চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের রাজস্ব শাখার অফিস সহায়ক পদের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় গত ১১ মার্চ। ওই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ২৩৭ জন প্রার্থীর মৌখিক পরীক্ষা ছিল আজ বুধবার। মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ৩৬ জন প্রার্থীর পারফরমেন্স ও আচরণ নিয়ে সন্দেহ জাগে বোর্ড সদস্যদের। তাদের সবার লিখিত পরীক্ষার নম্বর ছিল অনেক বেশি। কিন্তু মৌখিক পরীক্ষায় তারা কিছুই পারছিলেন না।

সন্দেহ হওয়ায় আজ (বুধবার) পুনরায় তাদের লিখিত পরীক্ষার আয়োজন করা হয়। এতে একই প্রশ্নপত্রের কোনো উত্তর লিখতে পারছিলেন না পরীক্ষার্থীরা। তাদের আগের লিখিত পরীক্ষার খাতার সঙ্গে আজকের হাতের লেখারও অমিল পাওয়া যায়। পরীক্ষকরা তাদের জেরা শুরু করলে এক পর্যায়ে তারা স্বীকার করেন, লিখিত পরীক্ষা তারা নিজেরা দেননি; অন্যরা তাদের হয়ে প্রক্সি দেন। 

তবে যারা এই পরীক্ষার্থীদের হয়ে প্রক্সি দিয়েছেন তাদের ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে সে বিষয়ে কিছু জানাননি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক।

এ ঘটনায় ১৫ জনকে আটক করেছে জেলা প্রশাসন। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে পাঁচজনকে অর্থদণ্ড এবং ১০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

আজকের লিখিত পরীক্ষা শুরুর আগে বিভিন্ন অজুহাতে সন্দেহভাজন ৩৬ জনের মধ্যে ২১ জন প্রার্থী পালিয়ে যান। কর্তৃপক্ষ ধারণা করছে তারাও লিখিত পরীক্ষায় প্রক্সির আশ্রয় নিয়েছিলেন।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন চট্টগ্রাম জেলার রাজস্ব প্রশাসনের রাজস্ব শাখাসহ ১৫টি উপজেলা ভূমি অফিস এবং ৬টি মহানগর সার্কেল ভূমি অফিসসমূহে অফিস সহায়কের শূন্য পদে জনবল নিয়োগের লক্ষ্যে গত ১১ মার্চ লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। লিখিত পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে ২৩৭ জন চাকরি প্রার্থীর আজ মৌখিক পরীক্ষার আয়োজন করে জেলা প্রশাসন।

দণ্ডপ্রাপ্ত পরীক্ষার্থীরা হলেন মো. ইবরাহীম, নাইমুল ইসলাম, মুরশেদুল আলম, মো. জুনায়েদ, বিপ্লব সুশীল, মনিদীপা চৌধুরী, মোজাম্মেল হোসেন, আলী আজগর, তম্ময় দে, নন্দন দাশ, মান্না দাশ, প্রীতম চৌধুরী, শেখর দাশ, রহিম উদ্দিন ও আসাদুজ্জামান।

বুধবার (১ জুন) বিকেলে বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নাজমুল আহসান।

তিনি বলেন, ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন চট্টগ্রাম জেলার রাজস্ব প্রশাসনের রাজস্ব শাখাসহ ১৫টি উপজেলা ভূমি অফিস এবং ৬টি মহানগর সার্কেল ভূমি অফিসসমূহে অফিস সহায়কের শূন্য পদে জনবল নিয়োগের লক্ষ্যে গত ১১ মার্চ লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। লিখিত পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে ২৩৭ জন চাকরি প্রার্থীর আজ মৌখিক পরীক্ষার আয়োজন করে জেলা প্রশাসন। কিন্তু মৌখিক পরীক্ষায় এই প্রার্থীরা কোনো প্রশ্নেরই সঠিক উত্তর দিতে পারেননি। বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ জাগে মৌখিক পরীক্ষা বোর্ডের সদস্যদের। পরে বিষয়টি নিশ্চিত হতে তাৎক্ষণিকভাবে আরও একটি লিখিত পরীক্ষার আয়োজন করা হয়। গত ১১ মার্চ যেসব প্রশ্ন দিয়ে পরীক্ষাটি নেওয়া হয়েছিল সেসব প্রশ্ন আবারও দেওয়া হলে ওই পরীক্ষার্থীরা তার উত্তর দিতে পারেননি।

নাজমুল আহসান বলেন, আটক পরীক্ষার্থীদের খাতা যাচাই করে প্রাপ্ত নম্বরের তারতম্যের পাশাপাশি তাদের হাতের লেখায়ও অমিল পাওয়া যায়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা প্রক্সির আশ্রয় নিয়ে লিখিত পরীক্ষা পাস করার বিষয়টি স্বীকার করেন। লিখিত পরীক্ষার প্রবেশপত্র ফটোশপ করে অন্য প্রার্থীকে দিয়ে পরীক্ষায় পাস করেন তারা। পরে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ৫ জনকে অর্থদণ্ড ও অন্য ১০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।

তবে যারা এই পরীক্ষার্থীদের হয়ে প্রক্সি দিয়েছেন তাদের ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে সে বিষয়ে কিছু জানাননি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক।

কেএম/এসকেডি/জেএস