উৎসবের আমেজে শুরু হয়েছে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী আব্দুল জব্বারের বলীখেলার ১১৩তম আসর। এবার এ খেলা হচ্ছে লালদীঘির পাশে বালু দিয়ে বানানো মঞ্চে। রেফারির মূল দায়িত্ব পালন করছেন আবদুল মালেক। তিনি ৩২ বছর ধরে এ দায়িত্ব পালন করছেন।

সোমবার বিকেল তিনটায় খেলা ও মেলার উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর। উদ্বোধনকালে সিএমপি কমিশনার বলেন, বলীখেলা শুধু চট্টগ্রামের ঐতিহ্য নয়। এটি সারাদেশের ঐতিহ্য।

আবদুল জব্বারের স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা ও বৈশাখী মেলা কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিকেলে লালদিঘীর পাড়ের গোলচত্বরে সড়কে অস্থায়ী মঞ্চে বলীখেলা শুরু হয়েছে। এবারের খেলায় ৮০ জন বলী অংশ নিচ্ছেন। মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে পুরস্কার বিতরণ করবেন।

শুরুর আগেই বলীখেলার মঞ্চের চারপাশে নানা বয়সী মানুষ ভিড় করতে থাকেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের চাপ বাড়তে থাকে। রাঙ্গুনিয়া উপজেলা থেকে বলীখেলা দেখতে আসা সামছুদ্দিন নামের ৫০ বছরের এক বৃদ্ধ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি প্রতিবছরই খেলা দেখতে আসি। মাঝের দুইবছর খেলা না হওয়ায় দেখতে পারে নি। এবার খেলা হবে শুনে দুপুরের আগেই চলে এসেছি।

হাটহাজারী থেকে বলীখেলায় অংশ নিতে এসেছেন সত্তর বছর বয়সী মফিজ। সঙ্গে রয়েছে তার নাতি। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, ১২ বছর বয়স থেকে জব্বারের বলীখেলায় অংশ নিই। এবছর নাতিকে দেখাতে নিয়ে আসছি। আজ বলীখেলায় অংশ নেব। 

পতেঙ্গা থেকে লড়তে এসেছেন সলিম বলী। তিনি বলেন, ২০১০ সাল থেকে প্রতিবছর মেলায় অংশ নিই। এবারও খেলব। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্য নিয়েই খেলব।

এদিকে বলীখেলাকে কেন্দ্র করে রোববার শুরু হয়েছে বৈশাখী মেলা। করোনাভাইরাসের কারণে গেল দুই বছর মেলা ও খেলা অনুষ্ঠিত হয়নি। এবারও মেলার আয়োজন নিয়ে ছিল নানা জল্পনা। অবশেষে আজ আবার শুরু হলো চট্টগ্রামবাসীর প্রাণের এ খেলা ও মেলা। এবারের মেলা চলবে তিন দিন।

ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে যুব সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করতে চট্টগ্রাম শহরের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার ১৯০৯ সালে বলীখেলা অনুষ্ঠান প্রচলন করেন। ১৩১৬ বাংলা ১২ বৈশাখ (১৯০৯) সালে প্রথমবার এ খেলা অনুষ্ঠিত হয়। ১১০তম আসর বসে ২০১৯ সালে।

করোনাভাইরাসের ভয়াবহতায় ২০২০ ও ২০২১ সালে বলীখেলা ও মেলা স্থগিত করা হয়। বলীখেলাকে কেন্দ্র করে লালদিঘীর পাড়সহ আশপাশের এলাকায় বসে মেলা। এবার বলি খেলা ও মেলার ১১৩তম আসর অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

কেএম/আরএইচ