এইউবির সাবেক ভিসি ও তার ছেলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ
এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (এইউবি) সাবেক ভিসি আবুল হাসান মুহাম্মদ সাদেকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন দুর্নীতি বিরোধী শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ছাত্র ঐক্য পরিষদ। সার্টিফিকেট বাণিজ্য, অর্থ পাচার, লুটপাট ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ও প্রতিকার চেয়ে বাংলাদেশ মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার পরিচালকের কাছে অভিযোগ দেয় সংগঠনটি।
মঙ্গলবার (৬ জুন) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ইউজিসির সামনে অবস্থান কর্মসূচি ও মানববন্ধন করে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ছাত্র ঐক্য পরিষদ।
বিজ্ঞাপন
এশিয়ান ইউনিভার্সিটির সরকার ও রাজনীতি বিভাগের প্রধান এবং সিন্ডিকেট সদস্য ড. এম. আনিছুর রহমান বলেন, ‘সাবেক ভিসি আবুল হাসান মুহাম্মদ সাদেক, তার স্ত্রী সালেহা সাদেক ও তাদের ছেলে ট্রাস্ট চেয়ারম্যানের সীমাহীন দুর্নীতি-অনিয়ম, আয়কর ফাঁকি, ১০ হাজার কোটি টাকার এফডিআর, পাচার করে জঙ্গি অর্থায়ন ও ঢাকাতে ১০০ বিঘা জমিসহ অসংখ্য ফ্ল্যাট-বাসা ক্রয় করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর গত ১৬ বছরে যথাযথ প্রক্রিয়ায় সরকারি অডিট না হওয়ায় সাবেক ভিসি আবুল হাসান এম সাদেক, ট্রাস্ট চেয়ারম্যান জাফার সাদেক, ট্রাস্ট সদস্য সালেহা খাতুন আয়কর ফাঁকি দিয়ে সীমাহীন দুর্নীতি করে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার ও নামে বেনামে কয়েক শতাধিক এফডিআর করেছেন। ঢাকাসহ আশপাশে ১০০ বিঘার ওপরে জমি, নামে বেনামে ফ্লাট-বাড়ি কিনে অবৈধ সম্পদের কালো পাহাড় গড়ে তুলেছেন। গত ২৬ বছরে দুর্নীতির মহোৎসবে মেতে ছিলেন তারা।’
ড. এম. আনিছুর রহমান বলেন, ‘সাবেক ভিসি সাদেক ১৯৯৬ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত মিথ্যা তথ্য দিয়ে ১৬ বছর ভিসির দায়িত্বে ছিলেন। তার ছেলে জাফার সাদেক এইউবি ট্রাস্টের চেয়ারম্যান বিভিন্নভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ নিজ নামে হাতিয়ে নিয়েছেন। ১৯৯৬ সাল থেকে প্রোভিসি ও ট্রেজারার এবং ২০১২ সাল থেকে ভিসি পদে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগকৃত কোনো ব্যক্তি না থাকায় সাদেক ও জাফার সাদেক সীমাহীন দুর্নীতি করেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘১৯৯৬ সাল থেকে আজ পর্যন্ত সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক সঠিক কোনো অডিট না হওয়ায়, নিজেরা যোগসাজশে অবৈধভাবে প্রোভিসি ও ট্রেজারার নিয়োগ দিয়েছেন। জাফার সাদেক ট্রাস্টের চেয়ারম্যান হয়েও লাভজনক ৮টি পদ একা দখল করে রেখেছেন। জাফার সাদেক ট্রাস্ট চেয়ারম্যান হয়েও অবৈধভাবে আইকিউএসির ডিরেক্টর হয়ে এইচইকিউপি প্রোজেক্টের সরকারি কোটি টাকা কোনো কাজ ছাড়াই গায়েব করেছেন। তিনি ট্রাস্টের চেয়ারম্যান হওয়া সত্ত্বেও কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে মাসে ৭৫ হাজার টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ড থেকে দীর্ঘ ১০ বছরেরও অধিক সময় ধরে আত্মসাৎ করছেন।’
ড. এম. আনিছুর রহমান বলেন, ‘খন্ডকালীন শিক্ষকদের বেতন কোর্স ও সেমিস্টারপ্রতি ৬ হাজার টাকা। খন্ডকালীন শিক্ষকদের ১০ শতাংশ ভ্যাট কাটা হলেও এ নিয়ে কেউ কিছু বলতে পারে না। দুর্নীতির সুবিধার জন্য বিগত সরকার বিরোধী আন্দোলনের সময় বাসে অগ্নিসংযোগ পেট্রল সন্ত্রাসী জঙ্গি এস এম ইয়াসিন আলীকে ট্রাস্টের ভুয়া সদস্য দেখিয়ে নীতি নির্ধারণী কমিটি ও সিন্ডিকেটের সদস্য করে, কিন্তু তিনি ট্রাস্টের সদস্য নয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত রাজাকার কামারুজ্জামানের বিশেষ সহযোগী ক্যাডার এসএম ইয়াসিন, সার্টিফিকেট বাণিজ্যের হোতা সাদেকের পিএস বোমা সন্ত্রাসী মাহবুবুর রহমান ও বোমা সন্ত্রাসী জাকির হোসেনের মাধ্যমে চলছে সকল দুর্নীতি ও জঙ্গি অর্থায়নের কাজ। এরা দরিদ্র ঘরের হয়েও প্রত্যেকেই রাতারাতি গাড়ি, বাড়ি, ফ্লাট ও ইন্ডাস্ট্রির মালিক বনে গেছেন। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে তারা নিজেদের সুবিধামতো ও যোগসাজশে অডিট রিপোর্ট তৈরি করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে জমা দিলেও তা গৃহীত হয়নি।’
নিজেদের অনিয়ম, দুর্নীতি ও জঙ্গি অর্থায়নের বিষয়ে এইউবির ট্রাস্টের চেয়ারম্যান জাফার সাদেক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘যারা অভিযোগ দিচ্ছে তারা নিজে থেকেই আর ভার্সিটিতে আসছেন না। তারা এখন ইউজিসিতে অভিযোগ দিয়ে মানববন্ধন করছে। তবে অনিয়ম, দুর্নীতি ও জঙ্গি অর্থায়নের বিষয়টি মিথ্যা বলেই ফোন কেটে দেন।’
পরে এই প্রতিবেদক চেয়ারম্যান জাফার সাদেককে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি।
ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার পরিচালক মো. ওমর ফারুখ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসির বিরুদ্ধে তদন্ত করতে কমিটি গঠন করেছি। তদন্ত কমিটি তাদের সার্বিক বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিবে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর অভিযোগের সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এসআর/ওএফ