নির্বাচনে কারো পক্ষ নেবে না যুক্তরাষ্ট্র
বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্র কারো পক্ষ নেবে না বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস।
রোববার (২৪ এপ্রিল) রাজধানীর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজে (বিআইআইএসএস) ‘বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক : বর্ধিত সহযোগিতা ও অগ্রসর অংশীদারিত্ব’ শীর্ষক এক সেমিনারে অংশ নিয়ে এ অবস্থান তুলে ধরেন রাষ্ট্রদূত।
বিজ্ঞাপন
রাষ্ট্রদূত বলেন, আমি আনন্দিত যে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন; আগামী নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের স্বাগত জানানো হবে। আন্তর্জাতিকমানের নির্বাচন হওয়া মানে, এটা যেদিন ভোট প্রদান করা হলো শুধু সেদিনের বিষয় নয়। আপনারা জানেন এরইমধ্যে বাংলাদেশে নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে।
পিটার হাস বলেন, সত্যিকারের গণতান্ত্রিক নির্বাচনে জনগণের সুযোগ থাকা উচিত। সাংবাদিকরা যেন স্বাধীনভাবে তাদের অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করতে পারে, নাগরিক সমাজের সংগঠনগুলো তাদের বিস্তৃত কার্যক্রম চালাতে পারে। আমি স্পষ্ট করে বলছি, বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কারও পক্ষ নেবে না। আমাদের খুশির বিষয়টি খুব সাধারণ। বাংলাদেশের মানুষ ভোটের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পাবে, এটাই আমাদের চাওয়া।
এ সময় রাষ্ট্রদূত হাস বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে উদ্বৃতি করে বলেন, আইনমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার না করা হয়, সে বিষয়ে তারা দৃষ্টি রাখছেন।
নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের স্বাগত জানাবে ঢাকা
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের বাংলাদেশ স্বাগত জানাবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। মার্কিন রাষ্ট্রদূত হাসকে উদ্দেশ্য করে ড. মোমেন বলেন, নির্বাচন নিয়ে আপনারা প্রশ্ন তোলেন। আমাদের আগামী নির্বাচনে আপনাদের পুরো টিম নিয়ে আসেন। আমরা স্বাগত জানাই।
মোমেন বলেন, নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আমরা স্বাগত জানাই। যেকোনো দেশ চাইলেই এই নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে পারবে।
চলতি বছরের শুরুর দিকে বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেনের সাক্ষাতে গেলে তিনি জানান, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিদেশি পর্যবেক্ষকদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এরপর থেকে কয়েকবারই মোমেন আগামী নির্বাচনে বাংলাদেশে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে বলে জানান।
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পরিবর্তনের আভাস মার্কিন রাষ্ট্রদূতের
ঢাকা ও ওয়াশিংটনের সম্পর্ক নতুন দিকে মোড় নিচ্ছে বলে মনে করছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস। ৫০ বছরের কূটনৈতিক সম্পর্কে পরিবর্তনের এ আভাস হিসেবে রাষ্ট্রদূত বলছেন, বদলে গেছে বাংলাদেশ।
রাষ্ট্রদূত বলেন, এখন যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্ক নতুন দিকে মোড় নিচ্ছে। গত ৫০ বছরে আমরা আমাদের সংস্কৃতি, জনগণ ও আমাদের অর্থনীতিকে সম্পৃক্ত করে একসাথে একটি শক্তিশালী সম্পর্ক তৈরি করেছি। ভবিষ্যতের দিকে লক্ষ্য করলে আমাদের অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে, আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে পরিবর্তন আসবে। কারণটা সহজ, বদলে গেছে বাংলাদেশ।
