মাঠ ছাড়া কীভাবে বাঁচবে ওরা?
শিশুদের আউটডোর অ্যাক্টিভিটিস আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। তাদের সব সময়ের খেলার সাথী হয়ে উঠেছে মোবাইলসহ বিভিন্ন গ্যাজেট। এভাবে দিনদিন তারা বিভিন্ন ডিজিটাল ডিভাইসে আসক্ত হয়ে পড়ছে। ফলে একদিকে যেমন শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি নানা রকম রোগ বাসা বাঁধছে দেহে।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, আউটডোর অ্যাক্টিভিটিস কমে যাওয়ায় ভিটামিন ‘ডি’ অভাবজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুদের সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। এছাড়া শিশুদের দেরিতে কথা বলা, অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার সৃষ্টি, মানসিক সমস্যা ও শারীরিক সুস্থ গঠনে বাধাগ্রস্ত হওয়ার সংখ্যা বেড়ে চলছে।
বিজ্ঞাপন
এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী প্রজন্ম পঙ্গু ও অথর্ব প্রজন্মে রূপান্তরিত হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, শিশুদের আউটডোর অ্যাক্টিভিটিস বা খেলাধুলা না করার কারণ মাঠের স্বল্পতা। অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও দখলের কারণে দিনদিন শিশুদের খেলার মাঠ কমে যাচ্ছে। শিশুদের আউটডোর অ্যাক্টিভিটিসের জন্য খোলা জায়গা তেমন নেই। এতে করে নতুন প্রজন্মের শিশুদের মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দিচ্ছে।
মাঠ সংকট বা দখলের চিত্র বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পরিসংখ্যানেও দেখা গেছে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স নামের একটি সংগঠনের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার প্রায় ৭০ ভাগ মাঠ এখন দখল হয়ে গেছে। সংস্থাটির পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডে খেলার মাঠ আছে ২৩৫টি৷ এর মধ্যে মাত্র ৪২টি মাঠ মানুষের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে। এছাড়া সরকারি মালিকানায় থাকা সাতটি মাঠও ব্যবহার করতে পারছেন না মানুষ। সবমিলিয়ে ৩০ শতাংশ মাঠ ব্যবহারযোগ্য হলেও বাকি ৭০ শতাংশ নানাভাবে দখলে রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আয়তন ও ঢাকার জনসংখ্যা অনুযায়ী এ শহরে ৬১০টি মাঠ থাকা প্রয়োজন। কিন্তু আছে মাত্র ২৩৫টি, যার মধ্যে ৭০ শতাংশ দখল হয়ে আছে।
অন্যদিকে, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার (ড্যাপ) খসড়া অনুযায়ী, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ৪১টি ওয়ার্ডে কোনো মাঠ নেই। এর মধ্যে ডিএনসিসির ১০টি ওয়ার্ডে ও ডিএসসিসির ৩১টি ওয়ার্ডে কোনো মাঠ নেই।
যেভাবে দখল হচ্ছে মাঠ
বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার সূত্রে জানা যায়, অনেক বছর ধরে স্থানীয় ও প্রভাবশালী কিছু কুচক্রী মহল পেশিশক্তি ও রাজনৈতিক ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে রাজধানীতে মাঠ দখলের উৎসবে মেতে উঠেছে। কখনও ক্লাবের নামে, মার্কেট বা হাটবাজারের নামে, আবার কখনও ময়লা ফেলার নামে মাঠ দখল হচ্ছে রাজধানীতে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, সরকারি স্থাপনার নামেও মাঠ দখলের পাঁয়তারা করা হচ্ছে।
