২০১২ সালের মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে অর্থপাচারসহ সম্পৃক্ত সব অপরাধের অনুসন্ধান ও তদন্তের একমাত্র দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা ছিল দুর্নীতি দমন কমিশন। পরে ২০১৫ সালে আইনটি সংশোধন করে ২৭টি অপরাধের মধ্যে কেবল ঘুষ ও দুর্নীতি থেকে উদ্ভূত মানিলন্ডারিং অপরাধ দুদকের আওতায় রাখা হয়। 

এর ফলে দেশি-বিদেশি মুদ্রাপাচার, জালিয়াতি ও প্রতারণা সংক্রান্ত অপরাধ থেকে উদ্ভূত মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত অন্য সব অপরাধ দুদকের এখািতয়ারের বাইরে চলে যায়।

চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের সব ধরনের অর্থপাচারের অপরাধ তদন্তের সুযোগ রেখে আইনের সংশোধন চেয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি দেয় দুদক। 

দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেনের সই করা ওই চিঠিকে গুরুত্ব দিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

দুদকের দাবি, অর্থপাচারের ৮০ শতাংশ পাচার হয় আমদানি-রপ্তানির আড়ালে। বিদ্যমান মানিলন্ডারিং আইনে আমদানি-রপ্তানির আড়ালে অর্থ পাচারের অভিযোগ তদন্ত করতে পারে না দুদক। অথচ মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত অভিযোগের বড় দায় নিতে হয় দুদককেই। এ কারণেই তদন্ত ক্ষমতা পুনরায় ফিরে পেতে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

সোমবার (৪ এপ্রিল) দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির সচিব মো. মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের এ সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, বিদ্যমান মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ২৭টি সম্পৃক্ত অপরাধের মধ্যে শুধু একটির (দুর্নীতি ও ঘুষ) অনুসন্ধান ও তদন্তের ক্ষমতা রয়েছে কমিশনের। বাকিগুলো করছে সরকারের ৬টি সংস্থা- সিআইডি, এনবিআর, বিএসইসি, পরিবেশ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কাস্টমস ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। অথচ ২০১২ সালের মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের শুরুতে সব সম্পৃক্ত অপরাধ থেকে উদ্ভূত মানিলন্ডারিং অনুসন্ধান ও তদন্তের একমাত্র দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা ছিল দুদক।

দুদক সচিব বলেন, সার্বিক পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে ফেব্রুয়ারি মাসে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। এতে ২০১৯ সালের মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা সংশোধনের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পাঠানো হয়েছে।

দুদক সূত্র জানায়, দুদকের ক্ষমতা না থাকায় পানামা পেপারস, প্যারাডাইস পেপারস, পেন্ডোরা পেপারস, মালয়েশিয়ার মাই সেকেন্ড হোম প্রকল্প, কানাডা, সংযুক্ত আরব আমিরাতে অর্থ পাচারের মতো অনুসন্ধান-তদন্ত করা যাচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির ২০২১ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর প্রায় ৭৩ হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে বিভিন্ন দেশে। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ অর্থই পাচার হয় আমদানি রপ্তানির আড়ালে। বিদ্যমান মানিলন্ডারিং আইনে আমদানি রপ্তানির আড়ালে অর্থ পাচারের অভিযোগ তদন্ত করতে পারে না দুদক। আর তাই তদন্ত ক্ষমতা পুনরায় ফিরে পেতেই দুদক আইন সংশোধনের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে।

এর আগে দুদকের কমিশন সভায় মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের এক পর্যবেক্ষণের ওপর ভিত্তি করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা ২০১৯ এর তফসিলে বর্ণিত অনুসন্ধান ও তদন্তের জন্য নির্ধারিত সংস্থার তালিকার ক্রমিক নম্বর ৩, ৫, ৬, ১৪, ১৮, ১৯ ও ২৫ যথাক্রমে দলিল দস্তাবেজ জালকরণ, প্রতারণা, জালিয়াতি, দেশি ও বিদেশি মুদ্রা পাচার, চোরাচালান সংক্রান্ত অপরাধ, কর সংক্রান্ত অপরাধ, পুঁজিবাজার সংক্রান্ত অপরাধ (ইনসাইডার ট্রেডিং অ্যান্ড মার্কেট ম্যানিপুলেশন) থেকে উদ্ভুত মানিলন্ডারিং তদন্তের এখতিয়ার অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পাশাপাশি দুদককেও দেওয়ার লক্ষ্যে বিধিমালা (তফসিলসহ) সংশোধনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।

আরএম/আরএইচ