একসঙ্গে চাকরি-সংসার সামলানো চ্যালেঞ্জিং
সমাজে একজন নারীকে একইসঙ্গে অনেক ভূমিকা পালন করতে হয়। স্ত্রী, মা কিংবা কর্মজীবী হিসেবে ঘর সামলান তারা। মায়ের দায়িত্ব পালন অন্যতম কঠিন কাজ। আর কর্মজীবী হলে তো ঘরের পাশাপাশি সামলাতে হয় অতিরিক্ত দায়িত্ব। সব ছাপিয়ে কর্মজীবী মা এগিয়ে চলেন অদম্য গতিতে।
একজন কর্মজীবী মা উম্মে ফাতেমা নূর উর্মি। কাজ করছেন বাংলাদেশ রেলওয়েতে। রোববার (৮ মে) আন্তর্জাতিক মা দিবস। দিবসটি সমানে রেখে তার কর্মময় জীবন, সংসার ও ব্যস্ততার খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে জেনেছেন ঢাকা পোস্টের নিজস্ব প্রতিবেদক হাসনাত নাঈম।
বিজ্ঞাপন
ঢাকা পোস্ট : আপনার বেড়ে ওঠা কোথায়? এখন কোথায় থাকছেন?
উম্মে ফাতেমা নূর উর্মি : আমার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায়, জন্ম ঢাকায়। বাবা বাংলাদেশ রেলওয়েতে কর্মরত ছিলেন। সেই হিসাবে শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনিতেই আমার বেড়ে ওঠা। বর্তমানে আমি রাজধানীর ধানমন্ডির শংকরে শ্বশুরবাড়িতে থাকি।
ঢাকা পোস্ট : পড়াশোনার অধ্যায় সম্পর্কে জানতে চাই।
উম্মে ফাতেমা নূর উর্মি : মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পাস করে এইচএসসি শেষ করি তেজগাঁও কলেজ থেকে। সেখান থেকেই স্নাতক শেষ করেছি।
ঢাকা পোস্ট : বর্তমানে কোথায় কাজ করছেন?
উম্মে ফাতেমা নূর উর্মি : এখন আমি বাংলাদেশ রেলওয়েতে বুকিং সহকারী হিসেবে কমলাপুর রেলস্টেশনে কর্মরত আছি।
ঢাকা পোস্ট : জীবনে কী হতে চেয়েছিলেন? এ পেশায় এলেন কীভাবে?
উম্মে ফাতেমা নূর উর্মি : বাবা যেহেতু সরকারি চাকরিজীবী ছিলেন, সেই হিসেবে ছোট থেকে আমার স্বপ্ন ছিল সরকারি চাকরিজীবী হব। বাংলাদেশ রেলওয়েতে যোগদানের ক্ষেত্রে বাবার কাছ থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছি।
ঢাকা পোস্ট : পেশায় কি বিয়ের আগে নাকি পরে যুক্ত হয়েছেন?
উম্মে ফাতেমা নূর উর্মি : বাংলাদেশ রেলওয়েতে আমি বিয়ের আগেই যুক্ত হয়েছি।
ঢাকা পোস্ট : বিয়ের পর চাকরির বিষয়ে শ্বশুরবাড়ি থেকে কোনো আপত্তি ছিল?
উম্মে ফাতেমা নূর উর্মি : না, চাকরির বিষয়ে আমার শশুরবাড়ি থেকে কোনো আপত্তি জানায়নি। তারা বরাবরই আমাকে সাপোর্ট করেছেন। সে দিক থেকে খুব আরামেই চাকরি করতে পারছি। আমার শ্বশুর-শ্বাশুড়ি সবসময় বলেছেন, তুমি লেখাপড়া করেছ। তোমার যদি ইচ্ছা হয়, তুমি চাকরি কর। আমাদের কোনো অসুবিধা নেই।
ঢাকা পোস্ট : পরিবারে কে কে আছেন ? তাদের সম্পর্কে কিছু বলুন।
উম্মে ফাতেমা নূর উর্মি : স্বামী, দুই সন্তান, শ্বশুর-শাশুড়ি নিয়ে আমার পরিবার। স্বামী ব্যবসা করেন। স্বামী আমাকে সর্বোচ্চ সাপোর্ট করেন বলেই সুন্দরভাবে চাকরিটা চালিয়ে যেতে পারছি। বড় মেয়ে নূর-ই জান্নাত, বয়স ৬ বছর, কেজিতে পড়ে । ছোট মেয়ের নাম জোহানা নূর, বয়স ৬ মাস। মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষে আজই প্রথম কাজে যুক্ত হয়েছি।
ঢাকা পোস্ট : ছোট মেয়েকে রেখে আজই কাজে এলেন। প্রথম দিন কেমন লাগছে?
উম্মে ফাতেমা নূর উর্মি : বড় মেয়েকে সঙ্গেই নিয়ে এসেছি। আর ছোট মেয়েকে ক্ষণে ক্ষণে মিস করছি। তবে, সহকর্মীদের সঙ্গে পাশে বসে অনেকদিন পর কাজ করছি, এটাও উপভোগ করছি।
ঢাকা পোস্ট : কাজের পাশাপাশি সন্তানদের কীভাবে সামলান?
উম্মে ফাতেমা নূর উর্মি : আমাদের বুকিং সহকারীর চাকরি খুবই কষ্টের। বেশিরভাগ সময় সকাল ৬টায় আমাকে কাউন্টারে উপস্থিত থাকতে হয়। শিফট ডিউটির কারণে অনেক সময় আমার বাসায় যেতে রাত ১২টাও বেজে যায়। তারপরও আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজন ও স্বামী সর্বোচ্চ সাপোর্ট দেন। আমি বাসায় থাকলে আমিই সন্তানদের দেখি। যখন কাজে থাকি, তখন শ্বশুর-শাশুড়ি ও আমার স্বামী সন্তানদের দেখাশোনা করেন। এভাবে পালাক্রমে সন্তানদের সামলাতে হয়।
ঢাকা পোস্ট : সাপ্তাহিক ছুটির দিনে কী করেন?
উম্মে ফাতেমা নূর উর্মি : বুকিং সহকারী চাকরিতে সাপ্তাহিক ছুটি নেই। তবে, রোস্টার ভিত্তিতে আমাদের এক-দুদিন ছুটি দেওয়া হয়। আমরা বছরে ৩০ দিনের একটা ছুটি পাই।
ঢাকা পোস্ট : চাকরিজীবী মায়েদের উদ্দেশে আপনার কী বার্তা থাকবে?
উম্মে ফাতেমা নূর উর্মি : যারা চাকরিজীবী মা, তাদের অন্যরকম একটা প্রতিভা থাকতে হয়। সংসার ও চাকরিজীবন দুটিই ব্যতিক্রম। দুটি বিষয়কে এক করে চালানো খুবই চ্যালেঞ্জিং। আমি সবার জন্যই বলতে চাই, যারা চাকরিজীবী মা আছেন, তারা যেন সুন্দরভাবে সংসারটা গুছিয়ে, বাচ্চাদের দেখেশুনে তারপর চাকরির জায়গাটা যেন উন্নত করেন।
ঢাকা পোস্ট : আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
উম্মে ফাতেমা নূর উর্মি : ঢাকা পোস্টের জন্য শুভকামনা।
এমএইচএন/আরএইচ