ক্যাসিনোসহ বিভিন্ন অবৈধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অভিযোগের দায় থেকে মুক্তি পেলেন গণপূর্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীসহ শীর্ষ পদে থাকা ১৩ প্রকৌশলী। বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সচিব মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদারের সই করা এক আদেশে তাদেরকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। 

এ বিষয়ে দুদক পরিচালক (জনসংযোগ) প্রনব কুমার ভট্টাচার্য্য ঢাকা পোস্টকে বলেন, দুদকের অনুসন্ধান প্রমাণিত না হওয়ায় এমন সিদ্ধান্ত আসতে পারে। এ বিষয়টি আমি অবগত নই।

দুর্নীতির অভিযোগ থেকে অব্যাহতি প্রাপ্তরা হলেন- গণপূর্ত অধিদপ্তরের (আজিমপুর) নির্বাহী প্রকৌশলী ইলিয়াস আহমেদ, ঢাকা গণপূর্ত জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. মোসলেহ উদ্দীন আহাম্মদ, নগর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শওকত উল্লাহ, গণপূর্ত অধিদপ্তরের তদন্ত কোষ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ফজলুল হক, মহাখালী গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আফছার উদ্দিন, ঢাকা গণপূর্ত সার্কেল-১ এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এ কে এম সোহরাওয়ার্দী, শেরে বাংলা গণপূর্ত বিভাগ-৩ এর নির্বাহী প্রকৌশলী স্বপন চাকমা, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (অবসরপ্রাপ্ত) আব্দুল মোমেন চৌধুরী, ঢাকা সার্কেল-১ এর অবসরপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুল কাদের চৌধুরী, ঢাকা গণপূর্ত সার্কেল -৩ এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. মাফেন, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. মইনুল ইসলাম, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী মুনিফ আহমেদ ও একই প্রতিষ্ঠানের সাময়িক বরখাস্তকৃত আশ্রাফুজ্জামান।

তাদের বিরুদ্ধে জিকে শামীমসহ প্রভাবশালীদের শত শত কোটি টাকা ঘুষের মাধ্যমে ঠিকাদারি কাজ দিয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ছিল। এছাড়াও ক্যাসিনো ব্যবসা ও অন্যান্য অবৈধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে শত কোটি টাকা বিদেশে পাচার ও জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ ছিল। ওই সব অভিযোগ দুদকের অনুসন্ধানে প্রমাণিত না হওয়ায় অভিযোগগুলো সমাপ্তি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে দুদকের আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে। 

২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে ক্যাসিনোর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বেশ কয়েকজন প্রভাবশালীদের গ্রেপ্তার করে। এরই ধারাবাহিকতায় ওই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ক্যাসিনোর মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনকারীদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। শুদ্ধি অভিযান শুরুর পর অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এ পর্যন্ত ২২ মামলা দায়ের করে দুদক। প্রায় ২০০ জনের তালিকা নিয়ে অনুসন্ধান চালাচ্ছে দুদক।

এখন পর্যন্ত যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তারা হলেন- ঠিকাদার জি কে শামীম, বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হক এনু ও তার ভাই রুপন ভূইয়া, অনলাইন ক্যাসিনোর হোতা সেলিম প্রধান, বিসিবি পরিচালক লোকমান হোসেন ভূইয়া, কলাবাগান ক্লাবে সভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজ, কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান, তারেকুজ্জামান রাজীব, ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, এনামুল হক আরমান, যুবলীগ নেতা জাকির হোসেন ও তার স্ত্রী আয়েশা আক্তার সুমা,কাউন্সিলর এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ, যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক আনিসুর রহমান ও তার স্ত্রী সুমি রহমান, ব্যবসায়ী মো. সাহেদুল হক, গণপূর্তের সিনিয়র সহকারী প্রধান মো. মুমিতুর রহমান ও তার স্ত্রী মোছা. জেসমীন পারভীন এবং গণপূর্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী উৎপল কুমার দে ও তার স্ত্রী গোপা দে। মামলাগুলোর মধ্যে অধিকাংশের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে। 

দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্ব আট সদস্যের টিম অনুসন্ধান ও তদন্তের দায়িত্ব পালন করছেন। টিমে অপর সদস্যরা হলেন- উপ-পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম, মো. সালাহউদ্দিন, গুলশান আনোয়ার প্রধান, সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী, সাইফুল ইসলাম, আতাউর রহমান ও মোহাম্মদ নেয়ামুল আহসান গাজী।

আরএম/ওএফ