চাঁদ না ওঠায় মিলছে টিকিট, স্বস্তির যাত্রা
দেশের আকাশে রোববার (১ মে) শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যায়নি। ফলে মঙ্গলবার (৩ মে) সারা দেশে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। এই খবরে বাড়ি যাওয়ার স্বপ্ন বাস্তব হচ্ছে আতিউরের। পেয়েছেন ট্রেনের টিকিট, নাড়ির টানে যাচ্ছেন বাড়ি। স্বপ্নপূরণ হচ্ছে আকলিমারও। প্রথমে সোনার হরিণ নামক ঈদযাত্রার ট্রেনের টিকিট না পেলেও আজ সকালে সহজেই পেয়েছেন। ঈদ উৎসবে যোগ হয়েছে নতুন আনন্দ।
সোমবার (২ মে) সকালে রাজধানীর কমলাপুর স্টেশনে ঘুরে দেখা যায়, ঈদের আগের দিনের যাত্রায় নেই যাত্রীদের তেমন কোনো ভিড়। প্ল্যাটফর্মগুলো এক অনেকটাই ফাঁকা। দু’একটি ট্রেন বিলম্ব হলেও বেশিরভাগই ছাড়ছে সময়মতো। ভিড় না থাকায় প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে স্বস্তিতে যাচ্ছেন বাড়ি।
বিজ্ঞাপন
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গত ২৭ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ের ঈদযাত্রা। ওইদিন থেকেই কমলাপুর স্টেশনে ঘরমুখো মানুষের ভিড় লেগেছিল রোববার পর্যন্ত। চাঁদ দেখা না যাওয়ায় সোমবারের ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি হয় রোববার রাতে। তাই সুযোগ পেয়ে আজও বাড়ি যাচ্ছেন অনেকে।
যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আজ যারা ঢাকা ছাড়ছেন তাদের বেশিরভাগই ট্রেনের টিকিট না পাওয়ায় বাড়ি যাওয়া অনিশ্চিত ছিল। তারা এখন বিশেষ টিকিট পেয়ে বাড়ি যাচ্ছেন। আবার অনেকে বিশেষ কাজে ঢাকা থাকার কথা ছিল, কাজ শেষ হওয়ায় টিকিট পেয়ে তারাও বাড়ি যাচ্ছেন।
ঈদ উদযাপন করতে গ্রামের বাড়ি দিনাজপুর যাচ্ছেন গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা আতিউর রহমান। কমলাপুর স্টেশনে প্ল্যাটফর্মে কথা হয় তার সঙ্গে। আতিউর জানান, ঈদে সড়ক পথে অনেক যানজট থাকে। তাই টেনের অগ্রিম টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। কিন্তু টিকিট পাইনি। বাড়ি যাওয়া অনিশ্চিত ছিল। কাল যখন শুনলাম চাঁদ দেখা যায়নি, মঙ্গলবার ঈদ উদযাপিত হবে, রাত ৯টার দিকে স্টেশনে আসি। টিকিট পেতে প্রায় ১২টা বেজে গিয়েছিল। তারপরও খুবই আনন্দ লাগছে যে ঈদে গ্রামের বাড়ি যেতে পারব, ওখানে ছেলেমেয়ে নাতি-নাতনিরা আছে, তাদের সঙ্গে উদযাপন করতে পারব।
ঈদে বাড়ি যাওয়ার সুযোগ হওয়ায় খুশি আকলিমা নামের আরেক যাত্রী। তিনি জানান, জামালপুর যাব, আগে টিকিট পাইনি। ঈদে গ্রামে যাওয়া অনিশ্চিত ছিল। আজ খবরে জানতে পারলাম স্পেশাল ট্রেন আছে টিকিট দেওয়া হচ্ছে। সকালে লাইনে দাঁড়িয়েছি আধা ঘণ্টার মধ্যেই টিকিট পেয়ে গেছি। বাড়ি যাব বাবা-মার সঙ্গে ঈদ করব।
ঈদে বাড়ি যাচ্ছে এজন্য খুবই খুশি রংপুর এক্সপ্রেসের যাত্রী আক্তারুজ্জামান। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, এবার গ্রামে যেতে পারব না এমনটাই ধরে নিয়েছিলাম। কিন্তু রোববার চাঁদও দেখা যায়নি। যে কারণে সোমবার থেকে ছুটি পেয়েছি। সকালে স্টেশনে এসে টিকিটও পেয়ে গেলাম। তাই বাড়ি যাচ্ছি, খুবই ভালো লাগছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে পরিবহন কর্মকর্তা আমিনুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, আজ স্টেশনে তেমন ভিড় নেই। যাত্রীদের চাপও কম। দু’একটি ছাড়া বেশিরভাগ ট্রেন সময়মতো গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছাড়ছে। সকাল সাড়ে নয়টা পর্যন্ত ১২টি ট্রেন কমলাপুর স্টেশন ছেড়ে গেছে। আজ একটি স্পেশালসহ ৬০টি ট্রেন ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে ছাড়বে।
তিনি জানান, আগামীকাল শোলাকিয়ায় ঈদের জামাত পড়ার জন্য দুটি শোলাকিয়া ঈদ স্পেশাল ছাড়া হবে। একটি ভৈরব থেকে কিশোরগঞ্জ সকাল ৬টায় ছেড়ে ৮টায় পৌঁছাবে, আরেকটি ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জে ভোর ৫টা ৪৫ মিনিটে ছেড়ে যাবে, পৌঁছাবে ৮টা ৩০ মিনিটে।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, রাজধানী ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে প্রতিদিন ৫৩ হাজার যাত্রী ট্রেন ভ্রমণের সুযোগ পাচ্ছেন। এর মধ্যে শুধুমাত্র আন্তঃনগর ট্রেনের আসনই প্রায় ২৭ হাজারের বেশি।
রোববার থেকে ঈদ শেষে ট্রেনের ফিরতি টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। ফিরতি টিকিটের জন্য গতকাল এবং আজও খুব বেশি লাইন দেখা যায়নি স্টেশন কাউন্টারে।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যে স্টেশন থেকে যাত্রা সেই স্টেশন থেকেই দেওয়া হবে ফিরতি টিকিট। যাত্রার সুবিধার্থে এবার ছয় জোড়া বিশেষ ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ।
এসআই/জেডএস