রাজধানীর উত্তরা ১১ ও ১৩ নম্বর সেক্টরে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ৩০টি প্লট বেদখল করে গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ মার্কেট। জমজম টাওয়ারের পাশেই গড়ে ওঠা টিনশেড মার্কেটে রয়েছে অন্তত ৩০০টি দোকান। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সরকারি দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও রাজউকের কর্মকর্তাদের পকেটে যাচ্ছে এসব দোকানের মাসিক ভাড়া।

বৃহস্পতিবার (২ জুন) দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক মো. জাভেদ হাবীব ও বিলকিস আক্তারের সমন্বয়ে গঠিত এনফোর্সমেন্ট টিমের অভিযানে পাওয়া গেল এ ঘটনার সত্যতা। দুদকের সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) মোহাম্মদ শফিউল্লাহ অভিযানের বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, দুদক টিম প্লটগুলোর বর্তমান বরাদ্দ সংক্রান্ত তথ্য, বরাদ্দ গ্রহীতার নাম, মামলা সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে অভিযান পরিচালনা শেষে বিকেল চারটায় প্রধান কার্যালয় ফিরে আসে। তাদের প্রতিবেদন তৈরি কাজ চলমান রয়েছে।

দুদক জানায়, রাজধানীর উত্তরার সোনারগাঁও জনপথ সড়কের পাশে উত্তরা ১১ ও ১৩ নম্বর সেক্টরের আওতায় রাজউকের ৩২টি প্লটের বিভিন্ন অবৈধ দখল ও সরকারি জমিতে গড়ে তোলা মার্কেটের দোকান ভাড়া দিয়ে অবৈধ লেনদেনের অভিযোগে এনফোর্সমেন্ট টিম অভিযান পরিচালনা করে।

অভিযানে গিয়ে দুদক টিম দেখতে পায়, উত্তরা আবাসিক এলাকার সোনারগাঁও জনপথ সড়কের উভয় পাশে ১৩ ও ১১ নম্বর সেক্টরে মোট ৩০টি প্লটের মধ্যে কয়েকটির কিস্তি পরিশোধের ব্যর্থতায় বরাদ্দ বাতিল হয়েছে। কয়েকটি বরাদ্দ দেওয়া হয়নি এবং কয়েকটির মালিকানা নিয়ে মামলা চলছে। কিছু প্লট খালি রয়েছে। এসব প্লটে অবৈধ রেস্টুরেন্ট, দোকানপাট, ট্রাকস্ট্যান্ড, কাভার্ডভ্যান স্ট্যান্ড, রেন্ট-এ-কারের দোকান, অবৈধ ফার্নিচার মার্কেট গড়ে উঠেছে। ২০১৮-১৯ সালে রাজউক উচ্ছেদ অভিযান চালালেও কিছুদিনের মধ্যেই পুনরায় তা দখল করেন অবৈধ দখলদাররা।

এ বিষয়ে রাজউক উত্তরা আঞ্চলিক অফিসের উপ-পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-২) মো. আমিনুল ইসলাম দুদক টিমকে জানান, রাজউকের সাধারণ সভায় এরূপ অবৈধ দখলকৃত প্লটসমূহ নিলাম বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিক্রয় করার জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ সংক্রান্ত পরবর্তী কার্যক্রম রাজউক অফিসে চলমান রয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানা যায়, রাজধানীর উত্তরার সোনারগাঁও জনপথ সড়কের পাশেই রাজউকের ৩১ থেকে ৩২টি প্লট। এসব প্লটের কাগজে-কলমে মালিকানা এখনো সরকারি সংস্থাটির। তবে সেখানে গড়ে উঠেছে মার্কেট। উত্তরা সোনারগাঁ জনপথ সড়কের দুপাশ ১১ ও ১৩ নম্বর সেক্টরের আওতায়। জমজম টাওয়ারের পর থেকে দুই পাশেই ফুটপাত সংলগ্ন রাজউকের জায়গায় টিনশেড মার্কেট গড়ে উঠেছে। 

এ মার্কেটে রয়েছে প্রায় ৩০০টি দোকান। এরমধ্যে ২৬০টি ফার্নিচারের দোকান। বাকিগুলোর মধ্যে রয়েছে রেস্টুরেন্ট, গাড়ির গ্যারেজ, বেডিং তৈরির দোকানসহ কাঁচাবাজার। জমজম টাওয়ারের পাশ থেকে ময়লার মোড় পর্যন্ত প্রায় সাত-আটশ মিটার জায়গায় অবৈধভাবে এসব স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। 

এসব দোকান থেকে থেকে মাসিক ভাড়া উঠছে প্রায় অর্ধকোটি টাকা। ভাগ-বাটোয়ারাও হয় একাধিক পর্যায়ে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ ও রাজউকের কর্মকর্তা পাচ্ছেন এ টাকার ভাগ। মাস শেষ না হতেই ভাগের টাকা পৌঁছে যায় তাদের কাছে। সরকারি জমি নিজেদের কবজায় রাখতে কিছু প্লটের ক্ষেত্রে ঠুকে রাখা হয়েছে নানা মামলা।

অভিযোগ রয়েছে, রাজউকের প্লট দখলের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৫১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরসহ ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতারা। প্লট রাজউকের হলেও ভাড়ার চুক্তি করেন কাউন্সিলর। নিজেই বুঝিয়ে দেন দোকানদারদের। রাজউকের প্লটের উপর স্থাপনা নির্মাণ, ভাড়া আদায় ও টাকার ভাগ-বাটোয়ারার বিষয়ে সমঝোতা চুক্তিপত্রও দেওয়া হয়েছে।

আরএম/আরএইচ