বাড্ডা থেকে বাবা-মার সঙ্গে শিশু পার্কে এসেছে চার বছর বয়সী সিয়াম। কিন্তু এসে দেখল শিশু পার্ক বন্ধ। বিষয়টি জানতেন না সিয়ামের বাবা সেলিম হোসেন। অবশেষে হতাশ হয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বাসায় ফিরে যান তিনি।

বুধবার (৪ মে) বেলা ১২টার দিকে এমন চিত্র দেখা গেছে শাহবাগে অবস্থিত শিশু পার্কের সামনে। শুধু সেলিম হোসেন নন, পার্ক বন্ধ দেখে এমন অনেককেই হতাশ হয়ে সন্তানদের নিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে দেখা গেছে।

একটা সময় শিশুদের বিনোদনের প্রধান কেন্দ্র ছিল এই শিশু পার্ক। ঈদসহ যেকোনো উৎসবে এখানে শিশুদের চাপ থাকত সাধারণ সময়ের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। আজ দেখা গেল, একের পর এক মানুষ আসছেন এবং ফিরে যাচ্ছেন। পার্কটি বন্ধের কোনো নোটিশ আশপাশে কোথাও দেখা যায়নি।

উত্তর বাড্ডার বেরাইদ এলাকা থেকে ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে পার্কে এসেছিলেন শেখ জাহাঙ্গীর। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, পার্কটি যে বন্ধ, তা আমি জানতামই না। জানলে কি আর ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে এখানে আসি? বাচ্চাদের বলেছিলাম ট্রেনে চড়াবো। পার্ক বন্ধ দেখে ওদের মন খারাপ হয়ে গেছে।

ক্ষোভ প্রকাশ করে উত্তরখান থেকে আসা জাহিদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বৃষ্টির পর সকালের আকাশটা অনেক পরিষ্কার ছিল। ভাবলাম এই সুযোগে ছেলেকে নিয়ে একটু শিশু পার্ক থেকে ঘুরে আসি। শহুরে জীবনে ওদের জন্য তো আর বিনোদনের জায়গাই নেই। কিন্তু এখানে এসে দেখি পার্কের কোনো অস্তিত্বই নেই। শুনলাম তিন বছর ধরে নাকি পার্ক বন্ধ!

দর্শনার্থীরা বলছেন, বিষয়টি বড় করে জানালে সবার জন্য সুবিধা হত। ভোগান্তিটা পোহাতে হতো না।

গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) পরিচ্ছন্নতাকর্মী বাবলা ঢাকা পোস্টকে বলেন, তিন বছর ধরে পার্ক বন্ধ। গতকালও অনেক মানুষ এসে ফিরে গেছে। আজও লোকজন আসছে আর যাচ্ছে। পার্কটি কবে খুলবে সে বিষয়ে আমি জানিনা।

শিশু পার্কটি কবে খুলবে- এ বিষয়ে জানতে আজ দুপুর ৩টার দিকে ডিএসসিসির একাধিক কর্মকর্তার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

জানা গেছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ (তৃতীয় পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় এর উন্নয়নকাজ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় ডিএসসিসি। ২০১৯ সালে পার্কটি বন্ধ করে কাজ শুরু হয়। তবে এখন প্রকল্প অনুমোদন সংক্রান্ত জটিলতায় উন্নয়নকাজও বন্ধ রয়েছে।

বরাদ্দ নিয়ে জটিলতার কারণে পার্কটির উন্নয়নকাজ আর তেমন একটা এগোয়নি। স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ (তৃতীয় পর্যায়) প্রকল্পে বরাদ্দ ২৬৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকা থেকে ৭৮ কোটি শিশু পার্কটির উন্নয়নকাজের জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনকে দেওয়া হয়েছিল।

শুরু থেকেই বরাদ্দের টাকার বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়, শিশুদের জন্য থাকা আগের রাইডগুলো ঝুঁকিপূর্ণ। এ কারণে নতুন করে আধুনিক রাইড বসাতে হবে। তাছাড়া, যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তা পর্যাপ্ত নয়।

এমন জটিলতায় পার্কের উন্নয়নকাজ বন্ধ থাকে দীর্ঘদিন। অবস্থার কোনো পরিবর্তন না দেখে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনকে বলা হয়, তারা যেন পার্কটির জন্য নতুন প্রকল্প নেয় এবং কাজ করে।

প্রসঙ্গত, শিশু পার্কটি রাজধানীর শাহবাগে ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং সরকারিভাবে নির্মিত দেশের প্রথম এই পার্কটি ১৯৮৩ সালে শিশুদের প্রধান বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে যাত্রা শুরু করে।

এমএইচএন/এমএইচএস