এবারের বইমেলা সাজবে মুজিববর্ষ-সুর্বণজয়ন্তীর আবহে
প্রচলিত রীতি অনুসারে ফেব্রুয়ারিতে না হলেও আগামী মার্চে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এবারের অমর একুশে বইমেলা। ‘হে স্বাধীনতা’ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে অনুষ্ঠিত হবে চলতি বছরের বইমেলা। আর এবারের মেলা সাক্ষী হবে বঙ্গবন্ধু জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুর্বণজয়ন্তীর। তাই এ দুটি বিষয়কে সামনে রেখেই মেলার কাঠামোগত সাজসজ্জা করা হবে। মেলার দুই ক্যানভাস সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর জীবনীসহ মুক্তিযুদ্ধের নানা উপজীব্যকে ফুটিয়ে তোলা হবে। এবারের মেলার নকশা প্রণয়নে কাজ করছেন স্থপতি এনামুল করিম নির্ঝর।
১৮ মার্চ শুরু হবে ভাষা আন্দোলনের চেতনার বইমেলা। চলবে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত। অর্থাৎ এবার ২৮ দিনের মেলা শেষ হবে নতুন বঙ্গাব্দ ১৪২৮ বরণের মাধ্যমে। করোনাভাইরাসের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে প্রকাশকদের দাবির প্রেক্ষিতে কমানো হয়েছে মেলার স্টল ভাড়া। বরাবরের মতো এবার ১৮ মার্চ বিকেলে বইমেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে তিনি সরাসরি মেলা উদ্বোধন করবেন নাকি ভার্চুয়ালি করবেন, সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত নয় আয়োজক বাংলা একাডেমি।
বিজ্ঞাপন
বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ও বাংলা একাডেমির পরিচালক ড. জালাল আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, এবারের বইমেলা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত হবে এবারের মেলা। মেলার কাঠামোগত বিন্যাস ও নকশায় উদ্ভাসিত হবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং মুজিববর্ষের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো। মহামারির প্রতিবন্ধকতাকে বিবেচনায় নিয়েই সুন্দর ও প্রাণবন্ত একটি মেলার আয়োজন করতে চাই।
জানা গেছে, করোনার নিউ নরমাল যুগে আয়োজকেরা এবারের বইমেলায় সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিচ্ছে স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টি। এবার মেলায় আগত লেখক, পাঠক, প্রকাশক সবাইকে বাধ্যতামূলক মাস্ক পরতে হবে। থাকবে শরীরের তাপমাত্রা নির্ণয়ের ব্যবস্থাও। স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় দূরত্ব বজায় রেখে প্যাভিলিয়ন নির্মাণের বিষয়টিও বিবেচনায় রয়েছে। শুধু তাই নয়, এক স্থান দিয়ে মেলায় আগত দর্শনার্থীদের চাপ কমাতে এবারের মেলায় আরও একটি গেট বাড়ানো হচ্ছে। মোটকথা সবদিক থেকে মেলাকে করোনা ঝুঁকিমুক্ত রাখতে নেওয়া হবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ।
বাংলা একাডেমি সূত্রে জানা গেছে, এবারের মেলায় অংশগ্রহণের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে ৫২০টি প্রকাশনা সংস্থা। আগামী ৮ থেকে ৯ মার্চের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে মেলার স্টল বরাদ্দের লটারি। এরপর লটারিতে বরাদ্দপ্রাপ্ত জায়গা বুঝিয়ে দেওয়া হবে মালিকদের। জায়গা বুঝে নেওয়ার পর মেলা শুরুর দুই দিন আগে অর্থাৎ ১৬ মার্চের মধ্যে স্টল বা প্যাভিলিয়নের সব কাজ সম্পন্ন করতে হবে প্রকাশকদের। আর করোনার ঝুঁকির কারণে সামাজিক দূরত্বের বিষয়টিকে মাথায় রেখে এই প্রথম বইমেলার প্রবেশদ্বারে যুক্ত হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন সংলগ্ন গেটটি। এছাড়া মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশের বাকি দুই প্রবেশ পথ হবে টিএসসি এবং বাংলা একাডেমির উল্টোদিকের দিকের গেট।
ড. জালাল আহমেদ বলেন, মেলার আগে টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত সড়কটি পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনের পাশে দিয়েও মেলায় প্রবেশের একটি গেট রাখার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে ফেব্রুয়ারির পরিবর্তে মার্চে মেলার কারণে ঝড়বৃষ্টির বিষয়টিকে বিশেষ বিবেচনায় রাখতে হচ্ছে। কারণ মার্চ ও এপ্রিলে বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করে। সাধারণভাবে তখন ঝড়বৃষ্টির উপদ্রব থাকে। ফলে সব চ্যালেঞ্জ মাথায় রেখে এবারের মেলার আয়োজন করতে হচ্ছে।
জানা গেছে, বরাবরের মত এবারের মেলাতেও প্রতিদিন থাকবে বিষয়ভিত্তিক সেমিনার। মূল মঞ্চের আয়োজনে আগের মতোই নৃত্য-গীত, কবিতা আবৃত্তিসহ নানা পরিবেশনায় সাজানো থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
মেলার সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী ঢাকা পোস্টকে বলেন, এবার বইমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে নতুন বাস্তবতায়। মেলার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা। তাই এবারের মেলার বিষয়ে আগে থেকে কিছু বলতে চাই না। সময় মত আপনাদের সব কিছু জানানো হবে।
প্রসঙ্গত, আগামী ১৮ মার্চ থেকে শুরু হয়ে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে এবারের একুশে বইমেলা। বাংলা একাডেমির তথ্য মতে, অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২০ এ মেলায় ৮২ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছিল। নতুন বই প্রকাশিত হয়েছিল ৪ হাজার ৯১৯টি। বাংলা একাডেমি প্রকাশ করেছিল ৪১টি নতুন বই। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমি অংশে সব মিলিয়ে ৫৬০টি প্রতিষ্ঠানকে ৮৭৩টি ইউনিট বা স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল।
এএইচআর/এসএসএইচ