সম্প্রতি রাজধানীর কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠটি দখলের চেষ্টা সবার সামনেই হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কলাবাগান থানার ভবন নির্মাণের নামে মাঠটি দখল করতে চেয়েছিল পুলিশ। এর প্রতিবাদে মাঠে নামে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যরা। প্রতিবাদ বন্ধ করতে তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষার অন্যতম আন্দোলনকারী ও সমাজকর্মী সৈয়দা রত্না ও তার ছেলেকে আটক করেছিল কলাবাগান থানা পুলিশ। অবশ্য প্রতিবাদের মুখে তাদের ছাড়তে বাধ্য হয় পুলিশ।
এরই মধ্যে দেশব্যাপী বিষয়টি নিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে মাঠটি ফিরে পান স্থানীয়রা।
আউটডোর অ্যাক্টিভিটিস কমে যাওয়ায় ভিটামিন ‘ডি’ অভাবজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুদের সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। এছাড়া শিশুদের দেরিতে কথা বলা, অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার সৃষ্টি, মানসিক সমস্যা ও শারীরিক সুস্থ গঠনে বাধাগ্রস্ত হওয়ার সংখ্যা বেড়ে চলছে
যেভাবে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পর্যাপ্ত মাঠ না থাকায় সারা দেশে বিশেষ করে রাজধানীতে শিশুদের খেলাধুলা ও আউটডোর অ্যাক্টিভিটিস কমে গেছে। ফলে শিশুদের শরীরের ভিটামিন ‘ডি’ এর ঘাটতি দেখা দিচ্ছে, যা রোদের মাধ্যমে শিশুর চামড়ায় সৃষ্টি হয়। খেলাধুলা না করা ও মানুষজনের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া না হওয়ায় তাদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হওয়া থেকে শুরু করে নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।
এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গৃহবন্দি থাকায় দেশের অধিকাংশ শিশু ভিটামিন ‘ডি’ এর অভাবে ভুগছে। ফলে তাদের দেহে নানা রকম শারীরিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। ২০১৯ সালের জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য জরিপে দেখা গেছে, দেশের ১২ দশমিক ৬ শতাংশ শিশু মানসিক সমস্যায় ভুগছে। জরিপে উঠে আসা শিশুদের মানসিক সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল— অদ্ভুত আচরণ, বিরক্তি সৃষ্টি হওয়া, নিজের ক্ষতি করা, ভাষাগত সমস্যা, পরিবারের অবাধ্যতা, হাই-পারঅ্যাক্টিভিটি ও সন্দেহ-জড়তা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুদের মধ্যে এ ধরনের সমস্যা তখনই দেখা দেয়, যখন তারা খেলাধুলা বা আউটডোর অ্যাক্টিভিটিসে অংশ না নেয়। ঘরে বন্দি থেকে সারা দিন বিভিন্ন ডিভাইসে মজে থাকলে শিশুদের এ ধরনের মানসিক সমস্যা দেখা দেয়।