পিটার হাস বলেন, বাংলাদেশ এখন ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের দ্রুততম বর্ধনশীল অর্থনীতিগুলোর একটি। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা উত্তীর্ণ হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন এবং মধ্যম আয়ের মর্যাদা অর্জনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। এই পরিবর্তন এক গতিশীল নতুন সম্পর্ক নির্দেশ করে। সহজ কথায়, বড় বড় অর্থনীতি ও আঞ্চলিক পর্যায়ে নেতৃত্বশীল দেশগুলোর সাথে যুক্তরাষ্ট্র কূটনীতি পরিচালনা করে ভিন্নভাবে।
দুদেশের সম্পর্ক আরও জোরদারে যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তুত বলে জানান রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেন, আমাদের অংশীদারত্ব জোরদার করতে এবং আমাদের সম্পর্কের বিশাল সম্ভাবনা বাস্তবায়নে যুক্তরাষ্ট্র সক্রিয় ভূমিকা নিতে প্রস্তুত। আমরা আপনাদের গতির সঙ্গে এগিয়ে যেতে প্রস্তুত। তাছাড়া আমাদের সম্পর্ককে বাংলাদেশ যত দ্রুত প্রসারিত ও গভীর করতে চাইবে, যুক্তরাষ্ট্রও তত দ্রুত এগিয়ে যেতে প্রস্তুত।
সম্পর্ক বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সংলাপও প্রসারিত হয় উল্লেখ করে পিটার হাস বলেন, আমাদের দুদেশের সরকার সম্প্রতি বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সংলাপ করেছে- অংশীদারত্ব সংলাপ, দ্বিপাক্ষিক নিরাপত্তা সংলাপ ও ওয়াশিংটনে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সংলাপ। আগামী সপ্তাহগুলোতে আমরা আরও দুটি সংলাপ আয়োজন করব। দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা সংলাপ ও উচ্চ-পর্যায়ের অর্থনৈতিক মত-বিনিময়।
তিনি বলেন, এ ধরনের সংলাপের মাধ্যমে আমাদের সম্পর্ক বিকশিত ও জোরদার করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে এবং আরও অনেক নতুন সুযোগ উন্মোচিত হবে। তবে আমাদের নিজ নিজ সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, শুধু কথায় আটকে না থেকে কীভাবে সেগুলোকে কাজে পরিণত করা সম্ভব।
অর্থনৈতিক সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে যুক্তরাষ্ট্র পদক্ষেপ গ্রহণে প্রস্তুত বলেও জানান রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেন, আগামী মাসে আমি যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের নির্বাহী কমিটির উদ্বোধনী সফরকে স্বাগত জানাব। আমি এই গ্রীষ্মে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস কর্তৃক যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অফ কমার্স থেকে এ পর্যন্ত সর্বপ্রথম পূর্ণকালীন অ্যাটাশেকে স্বাগত জানানোর ঘোষণা দিতে পেরে গর্বিত বোধ করছি। আমাদের দ্বি-পাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক বৃদ্ধিতে আমরা যে গুরুত্ব দিয়েছি তার অন্যতম প্রমাণ এই পদক্ষেপ।
পিটার বলেন, মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বড় অর্থনীতির দেশগুলোর সাথে সমান তালে প্রতিযোগিতা করবে। মেধাস্বত্ব অধিকার, সরবরাহ ব্যবস্থার সক্ষমতা, মানসম্পন্ন উচ্চশিক্ষার সুযোগ এবং স্বচ্ছ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবসা পরিবেশের মতো বিষয়গুলো আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। বাংলাদেশ যেভাবে ইন্টারনেট কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে সেটা বিদেশি বিনিয়োগ ও বিভিন্ন কোম্পানির বাংলাদেশে ব্যবসা করার আগ্রহকেও প্রভাবিত করবে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, এছাড়া আরও অনেক সুযোগ আছে যার সদ্ব্যবহার আমরা করতে পারি। উদাহরণস্বরূপ, নতুন প্রতিষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স করপোরেশনের (ডিএফসি) দক্ষিণ এশিয়াব্যাপী দূষণমুক্ত জ্বালানি, কৃষি, স্বাস্থ্যসেবা ও ব্যাংকিং বিভিন্ন খাতে ৪ বিলিয়ন ডলারের সক্রিয় অর্থায়ন রয়েছে।
এনআই/জেডএস