ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার কারণে শাস্তি পেয়েছেন র‍্যাবের আলোচিত ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারওয়ার আলম। তাকে তিরস্কার সূচক লঘুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তিনি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে কর্মরত।
 
তাকে তিরস্কার সূচক লঘুদণ্ড দিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে সম্প্রতি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। 

২০২১ সালের ৭ মার্চ প্রশাসনের ৩৩৭ জন সিনিয়র সহকারী সচিবকে উপ-সচিব পদে পদোন্নতি দেয় সরকার। কিন্তু পদোন্নতিবঞ্চিত হন ২৭তম বিসিএসের প্রশাসন ক্যাডারের আলোচিত এ কর্মকর্তা। 

বিসিএস ২৭তম ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডার হিসেবে ২০০৮ সালের নভেম্বরে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন সারোয়ার আলম। ২০১৪ সালের ১ জুন সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে পদোন্নতি পান তিনি। সে অনুযায়ী এ পদে প্রায় সাত বছরসহ মোট ১২ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রশাসন ক্যাডার হিসেবে কর্মরত থাকলেও সেসময় পদোন্নতিবঞ্চিত হন সারওয়ার আলম। 

পরদিন ৮ মার্চ বিসিএস ২৭তম ব্যাচের এই কর্মকর্তা ফেসবুকে লিখেছেন, ‘চাকুরী জীবনে যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী অন্যায়, অনিয়মের বিরুদ্ধে লড়েছেন তাদের বেশিরভাগই চাকুরী জীবনে পদে পদে বঞ্চিত ও নিগৃহীত হয়েছেন এবং এ দেশে অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়াটাই অন্যায়।’

স্ট্যাটাসটি দেওয়ার পর সারওয়ারকে বিচারের আওতায় আনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ২০২১ সালের ৩০ জুন এ নিয়ে বিভাগীয় মামলা হয় এবং তার কাছে কৈফিয়ত তলব করা হয়। সারওয়ার আত্মপক্ষ সমর্থনে কোনো লিখিত বক্তব্য দেননি। 

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব সারওয়ার আলম একজন সরকারি কর্মচারী হয়ে সরকার ও কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এ ধরনের ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করার মাধ্যমে অকর্মকর্তাসুলভ আচরণ করেছেন এবং এতে জনপ্রশাসনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হওয়ায় ‘সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮’ এর ৩ (খ) বিধি অনুযায়ী ‘অসদাচরণ’ এর অভিযোগে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করে গত বছরের ৩০ জুন অভিযোগনামা ও অভিযোগ বিবরণী পাঠিয়ে কৈফিয়ত তলব করা হয়।

এতে বলা হয়, সারওয়ার আলম আত্মপক্ষ সমর্থনে কোনো লিখিত বক্তব্য দাখিল করেননি। অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। তদন্ত কর্মকর্তা তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করলে, তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায় সারওয়ার আলম ফেসবুকে মন্তব্য করার বিষয়টি স্বীকার করেছেন এবং তার বিরুদ্ধে আনা ‘অসদাচরণ’ এর অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।

তাই ‘সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮’ এর ৩(খ) বিধিতে বর্ণিত ‘অসদাচরণ’ এর অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিধিমালার ৪(২)(ক) বিধি অনুযায়ী তাকে ‘তিরস্কার’ সূচক লঘুদণ্ড দেয়া হয়েছে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।

পদোন্নতি না পাওয়ার কারণ জানতে চাইলে গত বছর সরাসরি কিছু বলেননি সারোয়ার আলম। তবে সে সময় তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেছিলেন, পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার পর অনেকেই আমাকে ফোন দিয়ে এ বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। আমার পদোন্নতি হয়নি বলে অনেক সরকারি কর্মকর্তা, এমনকি পদোন্নতি পাওয়া অনেকেই বিশ্বাস করতে পারছেন না বলে আমাকে জানিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে তারা অবাক হয়েছেন। তবে এটাই বাস্তবতা।

তিনি আরও বলেছিলেন, আমি সবসময় জনগণের জন্য কাজ করেছি। যেসব জায়গায় জনগণ প্রতারিত হচ্ছিল, সেগুলো ধরে ধরে কাজ করে মানুষের মনে স্থান করতে পেরেছি। সততা, কর্মদক্ষতা কোনোদিক দিয়েই পিছিয়ে ছিলাম না। আমার প্রমোশন হয়নি, এটা কেউই বিশ্বাস করতে পারছেন না।

গত বছর প্রশাসনে উপসচিব পদে বড় পদোন্নতি দেয় সরকার। পদোন্নতির ক্ষেত্রে মূল বিবেচ্য ছিল বিসিএসের ২৭তম ব্যাচ। এ ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের ২৪০ জনকে (ইকোনমিক ক্যাডার বিলুপ্ত হওয়ায় প্রশাসন ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত হওয়া কর্মকর্তাসহ) পদোন্নতি দেওয়া হয়। কিন্তু তিন শতাধিক সফল অভিযানের ট্যাগ লাগানো র‍্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারোয়ার আলমের পদোন্নতি মেলেনি। মেধা কোটায় চাকরি পাওয়া ২৭তম ব‍্যাচের মেধা তালিকায় সামনের দিকে তার সিরিয়াল থাকলেও তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়নি।

এসএইচআর/জেডএস