এ বিষয়ে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ডা. তাজুল ইসলাম বলেন, আসলে আমরা তো সবকিছুতেই সঙ্কুচিত হয়ে যাচ্ছি। আমাদের ফুসফুস রয়েছে যেন আমরা শ্বাস বা অক্সিজেন নিতে পারি, না হলে তো আমরা বাঁচতাম না। তেমনি খেলাধুলার মাঠ শিশুদের জন্য ফুসফুসের মতো কাজ করে। তাদের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক বিকাশ নির্ভর করে তারা ক্রীড়াঙ্গনে কতটুকু খেলাধুলা, দৌড়ঝাঁপ ও সমবয়সী বন্ধুদের সঙ্গে কীভাবে মিথস্ক্রিয়া করে। এগুলোর ওপর ভিত্তি করে তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটে। এছাড়া সামাজিক আচরণ, তাদের মূল্যবোধ, কাউকে সাহায্য করার মানসিকতা, সামাজিক বিধিনিষেধ মানার প্রবণতা তৈরি হয়। খেলাধুলার মাঠ শিশুকে সুনাগরিক তৈরি করার একটি ল্যাবরেটরি। কিন্তু পর্যাপ্ত মাঠ না থাকায় শিশুরা এসব ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছে। তাদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স নামের একটি সংগঠনের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার প্রায় ৭০ ভাগ মাঠ এখন দখল হয়ে গেছে। সংস্থাটির পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডে খেলার মাঠ আছে ২৩৫টি৷ এর মধ্যে মাত্র ৪২টি মাঠ মানুষের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে
শিশুদের শরীরে ভিটামিন ‘ডি’ এর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বেসরকারি হাসপাতাল স্কয়ারের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. শ্রাবণী তোহারা বলেন, বাচ্চাদের শরীরের বিকাশের জন্য ভিটামিন ‘ডি’ খুব প্রয়োজন। ভিটামিন ‘ডি’ খাবারের মাধ্যমে পাওয়া যায় না। এটি তৈরি হয় সূর্যের আলোর মাধ্যমে। বাচ্চারা মাঠে যাচ্ছে না, ঘরের ভেতরে রোদ আসে না, কারণ একটা বাড়ির সঙ্গে একটা বাড়ি এমনভাবে লাগানো থাকে যে ঘরের ভেতরে রোদ যাওয়ার সুযোগ থাকে না। এ অবস্থায় আমাদের গৃহবন্দি বাচ্চাগুলোর দেহে ভিটামিন ‘ডি’ তৈরি হচ্ছে না। একটা জরিপ দেখা গেছে, আমাদের দেশের অধিকাংশ বাচ্চা ভিটামিন ‘ডি’ এর অভাবে ভুগছে। এটা আগের থেকে অনেক বেড়ে গেছে। এর একমাত্র কারণ হলো বাচ্চারা রোদের সংস্পর্শে যেতে পারছে না। ভিটামিন ‘ডি’ এর অভাবে নানা রোগে আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে বাবা-মায়েরা প্রতিনিয়ত আমাদের কাছে আসছেন।
শিশুরা পঙ্গু ও অথর্ব প্রজন্মে রূপান্তরিত হবে : অধ্যাপক ডা. তাজুল
চিকিৎসকরা বলছেন, শিশুরা মাঠের অভাবে খেলাধুলা না করে মোবাইল ফোনে আসক্ত হচ্ছে। দীর্ঘদিন মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলে শিশুরা মানসিক ও শারীরিকভাবে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
তারা আরও বলছেন, খেলাধুলা করলে যেমন শিশুদের মানসিক প্রশান্তি মেলে, তেমনি শারীরিকভাবে মাংসপেশি বৃদ্ধি হয়, মানব দেহ ও মস্তিষ্কের বৃদ্ধি হয়। শিশুরা মাঠে খেলতে যেমন পারছে না, তেমনি ঘরের ভেতরেও তাদের খেলার পরিবেশ নেই। ফলে শিশুরা গৃহবন্দি হয়ে সারা দিন-রাত মোবাইল ফোন নিয়ে বুঁদ হয়ে থাকে।
