান বলেন, ডিবিসি নিউজের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ প্রডিউসার আব্দুল বারী হত্যার শিকার তা স্পষ্ট। এটা নিয়ে থানা পুলিশ কাজ করছে। পাশাপাশি আমরা ঘটনা জানার পর থেকেই ছায়া তদন্ত করছি।

তিনি কেন সেখানে গেলেন, সাথে কেউ ছিলেন কি না, কারা হত্যা করল তা জানার চেষ্টা করছি। আমরা বাসা ও ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করব। পাশাপাশি তথ্য-প্রযুক্তিগত সহায়তায় খুনিদের শনাক্তের চেষ্টা করছি। 

এর আগে গুলশান থানার ওসি আবুল হাসান জানিয়েছিলেন, মরদেহ উদ্ধারের পর সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট হত্যাকাণ্ডের আলামত সংগ্রহ করেছে। এরপর ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

ওসি বলেন, ৭-৮ ঘণ্টা আগে তাকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। প্রাথমিকভাবে ধারণা, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়ে থাকতে পারে। এ ঘটনায় এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। এই হত্যার তদন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।

গুলশান বিভাগ পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার নাজমুল হাসান ফিরোজ জানান, মরদেহ এবং আলামত দেখে প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে বারীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে জখম করে মৃত্যু নিশ্চিত করেছে ঘাতকরা।

ধারণা করা হচ্ছে, প্রথমে বারীকে ছুরি দিয়ে আঘাত করা হয়। পরে সে বাঁচার জন্য পানিতে নেমে পড়ে। কারণ তার জামা কাপড় ভেজা ছিল। পরে বারী আবার লেকপাড়ে উঠে এলে তাকে মাটিতে ফেলে গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। তার মরদেহের পাশ থেকে এ সময় রক্তমাখা ছুরি, মানিব্যাগ এবং মোবাইল উদ্ধার করা হয়েছে। বারীর গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জ সদরে। মহাখালীতে একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন তিনি।

জেইউ/এসকেডি