এবার বাড়ল গ্যাসের দাম, সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়?
বাজারে এমন কোনো পণ্য নেই যার দাম বাড়েনি, সব শেষে আজ বাড়ল গ্যাসের দাম। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে আবার নতুন করে আবাসিক গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার উপর চাপ বাড়ানো ছাড়া আর কিছুই না। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, গ্যাসের দাম বৃদ্ধি, সাধারণ মানুষ কী করবে?
রাজধানীর মালিবাগ এলাকার জামালের চায়ের দোকানে ৫/৬ জন ক্রেতা চায়ে চুমুক দিতে দিতে টিভির পর্দায় চোখ রাখছিলেন। খবরে তখন গ্যাসের দাম বৃদ্ধির নতুন ঘোষণাটি প্রচারিত হচ্ছিল। এমন খবর জানতে পেরে তাৎক্ষণিক চায়ের দোকানে থাকা ক্রেতারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা শুরু করেন। নতুন করে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির খবরে চায়ের কাপ হাতেই সমালোচনার ঝড় তোলেন এসব সাধারণ মানুষ। তাদের মধ্যে তৌহিদুর রহমান নামের একজন স্থানীয় বাসিন্দা কথাগুলো বলছিলেন। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন পাশে থাকা অন্যরা।
বিজ্ঞাপন
পরিচয় দিয়ে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তৌহিদুর রহমান বলেন, আমরা সাধারণ মানুষ কোথায় যাব? দ্রব্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বগতির বাজারে পরিবার পরিজন নিয়ে টিকে থাকাই দায় হয়ে উঠেছে। বাজারে এমন কোনো জিনিস নেই যার দাম বাড়েনি। আজ আবার বাড়ল গ্যাসের দাম। এভাবে সব জিনিসই সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে দিন দিন।
মালিবাগে ওই চায়ের দোকানের সামনে থেকে বাংলামোটর যাওয়ার জন্য রিকশা ঠিক করার সময় চালক বজলু মিয়া জানালেন ভাড়া দিতে হবে ৬০ টাকা। তিনি বলেন, আগে ৪০/৫০ টাকায় যেতাম কিন্তু এখন সব জিনিসের দাম বাড়তি তাই ভাড়া বেশি না নিলে পোষায় না। এই চায়ের দোকানেই শুনলাম আজ থেকে আবার বেড়েছে গ্যাসের দাম....সবাই তো সব জিনিসের দাম বাড়ায়, যে কারণে আমরা ভাড়া বাড়িয়ে না নিলে চলব কেমনে?
বাংলামোটর ফুটওভার ব্রিজ সংলগ্ন গলির ভেতর একটি ভাড়া বাসায় পরিবারসহ থাকেন বেসরকারি চাকরিজীবী ফিরোজ আহমেদ। নতুন করে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি বিষয়ে আলাপকালে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জনজীবন যখন দুর্বিষহ তখন আবাসিক গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি একেবারেই যৌক্তিক নয়। মানুষ পদে পদে মূল্যবৃদ্ধির খেসারত দিচ্ছে। বাজার এমন কিছু নেই, যার দাম বৃদ্ধি পায়নি। বাজারে গেলে সব কিছু কম কম করে কিনতে হয়, কাঁচাবাজার থেকে শুরু করে নিত্যপণ্য সব কিছুর দামই বেশি। এরমধ্যে আজ থেকে যুক্ত হলো আবার গ্যাসের দাম বৃদ্ধি। দাম বৃদ্ধির এই শহরে আমরা কীভাবে টিকে থাকব, আমাদের মতো সাধারণ মানুষের দিকে কি কেউ তাকাবে না? সবাই কি নিজ নিজ জায়গা থেকে সব কিছুর দাম বাড়িয়েই যাবে?
ঢাকায় একটি গার্মেন্টসে চাকরি করেন ফরিদুল ইসলাম নামের একজন। একই গার্মেন্টসে তার স্ত্রী তহমিনা খাতুনও চাকরি করেন। ঢাকায় জীবন সংসার পরিচালনা করতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে উল্লেখ করে ফরিদুল ইসলাম বলেন, ভাই দুজন মিলে যে বেতন পাই তা সংসার চালাতেই শেষ হয়ে যায়। ইদানিং বাজারে গেলে যে পণ্যের দাম সবচেয়ে কম এমন সব পণ্য দেখে বাজার করি। সব পণ্যের দাম বাড়তি, সেই সঙ্গে বাসা ভাড়াতেই যায় সিংহভাগ টাকা। মাস শেষে টানাপড়েন লেগেই থাকে। এর মধ্যে বাড়ল গ্যাসের দাম। এই বৃদ্ধির টাকাটা আমি কীভাবে দেব?
বেসরকারি চাকরিজীবী নূরুন নাহীদের ভাড়া বাসায় কয়েক মাস আগেই মিটারের গ্যাসের সংযোগ পেয়েছেন। আজ গ্যাসের দাম বৃদ্ধির পর আলাপকালে তিনি বলেন, আমাদের ৩ সদস্যের পরিবার আগে মাসে ৯০০ টাকার গ্যাসে মাস চলে যেত। এরমধ্যে আবার ৬০ টাকা মিটার চার্জ কেটে নিত। প্রতিটি জিনিসের দাম বৃদ্ধির চাপ আমাদের মতো সাধারণ মানুষের ওপর আর তীব্র হচ্ছে প্রতিদিনই। সংসার চালাতেই বেতনের সব টাকা শেষ হয়ে যায়, সেখানে সঞ্চয়, বিলাসিতা তো দূরের বিষয়, টিকে থাকাই দায় হয়ে পড়েছে। বাজারে চা, বন রুটি থেকে শুরু এমন কিছু নেই যার দাম বাড়েনি।
আবাসিকে গ্যাসের এক চুলার বর্তমান দাম ৯৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯৯০ টাকা, দুই চুলা ৯৭৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ৮০ টাকা করা হয়েছে। তবে বাড়েনি সিএনজির দাম। ১ জুন থেকে নতুন দাম কার্যকর হচ্ছে।
বিকেলে এক ভার্চুয়াল সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন দাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবু ফারুক। অন্যদের মধ্য অংশ নেন কমিশনের সদস্য মকবুল ই ইলাহী চৌধুরী, বজলুর রহমান ও কামরুজ্জামান।
আবু ফারুক বলেন, আবাসিকে এক চুলার বর্তমান দাম ৯৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯৯০ টাকা, দুই চুলা ৯৭৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ৮০ টাকা করা হয়েছে। প্রি-পেইড মিটার ব্যবহারকারী গ্রাহকদের ক্ষেত্রে ১২ দশমিক ৬০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৮ টাকা, সার উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাসের দর ঘনমিটারপ্রতি ৪ দশমিক ৪৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৬ টাকা করা হয়েছে। সিএনজির দাম ৪৩ টাকা অপরিবর্তিত রয়েছে।
এএসএস/জেডএস