স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাড়িচালক আবদুল মালেক।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাড়িচালক আবদুল মালেক ও তার স্ত্রী নার্গিস বেগমের সোয়া তিন কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। যদিও বর্তমান মূল্যে ওই সম্পদের পরিমাণ আরও বেশি হবে। বিপুল পরমিাণ এ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে একাধিক মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

আবদুল মালেকের নামে ১ কোটি ৯৪ লাখ টাকার সম্পদের প্রমাণ পাওয়া গেছে। বাকি সম্পদ তার স্ত্রী নার্গিসের নামে রয়েছে। যদিও নার্গিসের নিজস্ব কোনো আয়ের উৎস মেলেনি দুদকের অনুসন্ধানে।

যে কারণের দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা সহকারী পরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলাম গাড়িচালক মালেক ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। খুব শিগগিরই তাদের বিরুদ্ধে পৃথক দুই মামলার অনুমোদন দেওয়া হতে পারে বলে দুদকের একটি ঊর্ধ্বতন সূত্র ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছে।

এ বিষয়ে দুদক পরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য ঢাকাপোস্টকে বলেন, মামলা অনুমোদন হলে জানতে পারবেন। এখনই এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য নেই।

অনুসন্ধান প্রতিবেদনের বিষয়ে বিভিন্ন সূত্র জানা গেছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাড়িচালক মালেক ও তার স্ত্রী নার্গিস বেগম ২০২০ সালের ২৩ নভেম্বর সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে মালেক ১ কোটি ৭ লাখ ৪৫ হাজার ৩৯২ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য প্রদান করেছেন। অন্যদিকে তার স্ত্রী নার্গিসের ঘোষিত সম্পদের পরিমাণ ছিল ২ কোটি ১২ লাখ ৩৫ হাজার ৪৩১ টাকা। অর্থাৎ দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে মালেকের চেয়ে তার স্ত্রীর সম্পদের পরিমাণ দ্বিগুণ দেখানো হয়েছে। যদিও নার্গিসের নিজস্ব কোনো আয় নেই।

অনুসন্ধান প্রতিবেদন সূত্রে আরও জানা যায়, দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা গাড়িচালক মালেকের সম্পদের তথ্য যাচাই-বাছাই শেষে মোট ২ কোটি ৯৯ হাজার ৪০ টাকার সম্পদের সন্ধান পান। যার বিপরীতে বৈধ আয় পাওয়া যায় মাত্র ৬০ লাখ ৯ হাজার ৩৪২ টাকা। দুদকের অনুসন্ধানে মালেকের বিরুদ্ধে ৯৩ লাখ ৫৩ হাজার ৬৪৮ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন ও ১ কোটি ৫০ লাখ ৩১ হাজার ৮১০ টাকা জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পেয়েছেন।

অন্যদিকে ড্রাইভার মালেকের স্ত্রী নার্গিস বেগমের অর্জিত সম্পদের পরিমাণ ২ কোটি ১২ লাখ ৩৫ হাজার ৪৩১ টাকা। ওই সম্পদের বিপরীতে বৈধ উৎস থেকে এসেছে ১ কোটি ১ লাখ ৪৩ হাজার ৩৮২ টাকা। অবশিষ্ট ১ কোটি ১০ লাখ ৯২ হাজার ৫০ টাকা জ্ঞাত আয়ের উৎস বহির্ভূত। অবৈধ সম্পদের মধ্যে রয়েছে তুরাগের একটি টিনশেড বাড়ি, গরুর খামার ও সাততলা বাড়ির কিছু অংশ। তাছাড়া নার্গিস বেগমের নিজস্ব আয়ের কোনো উৎস পায়নি দুদক। তাই দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা মালেক ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদক আইন ২০০৪ এর ২৭ (১) ও ২৬ (২) ধারায় পৃথক দুই মামলার সুপারিশ করেছেন বলে জানা গেছে।

দুদকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ বিষয়ে বলেন, গাড়িচালক মালেক এর আগে জিজ্ঞাসাবাদে অনুসন্ধান কর্মকর্তার কাছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডজনখানেক কর্মকর্তাদের নাম বলেছিলেন। তাদের বিষয়ে দুদক গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করেছে। আর সম্পদের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদে মালেক জানিয়েছেন মিডিয়ায় তার নামে বেশি বেশি সম্পদের কথা বলা হচ্ছে। প্রকৃত অর্থে তিনি এতো সম্পদের মালিক নন।

দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গত ১৮ জানুয়ারি কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের গেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় মালেককে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে আলোচিত গাড়িচালক আবদুল মালেকের চারটি বাড়ি ও তিনটি প্লটের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল।

অবৈধ অস্ত্র, জাল নোট ব্যবসা ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর তুরাগ এলাকা থেকে গাড়িচালক মালেককে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

এ সময় তার কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, পাঁচ রাউন্ড গুলি, দেড় লাখ বাংলাদেশি টাকার জাল নোট, একটি ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় র‌্যাব-১ এর পরিদর্শক (শহর ও যান) আলমগীর হোসেন বাদী হয়ে মামলা দুটি দায়ের করেন। এরপর তাকে ১৪ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।

আবদুল মালেক র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তারের পরের দিন দুদক জানায়, আগে থেকেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ‘সীমাহীন দুর্নীতি ও অনিয়ম’ সঙ্গে জড়িত অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছে দুদক।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিবহন পুলের গাড়িচালক ও তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী আবদুল মালেক অষ্টম শ্রেণি পাস। তিনি ১৯৮২ সালে প্রথম সাভার স্বাস্থ্য প্রকল্পের গাড়িচালক হিসেবে যোগ দেন। বছর চারেক পর অধিদপ্তরের পরিবহন পুলে যোগ দেন। গ্রেপ্তারের আগ পর্যন্ত তিনি প্রেষণে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিবহন পুলের গাড়িচালক ছিলেন। ভয় দেখিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে তিনি বিপুল বিত্ত-বৈভবের মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ ছিল।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যে ৪৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর অবৈধ সম্পদের খোঁজে মাঠে নেমেছে দুদক। তাদের মধ্যে গাড়িচালক আবদুল মালেকের নাম রয়েছে। মালেক বর্তমানে সাময়িক বরখাস্ত অবস্থায় আছেন।

আরএম/এনএফ