চাপে মিয়ানমার, রাজনৈতিকভাবে সুযোগ কাজে লাগানোর পরামর্শ
সামরিক সরকার শাসিত মিয়ানমার বর্তমানে আন্তর্জাতিকভাবে চাপের মধ্যে আছে। আর এ সুযোগ রাজনৈতিকভাবে কাজে লাগিয়ে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ সুবিধা নিতে পারে বলে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ।
বুধবার (৮ জুন) রাজধানীর সিরডাপে ‘বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবাসন প্রতিবন্ধকতা ও করণীয়’ শীর্ষক এক আলোচনায় সরকারকে এমন পরামর্শ দেন আন্তর্জাতিক সম্পর্কের এ অধ্যাপক।
বিজ্ঞাপন
ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, মিয়ানমার এখন খুব খারাপ অবস্থানে আছে। তারা বিভিন্ন ধরনের চাপে আছে। আমরা রোহিঙ্গা ইস্যুতে রাজনৈতিকভাবে খুব ভালো কিছু করতে পারিনি। আমাদের এ সমস্যা সমাধানে রাজনৈতিকভাবে কাজ করতে হবে। যেহেতু এখন তারা খুব খারাপ অবস্থানে আছে, রাজনৈতিকভাবে আমাদের সেই সুযোগটা কাজে লাগাতে হবে।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের রাজনৈতিক সরকার যদি ক্ষমতায় আসে, ভালো কিছু হবে, এমনটা ভাবা ঠিক হবে না। কারাদণ্ডপ্রাপ্ত সুচি ক্ষমতায় এলেই যে রোহিঙ্গা ইস্যুতে অবস্থানের পরিবর্তন হবে, এটিও ভাবা ঠিক নয়। মিয়ানমারে রাজনৈতিক সরকার এলেও ক্ষমতা থাকে সামরিক বাহিনীর হাতে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন মিলিটারির সহযোগিতা ছাড়া সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যু এখন শুধু বাংলাদেশের ইস্যু নয়। এর সমাধান করা এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব। ভূ-রাজনৈতিকভাবে ভারত-চীন মিয়ানমারের সঙ্গে আছে। তাদের মিয়ানমারে ইনভেস্টমেন্ট আছে। আসিয়ানের মিয়ানমারে ইনভেস্টমেন্ট আছে। প্রত্যাবাসনে চীন-ভারত ও জাপানকে কাজে লাগাতে হবে, আসিয়ানকে কাজে লাগাতে হবে। এ দেশগুলোর মাধ্যমে মিয়ানমারকে চাপ প্রয়োগ করতে হবে।
ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান ও থাইল্যান্ডে বা আসিয়ানে রোহিঙ্গাদের যেসব ডায়াসপোরা আছে তাদের কাজে লাগাতে হবে। বিজনেস কমিউনিটিকে কাজে লাগাতে হবে। বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক ছাড়াও বিভিন্ন উপায়ে যাদের দ্বারা কাজ হতে পারে সবাইকে যুক্ত করতে হবে।
মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাসিমা বেগম বলেন, রোহিঙ্গাদের রিলোকেটেডের কথা বলা হলেও একটি প্রশ্ন আসে। তাদের পরিচয় কী হবে? রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনই সমাধান। এর জন্য চাপ প্রয়োগ করতে হবে। আমাদের কমিশন থেকে এশিয়া প্যাসিফিক ফোরামের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। দেখি চাপ প্রয়োগ করে কিছু করা যায় কি না। তা ছাড়া আমরা ভারতের মানবাধিকার কমিশনের সঙ্গে আলাপ করতে পারি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল বলেন, রোহিঙ্গাদের ফেরানো না গেলে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। তাদের যদি প্রত্যাবর্তন না করে রিলোকেট করা হয়, একটা সময়ে দেখা যাবে ভারতের আসাম থেকে বাংলাভাষীদের এখানে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এ সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আওয়াজ তুলতে হবে। রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে, মিয়ানমার তাদের নাগরিকত্ব স্বীকার করুক আর না করুক। দ্বিপাক্ষিকভাবে এর সমাধান হবে, যা করতে হবে বহুপাক্ষিকভাবে করতে হবে। ডায়াসপোরাদের কাজে লাগাতে হবে।
মানবাধিকার কমিশনের আয়োজনে অনুষ্ঠানে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশে সরকারের অবস্থান তুলে ধরেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমার অণু-বিভাগের মহাপরিচালক মিয়া মো. মঈনুল কবির। তিনি বলেন, বর্তমানে প্রায় ১৩ লাখের মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছে। এটি বাংলাদেশের জন্য বিশাল একটি বোঝা বা চাপ। প্রত্যাবাসনই সরকারের মূল লক্ষ্য। প্রত্যাবাসনের বিষয়টি খুব জটিল। আমরা দ্বিপাক্ষিকভাবে চেষ্টা করছি। মিয়ানমারের টেকনিক্যাল পর্যায়ে আমরা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। তা ছাড়া বহুপাক্ষিক ফোরামে এ সমস্যা সমাধানে সরকার কাজ করছে।
তিনি বলেন, আমরা চীনের সঙ্গেও আলোচনা অব্যাহত রেখেছি। ত্রিপক্ষীয়ভাবে তারা কাজ করে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত ইতিবাচক কোনো ফল পাওয়া যায়নি। কিন্তু প্রক্রিয়া চলমান। আমরা হতাশ। কারণ, এ সমস্যা ক্রমেই জটিল হচ্ছে। আসিয়ানকে অ্যাপ্রোচ করছি, জাপানের সঙ্গে কথা বলছি। মিয়ানমারের সাধারণ মানুষের মধ্যে বাংলাদেশ নিয়ে একটা খারাপ ধারণা আছে, আমরা কূটনৈতিকভাবে তা সমাধানের বা তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের চেষ্টা করছি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ কর্মকর্তা বলেন, রোহিঙ্গাদের রিলোকেটেডের বিষয়ে বলা হলেও এটি কখনো বাস্তবসম্মত সমাধান না। রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষার বিষয়ে আন্তর্জাতিকভাবে ভুল তথ্য দেওয়া হচ্ছে। আমরা রোহিঙ্গা শিশুদের মিয়ানমার কারিকুলামে শিক্ষা দিচ্ছি।
এনআই/আরএইচ