সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সুনির্দিষ্ট খাত বরাদ্দের সুপারিশ
জাতীয় বাজেটে সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তরিত করার পৃথক ও সুনির্দিষ্ট খাত বরাদ্দ করাসহ ১১ দফা সুপারিশ জানিয়েছে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), বারসিক ও ঢাকা কলিং প্রকল্প।
আজ (মঙ্গলবার) রাজধানীর পরিবেশ অধিদপ্তরের মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভা থেকে এসব সুপারিশ তুলে ধরা হয়।
বিজ্ঞাপন
‘পরিবেশবান্ধব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও নাগরিক সমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণ’ শীর্ষক এ আলোচনা সভা থেকে যেসব সুপারিশ জানানো হয়- বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ব্যক্তি, পরিবার ও কমিউনিটি পর্যায়ে সচেতনতা বাড়ানো; এলাকায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কমিটি করতে হবে এবং নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে; সিটি কর্পোরেশনে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কমিটিতে বস্তিবাসীর প্রতিনিধিত্ব রাখতে হবে; গণমাধ্যমে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সমস্যা এবং বস্তিবাসীদের ইতিবাচক ঘটনাগুলোও তুলে ধরতে হবে; বর্জ্যকে জিম্মি/ময়লার উছিলায় বস্তিবাসীকে জিম্মি করা যাবে না; ময়লা নিতে এসে হুমকি দেওয়া যাবে না; যত্রতত্র রাস্তায় ও বস্তি এলাকায় বর্জ্য ফেলা যাবে না,নির্দিষ্ট স্টেশনে বর্জ্য যেতে হবে, বর্জ্য ভাগ করে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে হবে; প্রতিমাসে কর্মকর্তাদের বস্তি ও স্টেশন মনিটরিং এবং ভিজিট করতে হবে; বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করা ও বর্জ্যকে পুনরায় ব্যবহার করার পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে এবং স্কুলের শিক্ষার্থী ও যুবদের সাথে নিয়ে সচেতনতামূলক কর্মসূচি অব্যাহত রাখা।
আলোচনায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (জলবায়ু পরিবর্তন অনুবিভাগ) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, আমরা কাজ করি ডাবল সোলের ভিত্তিতে। সবার ধারণা পরিবেশ অধিদপ্তর কোনো কাজ করে না। কিন্তু যখন আমরা এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করি। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ছাড়পত্র দেওয়া বন্ধ রাখি, ছাড়পত্র বাতিল করি, মামলা করি; তখন তারা বলে পরিবেশ অধিদপ্তর বাংলাদেশ উন্নয়নের একমাত্র বাধা। আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রগতি হচ্ছে না পরিবেশ অধিদপ্তরের এই বাধার জন্য। এখন আমরা কি বলব, আপনারাই বলেন আমরা কোনদিকে যাবো।
তিনি আরও বলেন, ৫০/৬০ বছর আগে প্লাস্টিক আবিষ্কার করেছিল আমেরিকা, তখন প্লাস্টিকের জয়জয়কার। পলিথিন ২০০২ সালে আমরা নিষিদ্ধ করেছি। যেগুলো দিয়ে আমরা কাজ করব, সে ইকুইপমেন্টগুলোর ঘাটতি নেই। আমি কথার ফুলঝুরি দিয়ে বলতে চাই না যে, এই অর্জন করেছি, সেই অর্জন করেছি। আমাদের অনেক ব্যর্থতা আছে। প্লাস্টিক দূষণ অর্থাৎ পলিথিন ব্যবহার বন্ধে অভিযান পরিচালনা করতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। এই ব্যর্থতার দায় নিয়ে আমরা বসে যায়নি। কারণ পরিবেশ অধিদপ্তরের জনবলের ঘাটতি ছিল। বিভিন্ন কারণেই এ ঘাটতি ছিল। গত এক বছরের মধ্যে এই ঘাটতিটা আমরা অনেকাংশেই পূরণ করেছি। আমরা আশা করি, আগামী জুলাইয়ের মধ্যে ৬৪ জেলায় পরিবেশ অধিদপ্তরে অফিসের জনবল ঘাটতি পূরণ করতে পারব।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. দেবাশীষ কুন্ডু বলেন, আমরা জাতিগতভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নটাকে সভা-সেমিনারে যতটা উচ্চারণ করেছি, ততটা ব্যক্তিগত জীবনে মানার চেষ্টা করিনি। আর সেই কারণেই আমি যখন সকাল ১০টায় ক্লাস নিতে যাই, তখন দেখি সিঁড়ি পরিষ্কার করা হচ্ছে, ওয়াশরুম পরিষ্কার করা হচ্ছে। সম্ভবত পৃথিবীতে এমন কোনো দেশ নেই, যেখানে দিনের বেলা রাস্তাঘাট পরিষ্কার করা হয়। পৃথিবীতে এমন কোন দেশ আপনি পাবেন না, যেখানে ডাস্টবিনগুলো ফুল গাছের মতো রাস্তার ধারে শোভা পায়। আর এটি বলে দেয় আমরা কতটা অসভ্য। সুতরাং একটি দেশ কত দ্রুত সভ্য হয়ে উঠবে তা নির্ধারণ করে, তাদের ময়লা-আবর্জনার ব্যবস্থাপনাকে কিভাবে দেখে। কাজেই আমরা সেইসব সভ্যতা থেকে আমরা অনেক দূরে অবস্থান করছি।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান। আরও বক্তব্য রাখেন- পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (বায়ুমান ব্যবস্থাপনা) সৈয়দ নজমুল আহসান, দুঃস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্র (ডিএসকে) নির্বাহী পরিচালক ডা. দিবালোক সিংহ, বারসিক পরিচালক রোমাইসা সামাদ প্রমুখ। আলোচনায় ধারণাপত্র উত্থাপন করেন গবেষক পাভেল পার্থ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সানজিদা জাহান আশরাফী এবং প্রারম্ভিক শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন ঢাকা কলিং প্রজেক্ট ম্যানেজার ফেরদৌস আহমেদ।
এমএইচএন/এনএফ