দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট দুই অভিযোগে দুদকে চিঠি দিলো বিএনপি
সরকারের সুনির্দিষ্ট দুটি দুর্নীতির বিষয়ে তথ্য-উপাত্তসহ দুদকে অভিযোগ দিয়েছে বিএনপি। দলের পক্ষে যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল অভিযোগ জমা দেন।।
সোমবার (১১ এপ্রিল) দুপুর দেড়টায় দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেনের কাছে এ অভিযোগ জমা দেওয়া হয়। এ সময় বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু উপস্থিত ছিলেন।
বিজ্ঞাপন
পরে দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন বিএনপি নেতারা। এ সময় মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল জানান, আমরা সুনির্দিষ্ট দুটি বিষয় নিয়ে এখানে এসেছি। অতি সম্প্রতি জাতি জানতে পেরেছে, আইনমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের কথোপকথন ফাঁস হয়েছে। এ কথোপকথন অত্যন্ত স্পর্শকাতর। সর্বোচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতি সংঘটিত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত। সেই বিষয়টি তদন্ত করতে আমরা বলেছি। আমরা বলেছি, এ বিষয়ে শক্তিশালী তদন্ত করুন, আমরা আপনাদের সহযোগিতা করব। বাংলাদেশের মানুষ আপনাদের প্রতি আশা নিয়ে তাকিয়ে আছে।
কথোপকথন সংক্রান্ত বিভিন্ন দলিল কমিশনের কাছে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, একটি পেনড্রাইভ এবং কিছু কাগজপত্র জমা দিয়েছি।
দ্বিতীয় অভিযোগ বিষয়ে সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ফরিদপুরের মোহতাশেম বাবরের গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিয়ে পরবর্তীতে কী হলো, কী কারণে থেমে গেছে বা সেই জায়গায় কী কাজ হচ্ছে— এসব নিয়ে মানুষ জানতে আগ্রহী। এ বিষয়ে পরিষ্কার ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য আমরা বলেছি।
এভাবে অভিযোগ নিয়ে আগে বিএনপি দুদকে আসেনি, হঠাৎ কেন এলো— জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের (দুদক) বলে গিয়েছি, এরপর থেকে আমরা নিয়মিত আসব, আপনাদের সাহায্য করব। দায়বদ্ধতা থেকে, আপনাদের যাতে কাজ হয়, সাধারণ মানুষের কাছেও আপনারা যাতে পরিষ্কার থাকেন।
দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, উনারা কয়েকজন (বিএনপি নেতা) এখানে একটি লিখিত অভিযোগ নিয়ে এসেছেন। যে কেউ আমাদের কাছে অভিযোগ করতে পারেন। এটা রেজিস্টারে রিসিভ করা হয়েছে। দুদক আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।
বিএনপির অভিযোগগুলোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুটি লিখিত অভিযোগ দিয়ে গেছেন, তাতে কী লেখা আছে তা খুলে দেখিনি।
জানা গেছে বিএনপির লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, ‘প্রধানমন্ত্রীর আইটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের অনুমোদন করা একটি প্রকল্পের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের একটি কথোপকথনের অডিও অনলাইনে ফাঁস হয়েছে। এ কথোপকথনের মাধ্যমে সরকার এবং রাষ্ট্রের ক্ষমতা অপব্যবহার করে বিচার বিভাগকে প্রভাবিত করা হয়েছে।’
তাদের এ কথোপকথন দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন- ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারা সংশ্লিষ্ট অপরাধ উল্লেখ করে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের আইনের আওতায় আনতে দুদকের কাছে দাবি জানানো হয়েছে।
এছাড়া খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ছোট ভাই খন্দকার মোহতাশেম বাবর দুই হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে অভিযোগ করে এর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে দেশবাসীর কাছে প্রকাশ করার দাবি জানিয়েছে বিএনপি।
অন্যদিকে দেশের ভেতরে ‘সীমাহীন দুর্নীতি’ চলছে অভিযোগ করে ‘দুর্নীতিবাজদের’ বিষয়ে তথ্য-উপাত্তসহ তালিকা প্রকাশ করতে দুদকের কাছে দাবি জানানো হয়েছে।
দেশ থেকে গত পাঁচ বছরে লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে অভিযোগ করে এর সঙ্গে সম্পৃক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তাও প্রকাশ করার দাবি জানিয়েছে বিএনপি।
এর আগে সোমবার বেলা ১১টায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে চিঠি দেওয়ার দলীয় সিদ্ধান্তের কথা জানান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সেই সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও আপনারা (গণমাধ্যম) এই সরকারের সীমাহীন দুর্নীতির খবর পত্র-পত্রিকা, টিভি চ্যানেল এবং নিউজপোর্টালে প্রকাশ ও প্রচার করছেন। এই সাহসিকতার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ দিতেই হয়। কিন্তু গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত এসব দুর্নীতির খবরের ওপর ভিত্তি করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কোনো অ্যাকশনে যায়— এমনটি আমাদের চোখে পড়ে না। বরং দুর্নীতির বিরুদ্ধে পেশাগত দায়িত্ব পালন করায় দুদকের একজন কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত এবং হেনস্তা করার ঘটনা ঘটেছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, তারপরও একটি নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি গণমাধ্যমে প্রকাশিত এবং প্রচারিত দুর্নীতির খবরগুলো যাচাই-বাছাই করে দুর্নীতি দমন কমিশনে জমা দেব। এতে কোনো লাভ হবে কি না জানি না। তবে দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে জনগণের কাছে আমাদের দায়বদ্ধতা থেকে আমরা এই কাজটা করতে চাই। আমাদের দলের যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপুসহ একটি প্রতিনিধি দল দুর্নীতির অভিযোগগুলো নিয়ে দুদকে যাবে।
এদিকে বিএনপির প্রতিনিধি দলের আসার খবরে দুদকের প্রধান কার্যালয় চত্বরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। পুলিশের দুটি ইউনিট দুদক কার্যালয়ে অবস্থান নিতে দেখা গেছে।
আরএম/এসএম/এসএসএইচ/জেএস