ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক

২০৯ কিলোমিটার ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার উদ্যোগ নিয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। এই প্রকল্পে বড় অংকের ঋণ দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। মহাসড়কের প্রতি কিলোমিটার চার লেনে উন্নীত করতে খরচ হবে ৮০ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।

বাংলাদেশ সরকার মনে করছে, মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত হলে এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্ক, বিমসটেক করিডোর, সার্ক করিডোরসহ আঞ্চলিক সড়ক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে শিল্প ও বাণিজ্যে গতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে। একইসঙ্গে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন আরও বেগবান হবে।

প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ৯১৮ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। এটি বাস্তবায়নে এডিবি ঋণ দেবে ১৩ হাজার ২৪৪ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। বাকি তিন হাজার ৬৭৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকা সরকারি তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর ২০২৬ সালের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর।

মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ‘সাসেক ঢাকা-সিলেট করিডোর সড়ক উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। চলতি (২০২০-২১) অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দবিহীন অননুমোদিত প্রকল্প তালিকায় এটি অন্তর্ভুক্ত নেই। তবে প্রকল্পটির পিডিপিপি পরিকল্পনামন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে গত ২০১৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারিতে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) পাঠানো হয়। ইআরডিতে পাঠানোর প্রেক্ষিতে এ প্রকল্পে বিশাল বিনিয়োগ করতে সম্মত হয়েছে এডিবি।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মামুন আল-রশিদ বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশের সড়ক পরিবহন নেটওয়ার্ক শক্তিশালী হবে। বিশেষ করে এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্ক, বিমসটেক করিডোর, সার্ক করিডোরসহ আঞ্চলিক সড়ক নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত হবে। এর মাধ্যমে শিল্প ও বাণিজ্যে গতিশীলতা আসবে এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধিত হবে।

একনেক সভায় অনুমোদনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকা-সিলেটে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের পর এ মহাসড়ক থেকে টোল আদায় করতে হবে। টোল আদায়ের মাধ্যমে শুধু সরকারের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে নয়, টোলের অর্থ সড়ক মেরামতে ব্যয় করা হবে। প্রত্যেকটি নতুন হাইওয়ের পাশে বিশ্রামের জায়গা রাখতে হবে। হালকা বিশ্রাম, চা, কফির পাশাপাশি ওয়াশরুম রাখতে হবে। আর নারীদের জন্য চেঞ্জিং রুম ও বসার জায়গার ব্যবস্থা থাকতে হবে।

প্রকল্পের উদ্দেশ্য, ২০২৬ সালের মধ্যে ২০৯ দশমিক ৩২ কিলোমিটার ঢাকা (কাঁচপুর)-সিলেট মহাসড়ক (এন-২) চার লেনে উন্নীত করা, মূল সড়কের উভয়পার্শ্বে ধীরগতির যান চলাচলের জন্য পৃথক সার্ভিস লেন নির্মাণ করা এবং ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে বাঁক সরলীকরণসহ অধিকমাত্রার প্রয়োজনীয় ইউলুপ/ইন্টারসেকশন নির্মাণ করে দ্রুত ও নিরবচ্ছিন্ন যান চলাচল নিশ্চিত করা।

প্রকল্প বাস্তবায়ন অঞ্চলগুলো হচ্ছে- নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও, রূপগঞ্জ ও আড়াইহাজার, নরসিংদী সদর, শিবপুর, রায়পুর, বেলাব, ভৈরব, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, সরাইল, সিলেট সদর, বালাগঞ্জ, হবিগঞ্জ সদর, মাধবপুর, চুনারুঘাট, বাহুবল, নবীগঞ্জ ও মৌলভীবাজার সদর।

প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে- মাটির কাজ ২৪৫ দশমিক ৪২ লাখ ঘনমিটার, ফ্লেক্সিবল পেভমেন্ট নির্মাণ ৭২ দশমিক ৭৩ লাখ ঘনমিটার, সার্ভিস লেনে কংক্রিট পেভমেন্ট ২ দশমিক ৯২ লাখ ঘনমিটার, ৩০৫টি কালভার্ট নির্মাণ, ৬৬টি সেতু নির্মাণ, সাতটি ফ্লাইওভার/ওভারপাস ও ছয়টি রেল ওভারব্রিজ নির্মাণ, ২৬টি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ, সাইন, সিগন্যাল, রোড মার্কিং, ডিভাইডার, মিডিয়ান, গার্ডরেল, নালা ইত্যাদি ২০৭ দশমিক ৬৩ কিলোমিটার, নির্মাণ সাইট পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ তদারকি ও মান নিয়ন্ত্রণ এবং ইঞ্জিনিয়ারিং সুবিধা ২০৭ দশমিক ৬৩ কিলোমিটার, উন্নত সড়ক স্থিতিস্থাপকতা ও স্থায়িত্বের জন্য পাইলট পরীক্ষা ২০৭ দশমিক ৬৩ কিলোমিটার, সড়ক নির্মাণ কাজ তদারকির লক্ষ্যে পরামর্শক সেবা তিন হাজার ৯৭৭ জনমাস।

সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার অধ্যায় ৬ এর অনুচ্ছেদ (৬.৩)-এ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের লক্ষ্যমাত্রায় বলা হয়েছে, ৩০০ কিলোমিটার চার লেন সড়ক নির্মাণ, ৩৪০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ, ৫০০ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়ন/পুনর্বাসন, সাত হাজার মিটার ফ্লাইওভার/ওভারপাস নির্মাণ, ১৪ হাজার ৮০০ মিটার সেতু/কালভার্ট নির্মাণ ও ৬ হাজার ৮০০ মিটার সেতু/কালভার্ট পুনর্নির্মাণ করতে হবে। প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় ২০৯ দশমিক ৩২ কিলোমিটার সড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার উল্লিখিত লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

এসআর/আরএইচ/ওএফ