আমাদের নিরাপত্তায় মাঠে তারা
সারা দেশে আজ এক যোগে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয়েছে ঈদুল ফিতর। সকাল থেকে রাজধানীর ১৪৬৮টি স্থানে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। হাজারো মানুষ জামাতে অংশগ্রহণ করে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন।
পরিবার-পরিজন নিয়ে মানুষ ঈদ আনন্দ উপভোগ করছে। নগরবাসীর এ ঈদ আনন্দকে নিরাপদ রাখতে গত কয়েক দিন ধরে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপির) সদস্যরা। ডিএমপির পাশাপাশি র্যাব সদস্যরাও ঈদকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে কাজ করে যাচ্ছেন রাজধানীতে।
বিজ্ঞাপন
নগরবাসী যেন নিরাপদে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিজ গ্রামে ঈদ উদযাপন করতে পারেন সে জন্য সচেষ্ট রয়েছেন তারা। কিন্তু নগরবাসীর ঈদ আনন্দের জন্য দায়িত্ব পালন করলেও পুলিশ সদস্যদের ঈদ কাটছে রাস্তায়।
কেউ কেউ টহল দিচ্ছেন বিভিন্ন আবাসিক ও বাণিজ্য এলাকায় আবার কেউ দায়িত্ব পালন করছেন ঈদগা ও বিভিন্ন চেকপোস্টে। রাজধানীর অন্য সব মানুষের মতো পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করার সৌভাগ্য হয়নি তাদের। পালাবদল করে ঈদের জামাতে অংশগ্রহণ করে আবারও নেমে পড়েছেন নগরীর নিরাপত্তার দায়িত্বে।
তবে এতে তাদের মনে কোনো আক্ষেপ নেই। নগরবাসীর ঈদ আনন্দই সব থেকে বড় তাদের কাছে। এক্ষেত্রে ব্যক্তিগত জীবনে আনন্দ তাদের কাছে বড় বিষয় নয়। নগরবাসীর ঈদ আনন্দের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পেরে প্রশান্তির হাসি তাদের মুখ।
মঙ্গলবার (৩ মে) দুপুরে রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে এসব কথা জানা যায়।
কনস্টেবল মো.আফসার উদ্দিন ডিএমপির বাড্ডা থানায় কর্মরত। সকাল ৮টায় ঈদের নামাজ পড়ে বের হয়েছেন রাস্তায় পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য। গত দুই বছর ঈদে বাড়ি যেতে পারেননি তিনি।
রাজধানীর গুদারাঘাট এলাকায় দায়িত্ব পালনের সময় তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত কয়েক দিন ধরে ঈদের ডিউটিতে চাপ যাচ্ছে। অধিকাংশ মানুষ ঢাকা ছেড়েছে। তাই ফাঁকা ঢাকাকে নিরাপত্তা দেওয়া আরও কঠিন। গতকাল রাত পর্যন্ত ডিউটি করেছি। পরে আজ সকালে ঈদের নামাজ পড়ে পাঞ্জাবি খুলে পোশাক পরে আবার ডিউটিতে এসেছি।
ঈদে বাড়ি যেতে না পেরে মন খারাপ হয়নি? প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গত দুই বছর ধরে ঈদে যেতে পারেনি। এবারও বৌ-বাচ্চা অনেক বলেছে বাড়ি যেতে, কিন্তু আমরা বাড়ি গেলে মানুষ ঈদ করবে কীভাবে? মানুষ যেন নিরাপদ-ভাবে উৎসব পালন করতে পারে সেটাই তো আমাদের নিশ্চিত করতে হয়। নগরবাসীর ঈদ আনন্দই আমাদের ঈদ।
মো.আফসার উদ্দিনের পাশে দাঁড়িয়ে দায়িত্ব পালন করছিলেন তারই আরেক সহকর্মী কনস্টেবল মো.শফিককুল ইসলাম। তিনি বলেন, বাড়ি যাওয়ার কথা মনেই করি না, মাথায় আনি না। মনে করলে আরও কষ্ট হয়। আমাদের দায়িত্বই সব থেকে বড়। তবে বৌ-বাচ্চা ঈদে যাওয়ার জন্য ফোন দিয়েছিল, তখন তাদের না বলতে কিছু কষ্ট হয়েছিল।
তিনি বলেন, ঈদের দিন সেমাই খাওয়া, নামাজ পড়া, নতুন কাপড় পড়ে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আমাদেরও ইচ্ছা করে। এ ভেবে নিজেকে সান্ত্বনা দিই আমরা দায়িত্ব পালন না করলে মানুষ ঈদ করবে কীভাবে? মানুষ সুন্দরভাবে ঈদ আনন্দ উদযাপন করতে পারলে তখন আর এই কষ্ট আর মনে থাকে না। তখন এই ভেবে শান্তি পাই যে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেছি বলেই মানুষ আনন্দে উৎসব করেছে।
গুলশান থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ঈদে তো বাড়ি যেতে অনেকেই ছুটি চাই, তবে সবার ছুটি তো মঞ্জুর হয় না। এই ঈদে যারা বাড়ি যাবে তারা কোরবানির ঈদে দায়িত্ব পালন করবে। আবার এই ঈদে যারা দায়িত্ব পালন করেছে তারা কোরবানির ঈদে ছুটি কাটাবে। তবে করোনার কারণে গত দুই বছর কেউই ঠিকভাবে ঈদ উদযাপন করতে পারেনি, তাই এবারের ঈদ অন্যরকম। আর এবার যেন মানুষ মন খুলে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে পারে সেই জন্য আমরা সচেষ্ট আছি।
ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো.ফারুক হোসেন বলেন,
ঈদকে কেন্দ্র করে আমাদের চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে ঢাকা শহরের রাত-দিন ৫০০টি মোবাইল টিম কাজ করছে। আর রাতে ২ হাজার ৫০০ এর বেশি পুলিশ সদস্য ঢাকার নিরাপত্তায় কাজ করছে। বিশেষ করে বাসাবাড়িতে ছিনতাই ডাকাতি এড়ানোর জন্য এই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
এমএসি/এসকেডি