এ বিষয়ে অধ্যাপক ডা. তাজুল ইসলাম বলেন, মোবাইল ব্যবহার করতে করতে শিশুরা তো পঙ্গু ও অথর্ব প্রজন্মে রূপান্তরিত হবে। তাদের তো মেধা ও শারীরিক বিকাশ কিছুই তৈরি হবে না। আমরা কী এভাবে শিশুদের নষ্ট করে ফেলছি না? এগুলো একটি জাতিকে ধীরে ধীরে ধ্বংস করে। সুনাগরিক হওয়ার পথ নষ্ট করে দেয়। এর তাৎক্ষণিক ফলাফল হিসেবে আমাদের কাছে এসে মা-বাবারা বলছে যে তাদের সন্তান লেখাপড়া করে না, সারাদিন মোবাইলে গেম খেলে। তারা কোথাও বেড়াতে যায় না, কারও সঙ্গে কথা বলে না, সারাক্ষণ হয়তো ফোন চাপে, নয়তো চুপ করে বসে থাকে। পরে তারা আস্তে আস্তে বখে যায়, অপরাধ জগতে চলে যায়। মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। তাদের আবেগীয় সমস্যার সৃষ্টি হয়, অল্পতে ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। নিজেকে সমাজ থেকে দূরে রাখে তারা।
মাঠে খেলাধুলার পরিবর্তে শিশুদের ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা শিশু হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সারাবন তহুরা বলেন, বাচ্চাদের খেলাধুলার জন্য তো মাঠ লাগবেই। একটা বাচ্চার সুস্থ মানসিক ও শারীরিক বিকাশের জন্য আউটডোর অ্যাক্টিভিটিস খুবই প্রয়োজন। কিন্তু খেলার মাঠ তো নেই। আগে দেখা যেত স্কুলে খেলার মাঠ থাকত কিন্তু এখন তাও নেই। আগে দেখা যেত অ্যাপার্টমেন্টের সামনে একটি উঠান থাকত, কিন্তু এখন সেগুলো আর দেখা যায় না। বাসাগুলোও হয়ে গেছে ছোট ছোট। বাচ্চাদের খেলাধুলার জন্য যে উন্মুক্ত জায়গা প্রয়োজন, তা আর নেই। ফলে বাচ্চারা ডিভাইস-নির্ভর হয়ে যাচ্ছে। তারা মোবাইলে, কম্পিউটারে বসে ভার্চুয়ালি মাঠে খেলাধুলা করছে।
তিনি বলেন, এতে করে তাদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং ব্রেইনে ও চোখে সমস্যা হচ্ছে। এছাড়া তারা অল্প বয়সে ক্ষিপ্ত মানসিকতার হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে, অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার তৈরি হচ্ছে। এখন বাচ্চারা কথা বলছে দেরিতে। তাদের বিকাশও কমে যাচ্ছে। ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটিস করতে না পারার কারণে এবং বাসায় বসে বসে মোবাইল চালানোর কারণে বাচ্চারা স্থূল হয়ে যাচ্ছে। স্থূলতা বৃদ্ধির কারণে বাচ্চাদের দেহে নানা রকম রোগ বাসা বাঁধছে।
গ্যাজেট নয়, মাঠ চায় শিশুরা : সেভ দ্য চিলড্রেন
বাচ্চাদের মোবাইল ফোনে অতিরিক্ত আসক্তির কারণে অভিভাবকদের শঙ্কার ভিত্তিতে সম্প্রতি একটি গবেষণা করে সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশ। তাদের গবেষণায় সারা দেশের বিভিন্ন বয়সের শিশুদের মতামত নেওয়া হয়। গবেষণায় দেখা যায়, এখনও অধিকাংশ শিশু ঘরে নয়, বাইরের উন্মুক্ত স্থানে খেলাধুলা করতে আগ্রহী। কিন্তু বাইরে পর্যাপ্ত উন্মুক্ত স্থান না থাকায় তারা ঘরে বসে গ্যাজেটে নানা গেম খেলে সময় পার করছে।
গবেষণায় অভিভাবকদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া উঠে আসে। অভিভাবকরা চান তাদের সন্তানরা যেন গ্যাজেট আসক্তি থেকে বের হয়ে আসে। তবে উন্মুক্ত স্থানে শিশুদের নিরাপত্তা ও পরিবেশ নিয়েও তারা শঙ্কিত। তাদের কথায় উঠে এসেছে, খেলার মাঠগুলো বেদখল হয়ে আছে। সেগুলো অসামাজিক কার্যকলাপ ও মাদকের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এ অবস্থায় শিশুদের মাঠে খেলতে পাঠানোর বিষয়ে তারা শঙ্কিত।
