দীর্ঘদিন ধরে তদারকির অভাবে ময়লা-আবর্জনায় পরিপূর্ণ ড্রেন। পানি নিষ্কাশনের জন্য নেই প্রয়োজনীয় কোনো ব্যবস্থা। ফলে অল্প বৃষ্টি হলেই পানিতে কয়েক ঘণ্টার জন্য তলিয়ে যায় ধানমন্ডির জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (নায়েম) সামনের সড়ক। আর ভারী বর্ষণ হলে তো কথাই নেই।

বৃষ্টির পর সড়ক থেকে পানি সরে যেতে সময় লাগে পাঁচ-ছয় ঘণ্টা। সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় নায়েমের প্রশিক্ষক, প্রশিক্ষণার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ওই এলাকার সাধারণ মানুষজনের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। সেই সঙ্গে ড্রেনের ময়লা পানিতে মিশে দুর্ভোগ বাড়িয়ে দেয় কয়েকগুণ। 

বুধবার (২৫ মে) সরেজমিনে দেখা যায়, দুপুরে বৃষ্টির পর থেকে ঢাকা কলেজের  আবাসিক এলাকায় প্রবেশের গেটের সামনে থেকে নায়েম হয়ে পেছনের আবাসিক এলাকা পর্যন্ত পুরো সড়কে জমে আছে ময়লা পানি। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, নারী ও কর্মজীবীরা দাঁড়িয়ে আছেন শুকনো জায়গায়। দীর্ঘসময় অপেক্ষার পর অনেকেই ময়লা পানিতে হেঁটেই বাড়ি ফিরেছেন।

সড়ক তলিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেন রিকশাচালকরা। পানি পার করে দেওয়ার নামে ৩০ থেকে ৪০ টাকা ভাড়া নিতেও দেখা যায় রিকশাচালকদের।

আব্দুস সোবহান নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই এ সমস্যা। আগে বৃষ্টির পানি দ্রুত অপসারণের জন্য যে পয়েন্ট ছিল, সেটি যেকোনো কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে এমন অসহ্য দুর্ভোগ তৈরি হয়। বৃষ্টি হলেই দুই থেকে আড়াই ঘণ্টার জন্য আটকে যেতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, এ সমস্যা সমাধানে কেউ কোনো কাজ করতে পারল না। বর্ষাকালে বাচ্চাদের নিয়ে আমরা খুব কষ্ট করি। স্কুল-কলেজ ছুটির পর ময়লা পানি মাড়িয়ে বাসায় ফিরতে হয়।  এতে পায়ে ও শরীরে চুলকানিসহ বিভিন্ন রোগ দেখা যায়। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হওয়া দরকার।

দীপা বালা নামে আরেকজন বলেন, পুরো রাস্তা হেঁটে আসতে পারলেও এ সামান্য রাস্তাটুকু পার হয়ে বাসা পর্যন্ত পৌঁছাতে বাধ্য হয়ে রিকশা নিতে হয়। তাছাড়া পানি যতক্ষণ জমা থাকে, ততক্ষণ অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হয়। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত এখানকার মানুষ শান্তি পাবে না।

সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমিতে প্রশিক্ষণ নিতে আসা বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারের কর্মকর্তাদের। কোর্স চলাকালীন বৃষ্টি হলে বাইরে বের হওয়া বা একাডেমিতে প্রবেশের জন্য ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাদের।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন, এ সমস্যা একদিন-দুদিনের নয়। অনেকদিন ধরেই ভুগতে হচ্ছে। সিটি করপোরেশন বা সংশ্লিষ্ট কেউ দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করছে না। সারাদেশের শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য এ একাডেমি হলো প্রশিক্ষণের জায়গা। এর সামনে যদি এ অবস্থা হয় তবে সেখানে প্রশিক্ষণ নিতে আসা শিক্ষকরা কী শিখবেন? এ ভোগান্তির অবসান হওয়া দরকার।  

পানি নিষ্কাশনের স্থায়ী কোনো পদ্ধতি না থাকায় জলাবদ্ধতা কাটানো সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমির (নায়েম) মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল করিম। তিনি বলেন, সমস্যাটি আমলে নিয়ে বিভিন্ন সময় আমরা সমাধানের জন্য চেষ্টা করেছি। নায়েমের জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ হচ্ছে, আমাদের পাশেই বিজিবি সদরদপ্তরের সীমানা ঘেঁষে যে সুয়ারেজের লাইন গিয়েছে, তা এখন বন্ধ রয়েছে। ফলে এখানকার পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না।

নায়েম মহাপরিচালক বলেন, সমস্যার সমাধান করতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের কাছে চিঠি দিয়েছি।  বিজিবিকে সঙ্গে নিয়ে সমন্বয় করে করপোরেশন একটি প্রকল্পের মাধ্যমে এটি সমাধানের ব্যবস্থা করবে বলে আমাদের জানানো হয়েছে।

আরএইচটি/আরএইচ