এ বিষয়ে সেভ দ্য চিলড্রেনের পরিচালক (চাইল্ড প্রটেকশন অ্যান্ড চাইল্ড রাইটস গভর্নেন্স) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য উন্মুক্ত স্থানে খেলাধুলার বিকল্প নেই। তাই শিশুকে তার বয়স অনুযায়ী খেলাধুলার মাঠ তৈরি করে দিতে হবে। খেলাধুলা করলে যে শুধু শিশুর শারীরিক বিকাশ ঘটে তা নয়, দ্বন্দ্ব নিরসন, টিম বিল্ডিং, সামাজিক যোগাযোগ বৃদ্ধি ও বন্ধুত্ব তৈরি করা খেলার মাঠে অন্যতম অনুষঙ্গ। শিশুকে যদি আমরা আগামী দিনের দক্ষ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে চাই তাহলে অবশ্যই তার জন্য খেলার মাঠের ব্যবস্থা করতে হবে।
তিনি বলেন, খেলার মাঠ থাকতে হবে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও এলাকায়। সিটি করপোরেশন যেহেতু একটি বাসযোগ্য এলাকার দায়িত্ব নেয়, প্রত্যাশা থাকবে প্রতিটি এলাকায় তারা শিশুদের জন্য খেলাধুলার যোগ্য জায়গার ব্যবস্থা করবে। গণবসতি ও অন্যান্য বাস্তবতা মাথায় রেখে নতুন মাঠ না করা গেলেও যে মাঠগুলো বেদখল ও অপরিচ্ছন্ন হয়ে আছে বা অন্য কাজে ব্যবহার হচ্ছে, প্রত্যাশা থাকবে যেহেতু জনসংখ্যার ৪৫ ভাগ শিশু সেহেতু সেই মাঠগুলোকে অন্তত যথাযথ নিরাপত্তা দিয়ে খেলার উপযোগী হিসেবে গড়ে তোলা হবে। সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলোর এটিই প্রধান দায়িত্ব।
অভিভাবকরা চান নিরাপদ মাঠ
অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা চান সারা দিনে অন্তত একটি ঘণ্টা তাদের সন্তানরা মাঠে খেলাধুলা করুক। তবে এক্ষেত্রে তারা একটি নিরাপদ ও সুন্দর মাঠের ব্যবস্থা চান কর্তৃপক্ষের কাছে।
রাজধানীর বনশ্রী ২২ নম্বর এলাকার বাসিন্দা আকলিমা আক্তারের চার বছরের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। এলাকায় কোনো খেলার মাঠ না থাকায় তার ছেলের মোবাইলে আসক্তি দিনদিন বাড়ছে। এ কারণে ছেলের মানসিক বিকাশ সঠিকভাবে হচ্ছে না বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, আশপাশে কোনো খেলার মাঠ নেই যে ছেলেটা বিকেলে গিয়ে একটু খেলাধুলা করবে। তাই ঘরবন্দি অবস্থায় সারা দিন মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকে। আমিও তাকে মোবাইল ফোন থেকে বিরত রাখতে পারি না, কারণ মোবাইল ফোনের বিকল্প কিছু তো তাকে দিতে পারি না। কিছু না কিছু করে তো শৈশব কাটাবে সে। তাই বাধ্য হয়ে ছেলের হাতে ফোন তুলে দেই। তাছাড়া রাস্তায় বা কোনো ফাঁকা জায়গায় বাচ্চাকে খেলতে নিয়ে যেতে সাহস পাই না। কারণ, বখাটে ছেলেরা সেখানে গাঁজাসহ নানা মাদক সেবন করে।
শাহজাদপুরের বাসিন্দা অলক দাস মাঠ না থাকায় পাঁচ বছর বয়সী মেয়েকে সপ্তাহে এক দিন করে বাসার পাশের একটি বাবু-ল্যান্ডে খেলতে নিয়ে যান। অলক দাস বলেন, ঢাকা শহরে বাচ্চাদের জন্য পর্যাপ্ত খেলার মাঠ নেই। যা আছে তার মধ্যে মেয়েদের জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। তাই চেষ্টা করি সপ্তাহে অন্তত একটি দিন বাচ্চাকে কোনো প্রতিষ্ঠানের ইনডোর ব্যবস্থায় খেলাধুলা করাতে। তবে এতে খেলার মাঠের উপকার পাওয়া যায় না।
এমএসি/এসএসএইচ